সোনার বিপরীতে ঋণ বনাম ব্যক্তিগত ঋণ! ভারতে কোনটি সস্তা?

২০২৫ সালে ভারতে আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য ঋণ গ্রহণ একটি সাধারণ পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে। তবে, যখন জরুরি অর্থের প্রয়োজন হয়, তখন অনেকেই দুটি জনপ্রিয় ঋণের…

Gold price rise India

২০২৫ সালে ভারতে আর্থিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য ঋণ গ্রহণ একটি সাধারণ পদক্ষেপ হয়ে উঠেছে। তবে, যখন জরুরি অর্থের প্রয়োজন হয়, তখন অনেকেই দুটি জনপ্রিয় ঋণের বিকল্পের মধ্যে দ্বিধায় পড়েন—সোনার বিপরীতে ঋণ (Gold Loan ) এবং ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan)। এই দুটি ঋণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে সুদের হার, জামানতের প্রয়োজনীয়তা, অনুমোদনের সময় এবং পরিশোধের নমনীয়তার দিক থেকে। এই প্রতিবেদনে আমরা ২০২৫ সালে ভারতে গোল্ড লোন এবং পার্সোনাল লোনের তুলনা করব এবং জানব কোনটি আপনার জন্য সস্তা এবং উপযুক্ত।

গোল্ড লোন কী?
গোল্ড লোন হল একটি সুরক্ষিত ঋণ, যেখানে ঋণগ্রহীতা তাঁর সোনার গয়না বা মুদ্রা জামানত হিসেবে রেখে ঋণ নেন। ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) নির্দেশ অনুযায়ী, গোল্ড লোনের লোন-টু-ভ্যালু (এলটিভি) অনুপাত সাধারণত সোনার বাজার মূল্যের ৭৫%-৮৫% পর্যন্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার সোনার বাজার মূল্য ৫ লক্ষ টাকা হয়, তবে আপনি ৩.৭৫ থেকে ৪.২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেতে পারেন। ২০২৫ সালে গোল্ড লোনের সুদের হার সাধারণত ৭.৭৫% থেকে ১৫% প্রতি বছর, যা ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানির (এনবিএফসি) উপর নির্ভর করে। গোল্ড লোনের প্রক্রিয়াকরণ দ্রুত এবং ন্যূনতম কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়, কারণ ক্রেডিট স্কোরের উপর নির্ভরতা কম থাকে।

   

পার্সোনাল লোন কী?
পার্সোনাল লোন হল একটি অসুরক্ষিত ঋণ, যেখানে কোনো জামানতের প্রয়োজন হয় না। এই ঋণের অনুমোদন নির্ভর করে ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর, আয়, চাকরির স্থিতিশীলতা এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষমতার উপর। ২০২৫ সালে পার্সোনাল লোনের সুদের হার সাধারণত ১০% থেকে ২৪% প্রতি বছর, যা গোল্ড লোনের তুলনায় বেশি। পার্সোনাল লোনের পরিমাণ ১০,০০০ টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, এবং পরিশোধের মেয়াদ ১২ মাস থেকে ৬০ মাস পর্যন্ত। তবে, এই ঋণের প্রক্রিয়াকরণে ২ থেকে ৭ দিন সময় লাগতে পারে, এবং প্রক্রিয়াকরণ ফি ১%-৩% হতে পারে।

গোল্ড লোন বনাম পার্সোনাল লোন: তুলনা
১. সুদের হার: গোল্ড লোনের সুদের হার সাধারণত কম (৭.৭৫%-১৫%) কারণ এটি জামানত দ্বারা সুরক্ষিত। পার্সোনাল লোনের সুদের হার বেশি (১০%-২৪%), বিশেষ করে কম ক্রেডিট স্কোর থাকলে। এপ্রিল ২০২৫-এ আরবিআই রেপো রেট ৬%-এ নামিয়েছে, যা পার্সোনাল লোনের সুদের হার কিছুটা কমাতে পারে, তবে গোল্ড লোন এখনও সস্তা।

২. জামানতের প্রয়োজনীয়তা: গোল্ড লোনে সোনার গয়না বা মুদ্রা জামানত হিসেবে দিতে হয়, যা ডিফল্টের ক্ষেত্রে বিক্রি হতে পারে। পার্সোনাল লোনে কোনো জামানতের প্রয়োজন নেই, তবে ডিফল্ট করলে ক্রেডিট স্কোর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আইনি পদক্ষেপের ঝুঁকি থাকে।

৩. অনুমোদনের সময়: গোল্ড লোন দ্রুত প্রক্রিয়া করা হয়, প্রায়ই একই দিনে ডিসবার্সমেন্ট হয়। পার্সোনাল লোনের জন্য বেশি কাগজপত্র এবং যাচাইয়ের প্রয়োজন, যা ২-৭ দিন সময় নেয়।

৪. পরিশোধের নমনীয়তা: গোল্ড লোনে নমনীয় পরিশোধের বিকল্প রয়েছে, যেমন মাসিক সুদ পরিশোধ বা মেয়াদ শেষে মূলধন পরিশোধ। পার্সোনাল লোনে নির্দিষ্ট মাসিক কিস্তি (ইএমআই) পরিশোধ করতে হয়।

৫. ঋণের পরিমাণ: গোল্ড লোনের পরিমাণ সোনার মূল্যের উপর নির্ভর করে, সাধারণত ২০,০০০ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা। পার্সোনাল লোন বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় (৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত), তবে এটি আয় এবং ক্রেডিট স্কোরের উপর নির্ভর করে।

Advertisements

৬. ঝুঁকি: গোল্ড লোনে ডিফল্ট করলে সোনা হারানোর ঝুঁকি থাকে, যা প্রায়শই পারিবারিক গয়নার সঙ্গে সংবেদনশীল মূল্য জড়িত। পার্সোনাল লোনে ক্রেডিট স্কোর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ভবিষ্যতে ঋণ গ্রহণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কোনটি সস্তা?
২০২৫ সালে গোল্ড লোন সাধারণত পার্সোনাল লোনের তুলনায় সস্তা, কারণ এর সুদের হার কম এবং প্রক্রিয়াকরণ ফি সাধারণত ১% বা তার কম। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র গোল্ড লোনের সুদের হার ৮.৩০% থেকে শুরু করে, যেখানে পার্সোনাল লোনের সুদের হার ১০.৫% থেকে শুরু হয়। তবে, পার্সোনাল লোন বেশি পরিমাণে এবং দীর্ঘ মেয়াদের জন্য উপযুক্ত।

কখন কোনটি বেছে নেবেন?
গোল্ড লোন বেছে নিন যদি:
আপনার জরুরি অর্থের প্রয়োজন এবং দ্রুত ডিসবার্সমেন্ট চান।
আপনার কাছে পর্যাপ্ত সোনা আছে এবং কম সুদের হারে ঋণ চান।
ক্রেডিট স্কোর কম বা আয়ের প্রমাণ সীমিত।
স্বল্প মেয়াদের (৩-৩৬ মাস) ঋণ প্রয়োজন।

পার্সোনাল লোন বেছে নিন যদি:
আপনি জামানত দিতে অনিচ্ছুক এবং সোনার গয়নার সঙ্গে সংবেদনশীল মূল্য জড়িত।
বেশি পরিমাণের ঋণ বা দীর্ঘ মেয়াদ (১-৫ বছর) প্রয়োজন।
আপনার ভালো ক্রেডিট স্কোর এবং স্থিতিশীল আয় রয়েছে।
ঋণের অর্থ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চান।

চ্যালেঞ্জ এবং বিবেচনা
গোল্ড লোনে সোনার মূল্যায়ন এবং বিশুদ্ধতা পরীক্ষার উপর ঋণের পরিমাণ নির্ভর করে, এবং সোনার বাজার মূল্যের ওঠানামা ঋণের এলটিভি অনুপাতকে প্রভাবিত করতে পারে। পার্সোনাল লোনে কঠোর যোগ্যতার মানদণ্ড এবং উচ্চ প্রক্রিয়াকরণ ফি একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। উভয় ঋণের ক্ষেত্রেই ঋণের শর্তাবলী এবং অতিরিক্ত ফি (যেমন প্রিপেমেন্ট পেনাল্টি) সাবধানে পর্যালোচনা করা উচিত।

২০২৫ সালে ভারতে গোল্ড লোন সাধারণত পার্সোনাল লোনের তুলনায় সস্তা, বিশেষ করে স্বল্প মেয়াদের এবং জরুরি আর্থিক প্রয়োজনের জন্য। এর কম সুদের হার, দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ এবং ন্যূনতম কাগজপত্রের প্রয়োজনীয়তা এটিকে আকর্ষণীয় করে। তবে, যদি আপনার বেশি পরিমাণের ঋণ বা দীর্ঘ পরিশোধের মেয়াদ প্রয়োজন, এবং আপনি জামানত দিতে অনিচ্ছুক, তবে পার্সোনাল লোন উপযুক্ত। আপনার আর্থিক প্রয়োজন, পরিশোধের ক্ষমতা এবং জামানত দেওয়ার ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিন। সঠিক তথ্যের জন্য ব্যাঙ্ক বা এনবিএফসি-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে শর্তাবলী পরীক্ষা করুন।