কলকাতায় সোমবার সোনার দাম দেখে চমকে গেলেন ক্রেতারা

"Will Gold Prices Drop to ₹75,000? The Middle Class Poised to Seize the Opportunity"

 

Advertisements

কলকাতায় সোমবার সোনার বাজারে দাম দেখে কার্যত চমকে গিয়েছেন ক্রেতারা। সোনার প্রতি গ্রাম এবং প্রতি ১০ গ্রাম— দুই ক্ষেত্রেই দাম বেড়ে গিয়েছে আগের দিনের তুলনায়। বছরের মাঝামাঝি সময়ে এমন দামের উল্লম্ফন স্বাভাবিকভাবে স্বর্ণপ্রেমীদের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যারা উৎসবের আগে বা বিয়ের মরশুমের জন্য সোনা কেনার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁদের বাজেটে এই পরিবর্তন বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে।

সোমবার সকালেই শহরের বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার বিক্রেতা ও জুয়েলারি দোকানে ভিড় জমে। ক্রেতারা মূলত দাম যাচাই করতে এবং বাজারের অবস্থা বুঝতে আসেন। দোকানদারদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়েছে দেশীয় বাজারেও। মার্কিন ডলার ও অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠাপড়ার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও শেয়ার বাজারের অনিশ্চয়তা এই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

কলকাতার বিখ্যাত বউবাজার, গড়িয়া, হাতিবাগান, কামারহাটির স্বর্ণদোকানগুলোতে সোমবার দেখা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ বেশি দামে সোনা কিনতেও রাজি হয়েছেন, কারণ তাঁদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কেনা ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু অনেকে আবার দাম কিছুটা কমার অপেক্ষায় রয়েছেন। এক ক্রেতা জানান, “দশ গ্রাম সোনার দাম এখন প্রায় আগের তুলনায় কয়েকশো টাকা বেশি। এই দামে কেনা মুশকিল।”

অন্যদিকে, দোকানদাররা বলছেন, এই উল্লম্ফন আকস্মিক নয়। বরং গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সোনার দামে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি হচ্ছিল। তবে সোমবারের হঠাৎ লাফটা অনেকের নজর কেড়েছে। শহরের বড় ব্র্যান্ডের দোকান থেকে শুরু করে ছোট গয়নার দোকান— সবাই একই সুরে বলছেন, দাম যতই বাড়ুক, বাঙালির উৎসব-আনন্দে সোনার চাহিদা কমে না। বিশেষ করে দুর্গাপুজোর আগে ও বিয়ের মরশুমে বিক্রি বাড়বেই।

বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় বাজারে সোনার চাহিদা বরাবরই স্থিতিশীল। তাই আন্তর্জাতিক দামের সামান্য ওঠানামাও এখানে দ্রুত প্রভাব ফেলে। তাছাড়া, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনা বেছে নিচ্ছেন। ফলে, দাম আরও বাড়তে পারে বলেই তাঁদের ধারণা।

Advertisements

কলকাতায় সোনা কেনার অন্যতম কেন্দ্র সোনাপট্টি এলাকা। সোমবার সকাল থেকে সেখানে ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের গুঞ্জন চলছিল— দাম কি আরও বাড়বে, নাকি কিছুটা কমবে? অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা বলছেন, যাঁদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন আছে, তাঁরা এখনই কিনে নিচ্ছেন। কিন্তু যাঁরা কেবল বিনিয়োগের জন্য সোনা কিনতে চান, তাঁরা কিছুটা সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে অনেক জুয়েলারি দোকান আবার “এক্সচেঞ্জ অফার” বা পুরনো সোনা বদলে নতুন গয়না কেনার সুযোগ দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। এতে কিছুটা হলেও ক্রেতাদের ব্যয় কমছে, যদিও নতুন গয়নার দাম তুলনামূলক বেশি।

সোমবারের এই দামবৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। একদিকে পেট্রোল-ডিজেল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে, অন্যদিকে সোনার বাজারেও এই বৃদ্ধি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য চাপ তৈরি করছে। বিশেষ করে বিয়ের মরশুমের আগে এই ধাক্কা অনেককে পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য করছে।

তবে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, স্বর্ণের দাম দীর্ঘমেয়াদে সাধারণত বাড়তির দিকেই যায়, তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিনিয়োগের জন্যও উপযুক্ত হতে পারে। আবার অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, ছোট ছোট পরিমাণে কিনে রাখা ভালো, যাতে হঠাৎ দামের তারতম্যে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে না হয়।

সব মিলিয়ে, সোমবার কলকাতার সোনার বাজারে যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে, তা হয়তো কিছুদিন স্থায়ী হবে। কারণ আন্তর্জাতিক অর্থনীতির অবস্থা এখনো অস্থির। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই দামের ওঠাপড়ার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। বাঙালির জীবনে সোনা শুধু গয়না নয়, আবেগ ও ঐতিহ্যের প্রতীক— তাই দাম যতই বাড়ুক, সোনার বাজারে মানুষের আগ্রহ কমবে বলে মনে হয় না।