Gold investment: বর্তমান সময়ে শেয়ারবাজারের ব্যাপক অস্থিরতা এবং স্থায়ী আয় (ফিক্সড ইনকাম) বিনিয়োগের প্রকৃত রিটার্ন মুদ্রাস্ফীতিকে হারাতে ব্যর্থ হওয়ায়, বিনিয়োগকারীদের নজর এখন হাইব্রিড মিউচুয়াল ফান্ডের দিকে। এই ধরনের ফান্ড একদিকে যেমন সুরক্ষা দেয় ঋণপত্র (ডেট) এবং পণ্যের (কমোডিটিস) মাধ্যমে, তেমনি অন্যদিকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রেখে থাকে লাভের সম্ভাবনা উন্মোচিত রাখে। অর্থাৎ, ঝুঁকি ও রিটার্নের মধ্যে একটি সুসমন্বয় গড়ে তোলে।
হাইব্রিড ফান্ডের শ্রেণিবিন্যাস:
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI) অনুযায়ী, হাইব্রিড মিউচুয়াল ফান্ডকে সাতটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে—
1. কনজারভেটিভ হাইব্রিড ফান্ড
2. অ্যাগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ড
3. ব্যালান্সড হাইব্রিড ফান্ড
4. ব্যালান্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড
5. মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড
6. আরবিট্রেজ ফান্ড
7. ইকুইটি সেভিংস ফান্ড
এই বিভাগগুলি মূলত ঝুঁকির মাত্রা, সম্পদ বন্টন এবং বিনিয়োগের উদ্দেশ্য অনুযায়ী তৈরি হয়েছে।
Sameer Mathur, Roinet Solutions-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “বিনিয়োগকারীরা সাধারণত তাদের ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা এবং সময়সীমা অনুযায়ী কনজারভেটিভ বা অ্যাগ্রেসিভ হাইব্রিড ফান্ড বেছে নেন। তবে সম্প্রতি মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড বিশেষভাবে নজর কাড়ছে, কারণ সোনার দাম বৃদ্ধির ফলে এই ফান্ড মন্দা বাজারে হেজ হিসেবে কাজ করছে।”
মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড: বৈচিত্র্য ও নিরাপত্তার মিশ্রণ:
মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ডে অন্তত ১০% করে ইকুইটি, ঋণপত্র এবং কমোডিটি (প্রধানত সোনা বা রূপা) এই তিনটি সম্পদে বিনিয়োগ করতে হয়। এই ধরণের বণ্টন ঝুঁকি কমায় এবং একইসঙ্গে লাভের সম্ভাবনাও বজায় রাখে।
Sameer Mathur আরও বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে সোনার দামের ভালো পারফরম্যান্স এই ফান্ডকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যাঁরা বৈচিত্র্য আনতে চান এবং মুদ্রাস্ফীতি থেকে সুরক্ষা চান, তাঁদের জন্য এটি যথাযথ।”
কর কাঠামো এবং নমনীয়তা:
হাইব্রিড ফান্ডে করের কাঠামো সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ইকুইটির পরিমাণের উপর। যদি কোনও হাইব্রিড ফান্ডে ইকুইটির অংশ ৬৫% বা তার বেশি হয়, তাহলে সেটি ইকুইটি ফান্ড হিসেবে করযোগ্য হয়। অন্যথায় এটি ডেট ফান্ডের নিয়মে করযোগ্য।
Sanket Prabhu, Director & Head of Wealth বলেন, “ব্যালান্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড সবথেকে নমনীয় হাইব্রিড ফান্ডের একটি। এই ফান্ডে ম্যানেজাররা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী ইকুইটি বণ্টনের পরিমাণ বাড়াতে বা কমাতে পারেন। বাজার সস্তা হলে ইকুইটি বাড়ানো হয়, আবার অতিমূল্যায়িত হলে কমানো হয়।”
এই ধরনের ফান্ড গুলি বাজারের উত্থান-পতনে বেশি প্রতিক্রিয়াশীল, তাই বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো সুযোগ তৈরি হয় দাম কম থাকা অবস্থায় প্রবেশের।
বিনিয়োগের আগে যাচাই-বাছাই জরুরি:
বিনিয়োগের আগে শুধু ফান্ডের ধরন বুঝলেই হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি ফান্ডের অতীত পারফরম্যান্স, বাজারে তার অবস্থান, ফান্ড ম্যানেজারের দক্ষতা এবং ঝুঁকি প্রোফাইল খতিয়ে দেখা উচিত।
Sanket Prabhu যোগ করেন, “ফান্ডের ট্র্যাক রেকর্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুধু রিটার্ন নয়, বিভিন্ন বাজার চক্রে (বুল এবং বেয়ার মার্কেট) ফান্ড কীভাবে পারফর্ম করেছে, সেটাও বিচার্য। সবশেষে, আপনার লক্ষ্য এবং ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতার সাথে মানানসই ফান্ড বেছে নিন।”
কার জন্য কোন হাইব্রিড ফান্ড?
- নতুন বিনিয়োগকারীরা যারা শেয়ারবাজারে সরাসরি ঝুঁকি নিতে চান না, তাঁরা কনজারভেটিভ হাইব্রিড ফান্ড বেছে নিতে পারেন।
মাঝারি ঝুঁকি গ্রহণকারী বিনিয়োগকারীদের জন্য অ্যাগ্রেসিভ হাইব্রিড বা ব্যালান্সড অ্যাডভান্টেজ ফান্ড হতে পারে ভালো বিকল্প।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী যাঁরা বিভিন্ন সম্পদের মধ্যে বৈচিত্র্য চান, তাঁদের জন্য মাল্টি অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ড হতে পারে উপযুক্ত।
বর্তমান আর্থিক পরিবেশে যেখানে সেভিংস অ্যাকাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিট প্রকৃত রিটার্ন দিচ্ছে না, সেখানে হাইব্রিড মিউচুয়াল ফান্ড এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে। ঝুঁকি ও নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে, দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে এই বিনিয়োগ পন্থা।
তবে বিনিয়োগ করার আগে নিজের প্রয়োজন, ঝুঁকি সহ্য করার ক্ষমতা এবং বাজার বোঝাপড়া অনুযায়ী সঠিক ফান্ড নির্বাচন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।