জরুরি আর্থিক প্রয়োজনে অনেকের মাথায় দুটি বিকল্পই প্রথমে আসে—সোনার ঋণ (Gold Loan) অথবা পার্সোনাল লোন (Personal Loan)। দুই ক্ষেত্রেই অর্থ পাওয়া সম্ভব, কিন্তু শর্ত, ঝুঁকি এবং খরচের দিক থেকে এরা একে অপরের থেকে অনেকটাই আলাদা। নিচে বিস্তারিতভাবে তুলনা করা হলো কোন পরিস্থিতিতে কোনটি আপনার জন্য বেশি সুবিধাজনক হতে পারে।
সুদের হারে পার্থক্য:
সবচেয়ে আগে দেখা দরকার কোন ঋণটি সস্তা। সাধারণত, সোনার ঋণ তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়, কারণ এতে গয়না জামানত হিসেবে ব্যাংকের কাছে রাখা হয়। ব্যাংকের ঝুঁকি কম থাকায় সুদের হারও কমে যায়। অন্যদিকে, পার্সোনাল লোন কোনো জামানত ছাড়াই দেওয়া হয় এবং এটি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে গ্রাহকের CIBIL স্কোর, বেতন এবং চাকরির স্থিতির উপর, ফলে সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
ঋণ মঞ্জুরির গতি:
জরুরি অবস্থায় দ্রুত অর্থ পাওয়া জরুরি। এই দিক থেকে সোনার ঋণ অনেক দ্রুত প্রক্রিয়ায় মঞ্জুর হয়। কেবলমাত্র সোনা ও পরিচয়পত্র জমা দিয়ে যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই একই দিনে টাকা হাতে পাওয়া যায়। পার্সোনাল লোনেও সময় কম লাগে, তবে ব্যাংক বা NBFC প্রতিষ্ঠানকে ক্রেডিট
স্কোর যাচাই করতে হয় বলে কিছুটা দেরি হতে পারে।ঝুঁকির দিক:
সোনার ঋণে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো জামানত হিসেবে রাখা গয়না হারানোর সম্ভাবনা। যদি নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ না করা হয়, তাহলে ব্যাংক কোনো নোটিশ ছাড়াই সেই গয়না নিলামে তুলে দিতে পারে।
অন্যদিকে, পার্সোনাল লোনে গয়না হারানোর আশঙ্কা না থাকলেও, সময়মতো EMI না দিলে CIBIL স্কোর নষ্ট হয়ে যায় এবং ভবিষ্যতে নতুন ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
ঋণের মেয়াদ:
সোনার ঋণ সাধারণত স্বল্পমেয়াদি হয়—কয়েক মাস থেকে সর্বাধিক তিন বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। অপরদিকে, পার্সোনাল লোনের মেয়াদ দীর্ঘ হয়, সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত, যেখানে EMI তুলনামূলকভাবে কম হয়।
কোনটি নেবেন?
যদি আপনার প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ কম এবং আপনি তা তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে পারেন, তাহলে সোনার ঋণই উত্তম বিকল্প। কিন্তু যদি বড় অঙ্কের টাকা দরকার হয় এবং ধীরে ধীরে পরিশোধ করতে চান, তাহলে পার্সোনাল লোন বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:
যে কোনো ঋণ নেওয়ার আগে কেবল সুদের হার নয়, প্রসেসিং ফি, ইনসুরেন্স, প্রিপেমেন্ট চার্জ ইত্যাদি খরচ সম্পর্কেও জেনে নেওয়া উচিত। সোনার ঋণের ক্ষেত্রে গয়না কোথায় রাখা হবে এবং নিলামের আগে ব্যাংক আগাম নোটিশ দেবে কি না, তাও নিশ্চিত করা জরুরি। সমস্ত কাগজপত্র ভালোভাবে পড়ে তবেই স্বাক্ষর করা উচিত।
সোনার ঋণ ও পার্সোনাল লোন—দুইয়েরই সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। আপনার আর্থিক প্রয়োজন, পরিশোধের সক্ষমতা ও সময়ের হিসেব করে সঠিক বিকল্প বেছে নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।


