আর্থিক জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিক অর্থের প্রয়োজন হলে ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) একটি জনপ্রিয় সমাধান। তবে, অনেকের কাছে সিবিল স্কোর (CIBIL Score) কম থাকা বা ক্রেডিট ইতিহাস না থাকায় ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সুসংবাদ হলো, ২০২৫ সালে ভারতে এখন সিবিল চেক ছাড়াই ১ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়া সম্ভব। ফিনটেক কোম্পানি এবং নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (NBFC)গুলি এমন ঋণ প্রদান করছে, যেখানে আপনার ক্রেডিট স্কোরের পরিবর্তে আয়, চাকরির স্থিতিশীলতা, এবং ব্যাঙ্ক লেনদেনের উপর জোর দেওয়া হয়। এই প্রতিবেদনে আমরা জানব, কীভাবে আপনি সিবিল চেক ছাড়াই তাৎক্ষণিক ১ লক্ষ টাকার ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন এবং এর সুবিধা ও শর্তগুলি কী।
Read Hindi: बिना सिबिल चेक के ₹1 लाख पर्सनल लोन – तुरंत आवेदन कैसे करें
সিবিল চেক ছাড়া ঋণ কীভাবে সম্ভব?
সিবিল স্কোর হলো একটি তিন অঙ্কের সংখ্যা (৩০০-৯০০), যা একজন ব্যক্তির ক্রেডিট যোগ্যতা নির্দেশ করে। সাধারণত ৭৫০-এর উপরে স্কোর ভালো বলে গণ্য হয়। তবে, যাদের ক্রেডিট ইতিহাস নেই বা স্কোর কম, তাদের জন্য ঋণ পাওয়া কঠিন। ফিনটেক প্ল্যাটফর্মগুলি এই সমস্যার সমাধান করেছে বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে। তারা নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করে:
• আয়ের প্রমাণ: নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত আয় ঋণদাতাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
• চাকরির স্থিতিশীলতা: স্থায়ী চাকরি বা ব্যবসায়ের দীর্ঘস্থায়িত্ব ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়ায়।
• ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট: গত ৩-৬ মাসের ব্যাঙ্ক লেনদেন আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ দেয়।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে সিবিল স্কোর ছাড়াও ঋণ দেওয়া সম্ভব হয়, তবে সুদের হার কিছুটা বেশি হতে পারে।
তাৎক্ষণিক আবেদনের ধাপগুলি
সিবিল চেক ছাড়া ১ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সহজ এবং ডিজিটাল। নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করুন:
• অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করুন: ফিনকভার, ক্রেডিটবি, ফিনেবল, বা মানিভিউ-এর মতো বিশ্বস্ত ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন।
• অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে যান: নির্বাচিত প্ল্যাটফর্মের ওয়েবসাইটে গিয়ে “পার্সোনাল লোন” বিভাগে ক্লিক করুন।
• ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করুন: নাম, জন্ম তারিখ, ফোন নম্বর, এবং চাকরির বিবরণ পূরণ করুন।
• প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করুন: আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, এবং আয়ের প্রমাণ (যেমন বেতন স্লিপ বা আইটিআর) আপলোড করতে হবে।
• আবেদন জমা দিন: সমস্ত তথ্য পূরণের পর আবেদন জমা দিন। ঋণদাতা আপনার বিকল্প যোগ্যতা যাচাই করবে।
• অনুমোদন ও বিতরণ: যাচাইয়ের পর, ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঋণের অর্থ আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
প্রয়োজনীয় নথি
এমনকি সিবিল চেক ছাড়া ঋণের জন্যও কিছু নথি প্রয়োজন। সাধারণত নিম্নলিখিত নথিগুলি জমা দিতে হয়:
• পরিচয় প্রমাণ: আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার আইডি, বা ড্রাইভিং লাইসেন্স।
• ঠিকানা প্রমাণ: ইউটিলিটি বিল, ভাড়ার চুক্তি, বা আধার কার্ড।
• আয়ের প্রমাণ: গত ৩ মাসের বেতন স্লিপ, ৬ মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, বা স্ব-নিযুক্তদের জন্য আইটিআর।
• চাকরির প্রমাণ: নিয়োগপত্র বা ব্যবসায়িক নথি।
সুবিধা ও সতর্কতা
সিবিল চেক ছাড়া ঋণের কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে:
• দ্রুত বিতরণ: ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অর্থ পাওয়া যায়।
• ন্যূনতম নথি: কাগজপত্রের ঝামেলা কম।
• কোনো জামানত নেই: এই ঋণগুলি সাধারণত আনসিকিউরড, অর্থাৎ কোনো সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয় না।
তবে, কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি:
• উচ্চ সুদের হার: সিবিল চেক না থাকায় ঋণদাতারা ঝুঁকি কমাতে বেশি সুদ নেন।
• শর্তাবলী পড়ুন: ঋণের চুক্তি ভালোভাবে পড়ে নিন, কারণ লুকানো ফি থাকতে পারে।
• ঋণদাতার বিশ্বাসযোগ্যতা: শুধুমাত্র আরবিআই-নিবন্ধিত ঋণদাতাদের থেকে ঋণ নিন।
জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম
কিছু বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম যারা সিবিল চেক ছাড়া ঋণ প্রদান করে:
• ফিনকভার: সহজ আবেদন প্রক্রিয়া এবং দ্রুত বিতরণ।
• ক্রেডিটবি: ১০ মিনিটে অনুমোদন এবং ন্যূনতম নথি।
• ফিনেবল: কম সিবিল স্কোরের জন্য উপযুক্ত।
• মানিভিউ: ৬৫০ সিবিল স্কোরেও ঋণ প্রদান করে।
ইএমআই গণনা
১ লক্ষ টাকার ঋণের ইএমআই নির্ভর করে সুদের হার এবং মেয়াদের উপর। উদাহরণস্বরূপ, ১৬% বার্ষিক সুদে ৩ বছরের মেয়াদে ইএমআই প্রায় ৩,৫০০ টাকা হবে। মানিভিউ বা ফিনকভারের ইএমআই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে সঠিক হিসাব করতে পারেন।
সিবিল চেক ছাড়া ১ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত ঋণ জরুরি আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে একটি কার্যকর সমাধান। তবে, উচ্চ সুদের হার এবং ঋণদাতার শর্তাবলী সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করে এবং নথি প্রস্তুত রেখে আপনি দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত ঋণ পেতে পারেন।