ভারতের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র গোয়ায় (Goa) এখন থেকে প্রকাশ্যে বিয়ার বা অন্য কোনো মদের বোতল খোলা বা ভাঙা কঠিন ফাইন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবে। গত শুক্রবার গোয়া বিধানসভায় “গোয়া ট্যুরিস্ট প্লেসেস (প্রোটেকশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০২৫” পাশ হওয়ার পর থেকে এই নতুন নিয়ম প্রয়োগে এসেছে। এর ফলে এখন থেকে অননুমোদিত বিক্রেতাদের কাছ থেকে মদ কিনা, প্রকাশ্যে মদপান করা, বোতল ভাঙা, আবর্জনা ফেলা বা অন্য কোনো জনসাধারণের অসুবিধে সৃষ্টি করা কার্যকলাপের জন্য ৫,০০০ টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। এই কঠোর নিয়মের মাধ্যমে গোয়া সরকার পর্যটন ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং পরিবেশের সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে।
নতুন নিয়মের বিস্তারিত
নতুন আইন অনুসারে, প্রকাশ্যে মদ্যপান, উপকূলীয় এলাকায় কাঁচের বোতল ভাঙা, আবর্জনা ফেলা, অননুমোদিত জলক্রীড়া বা নৌকা চালানো, পর্যটকদের উপর বাধা সৃষ্টি করা বা জোরপূর্বক পণ্য বিক্রি করার মতো কার্যকলাপগুলো এখন “জনসাধারণের জন্য ক্ষতিকর” হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে। এই ধরনের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা জরিমানা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড আরোপ করা হবে। এছাড়া, পুনরাবৃত্ত অপরাধের ক্ষেত্রে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ২০২৩-এর ধারা ২২৩ অনুযায়ী ফৌজদারি অভিযোগও দায়ের হতে পারে। সরকার ঘোষণা করেছে যে প্রতি দুই বছরে এই জরিমানার পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি ও সমস্যার গভীরতা বিবেচনা করে ১০% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
পর্যটন ও পরিবেশের সংরক্ষণের লক্ষ্য
গত কয়েক বছরে গোয়ায় পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গোয়া পর্যটন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মোট ৫৪.৫৫ লাখ পর্যটক গোয়ায় গিয়েছেন, যার মধ্যে ৫১.৮৪ লাখ জন দেশি পর্যটক এবং ২.৭১ লাখ জন বিদেশি পর্যটক রয়েছেন। তবে এই বৃদ্ধি সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দূষণ, জনসাধারণের অসুবিধে এবং উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতি বৃদ্ধির সমস্যাও দেখা দিয়েছে। ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে পর্যটকদের দ্বারা বর্জ্য নিষ্কাশন, বিশেষ করে কাঁচের বোতল ভাঙা, উপকূলীয় এলাকায় ৩০% দূষণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই কারণেই সরকার এই নতুন নিয়ম চালু করেছে, যার মূল লক্ষ্য গোয়াকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ এবং আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে রাখা।
স্থানীয়দের ও পর্যটকদের মতামত
নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা এবং পর্যটকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিছু স্থানীয় ব্যক্তি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে এটি উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ রক্ষা করবে এবং পর্যটনের গুণমান বাড়াবে। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “পর্যটকদের অগোছালো আচরণ আমাদের জীবনযাত্রাকে কষ্ট দিচ্ছিল। এই নিয়ম আমাদের জন্য একটি আশ্বাসের বাতাস।”
তবে অনেক পর্যটক এই জরিমানার পরিমাণকে অতিরিক্ত মনে করছেন। একজন পর্যটক মন্তব্য করেন, “১ লাখ টাকা জরিমানা একটি বোতল ভাঙার জন্য? এটি বরং গোয়ার ভ্রমণের খরচের চেয়েও বেশি।” অন্যদিকে, কিছু পর্যটক এই নিয়মকে গ্রহণ করতে রাজি, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে এটি গোয়ার সৌন্দর্য রক্ষা করবে।
ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
এই নতুন আইনের কার্যকারিতা নির্ভর করবে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উপর। অনেকেই মনে করছেন যে কাগজের উপর থাকা এই নিয়মগুলো তখনই কার্যকর হবে, যখন পুলিশ এবং প্রশাসন সঠিকভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে। গত পাঁচ বছরে জনসাধারণের অসুবিধে সম্পর্কিত অভিযোগ ৪০% বেড়েছে, যা নতুন নিয়মের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করে।
গোয়া সরকারের উদ্দেশ্য হলো পর্যটনের সঙ্গে পরিবেশের সামঞ্জস্য রক্ষা করা। তবে এই পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা এবং পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথাও বিবেচনা করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এই নিয়মের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে সংশোধন করা হবে, যাতে গোয়া আবারও বিশ্বের সামনে উপস্থিত হয় একটি পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে।