তেলেঙ্গানায় মেষ পালন প্রকল্পে ১,০০০ কোটির জালিয়াতি, ইডি-র তল্লাশি অভিযান

তেলেঙ্গানার মেষ পালন উন্নয়ন প্রকল্পে (Sheep Rearing Development Scheme – SRDS) বিপুল আর্থিক দুর্নীতির জাল ফাঁস করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। এই প্রকল্পে এক হাজার কোটিরও…

ED Raids Uncover Rs 1,000 Crore 'Scam' In Telangana Sheep Rearing Scheme

তেলেঙ্গানার মেষ পালন উন্নয়ন প্রকল্পে (Sheep Rearing Development Scheme – SRDS) বিপুল আর্থিক দুর্নীতির জাল ফাঁস করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। এই প্রকল্পে এক হাজার কোটিরও বেশি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রশাসন, রাজনৈতিক মহল এবং পশুপালন দপ্তরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২ (PMLA)-এর আওতায়, ইডি ৩০ জুলাই হায়দরাবাদের আটটি স্থানে একযোগে অভিযান চালিয়েছে।

অভিযানে নজরে প্রাক্তন মন্ত্রীর ওএসডি:
অভিযান চালানো হয় প্রাক্তন পশুপালনমন্ত্রী থলাসানি শ্রীনিবাস যাদবের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (OSD) জি কল্যাণ কুমারের বাসভবনেও। কল্যাণ কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে, এবং তার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তের সময় প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ নথি, ডিজিটাল প্রমাণ এবং নগদ অর্থ উদ্ধার হয়েছে।

   

দুর্নীতির শিকড়: ভূয়ো উপভোক্তা, ভুয়ো বিল ও বেনামি হিসাব:
২০১৭ সালে ভারত রাষ্ট্র সমিতি (BRS) সরকারের সময় শুরু হয় এই প্রকল্প। লক্ষ্য ছিল গোলা ও কুরুমা গোষ্ঠীর মতো পশুপালন নির্ভর সম্প্রদায়কে আর্থিক সাহায্য করা। প্রতি ইউনিটে ২০টি ভেড়া এবং একটি রাম দেওয়া হত, ৭৫ শতাংশ ভর্তুকিতে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১.২৮ কোটি ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে, যার খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪,৯৮০.৩১ কোটি টাকা।

কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, প্রকল্পের আড়ালে চলেছে এক চূড়ান্ত প্রতারণার খেলা। ভূয়ো পরিবহণ রসিদ, জাল হিসাববই, মৃত বা অস্তিত্বহীন ব্যক্তিদের নামে মেষ বিতরণ — এর মাধ্যমেই সরকারি অর্থ লোপাট হয়েছে। এক ইডি আধিকারিক বলেন, “গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বিপুল সরকারি অর্থ ভূয়ো উপভোক্তা এবং জাল বিল দেখিয়ে হস্তগত করা হয়েছে।”

প্রাথমিক FIR এবং তদন্তের অগ্রগতি:
এই তদন্তের মূল ভিত্তি হল অ্যান্টি করাপশন ব্যুরো (ACB)-এর করা একাধিক এফআইআর, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দায়ের করা হয়। ACB-এর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২.১ কোটি টাকা। তবে ভারতের মহা হিসাব পরীক্ষক (CAG)-এর ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত করা অডিটে মাত্র সাতটি জেলায় ২৫৩.৯৩ কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে। এখন ইডি-র অনুমান, গোটা রাজ্যে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

Advertisements

ধৃত ও সন্দেহভাজনরা:
ইতিমধ্যেই এই মামলায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ACB। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন তেলেঙ্গানা লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির প্রাক্তন সিইও সাবাবত রামচন্দ্রন। তদন্তে আরও একাধিক প্রভাবশালী কর্মকর্তার নাম উঠে আসতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

ডিজিটাল প্রমাণ: মোবাইল ও সিম কার্ড:
তদন্ত চলাকালীন উদ্ধার হয়েছে ৩১টি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ২০টির বেশি সিম কার্ড। তদন্তকারী সংস্থার ধারণা, এই সমস্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস বেআইনি কর্মকাণ্ড সংগঠিত করতেই ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও আরও বহু ডিজিটাল নথিপত্রের মাধ্যমে বড়সড় লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ:
এই দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার পর, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি BRS সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। কংগ্রেস ও বিজেপির দাবি, এটি রাজ্যের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ কেলেঙ্কারি, এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। বর্তমানে ইডি ও ACB যৌথভাবে মামলাটি তদন্ত করছে।

এমন এক সময়ে এই দুর্নীতির পর্দাফাঁস হয়েছে, যখন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার হস্তক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে। তবে তেলেঙ্গানার SRDS প্রকল্পে এই আকারের দুর্নীতি নিঃসন্দেহে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্ন তোলে। তদন্ত কী পরিণতি পায়, তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে। তবে এখনই এটা বলা যায়, এই ঘটনা সরকারি প্রকল্পের কার্যকারিতা এবং হিসাবনিকাশের স্বচ্ছতার প্রয়োজনে এক গুরুতর সতর্কবার্তা।