আজকাল যখন দ্রুত টাকা প্রয়োজন হয়, গোল্ড লোন এবং পার্সোনাল লোন দুটি জনপ্রিয় বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উভয়েই দ্রুত টাকা পাওয়ার সুবিধা দেয় এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে যেমন চিকিৎসা খরচ বা বাড়ির জরুরি মেরামতের জন্য কাজে লাগে। তবে কোনটি আপনার জন্য সঠিক হবে? চলুন, দুটো লোনের মধ্যে পার্থক্যগুলো জানিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করি।
লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গোল্ড লোনের সুদের হার সাধারণত কম, ৭% থেকে ১৫% এর মধ্যে হয়ে থাকে। অন্যদিকে, পার্সোনাল লোনের সুদের হার ১০% থেকে ২৪% পর্যন্ত হতে পারে, যা ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর এবং ঋণদাতার নীতির উপর নির্ভর করে। লোনের মেয়াদ, পরিমাণ এবং পরিশোধের শর্ত অনুসারে গোল্ড লোনের সুদের হার পরিবর্তিত হতে পারে। তাই, বিভিন্ন ঋণদাতার মধ্যে তুলনা করে সবচেয়ে ভালো অফারটি বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
গোল্ড লোন হলো একটি সিকিওরড লোন, যার জন্য আপনাকে গোল্ড (গহনা) জামানত হিসেবে দিতে হয়। যদি আপনি ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন, তাহলে ঋণদাতা আপনার গোল্ড নিলামে বিক্রি করে ঋণের টাকা উদ্ধার করতে পারে। অন্যদিকে, পার্সোনাল লোন হলো আনসিকিওরড লোন, যেখানে কোনো জামানতের প্রয়োজন পড়ে না। তবে, যদি ঋণ পরিশোধে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তা আপনার ক্রেডিট স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়ার জন্য কঠিন হয়ে উঠবে।
পার্সোনাল লোন, যেহেতু এটি একটি আনসিকিওরড লোন, তাই ঋণদাতা ঋণ গ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর, চাকরি এবং আয় স্থিতিশীলতা নিয়ে কঠোর যাচাই-বাছাই করে থাকে। ৭৫০ বা তার বেশি ক্রেডিট স্কোর, নিয়মিত চাকরি এবং স্থিতিশীল আয়ের প্রমাণ থাকা জরুরি। কিন্তু গোল্ড লোনের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণে কোনো কঠোর শর্ত নেই, কারণ এটি সিকিওরড লোন। এখানে মূলত আপনাকে জামানত হিসেবে গোল্ড রাখতে হয়। ফলে, যাদের ক্রেডিট স্কোর কম, তারা যদি গোল্ড থাকে তবে সহজেই গোল্ড লোন পেতে পারেন।
পার্সোনাল লোন সাধারণত ৫০,০০০ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রদান করা হয়, এবং কিছু ঋণদাতা আরও বেশি পরিমাণে ঋণ দেয়। ঋণদাতা ঋণ গ্রহীতার পরিশোধ ক্ষমতা এবং লোনের মেয়াদ দেখে ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করে। গোল্ড লোনের ক্ষেত্রে, ঋণের পরিমাণ মূলত জামানত হিসেবে দেওয়া গোল্ডের মূল্য এবং ঋণদাতার লোন-টু-ভ্যালু (LTV) রেশিওর ওপর নির্ভর করে, যা RBI-এর নিয়ম অনুযায়ী ৭৫% এর বেশি হতে পারে না।
গোল্ড লোন সাধারণত ১২ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে, যা স্বল্পমেয়াদী আর্থিক প্রয়োজনের জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে, পার্সোনাল লোনের মেয়াদ ৭-৮ বছর পর্যন্ত হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য উপযোগী। গোল্ড লোনের জন্য স্বল্পমেয়াদী সময়কাল সাধারণত কম সুদে ঋণ প্রদান করে, তবে EMI বেশি হতে পারে। পার্সোনাল লোনে দীর্ঘমেয়াদী সময়কাল থাকে, যার ফলে EMI কম থাকে।
গোল্ড লোনে কিছু পরিশোধের নমনীয়তা থাকে, যেখানে আপনি মাসিক EMI ছাড়া শুধুমাত্র সুদ পরিশোধ করতে পারেন অথবা মূলধন পরিশোধের সময় একসাথে দিতে পারেন। এই নমনীয়তা অনেক গ্রাহককেই সুরক্ষিত রাখে। পার্সোনাল লোন সাধারণত নির্দিষ্ট EMI-এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়, এবং কিছু ঋণদাতা শুধুমাত্র ব্যবহৃত পরিমাণের ওপর সুদ ধার্য করে overdraft সুবিধা দেয়।
গোল্ড লোনের জন্য ন্যূনতম ডকুমেন্টেশন প্রয়োজন হয় এবং কোনো ক্রেডিট চেক ছাড়াই লোন খুব দ্রুত (কিছু ঘণ্টার মধ্যে) দেয়া হয়। অন্যদিকে, পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে ঋণদাতা ক্রেডিট চেক এবং আয় যাচাই করার জন্য সাধারণত সাত দিন পর্যন্ত সময় নেয়। যদি জরুরি আর্থিক প্রয়োজন থাকে, তাহলে গোল্ড লোন হবে আরও দ্রুত এবং উপযুক্ত অপশন।
ঋণ গ্রহণের সময় ফি (Processing fee) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গোল্ড লোনের প্রসেসিং ফি সাধারণত কম, ০.৫% থেকে ২% এর মধ্যে। তবে, পার্সোনাল লোনের ফি তুলনামূলকভাবে বেশি, ১% থেকে ৩% হতে পারে। তাই, যদি আপনি ঋণ সম্পর্কিত খরচ কম রাখতে চান, তবে গোল্ড লোন হতে পারে একটি বাজেট-বান্ধব বিকল্প।
আপনার জন্য কোনটি সঠিক?
এখন, আপনার প্রয়োজন এবং আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিন। যদি আপনার ক্রেডিট স্কোর কম হয়, তবে এবং যদি আপনার কাছে গোল্ড থাকে, তবে গোল্ড লোন হবে একটি দ্রুত এবং সাশ্রয়ী বিকল্প। তবে, যদি আপনি বড় পরিমাণ ঋণ নিতে চান এবং দীর্ঘমেয়াদী খরচে সহনশীল হন, তাহলে পার্সোনাল লোন হতে পারে আপনার জন্য ভালো অপশন। সবশেষে, আপনার আর্থিক সক্ষমতা, প্রয়োজনীয় ঋণের পরিমাণ, এবং পরিশোধ ক্ষমতা বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।