ট্যাক্স বেসে নারী প্রতিনিধিত্বের উত্থান, বলছে SBI

ভারতের জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর) ব্যবস্থায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এসবিআই-এর ইকোনমিক রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের…

old-vs-new-tax-regime-which-is-more-beneficial-key-conditions

ভারতের জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর) ব্যবস্থায় নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এসবিআই-এর ইকোনমিক রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের মোট সক্রিয় জিএসটি রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ১.৫২ কোটিরও বেশি, যার মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ রেজিস্টার্ড করদাতার মধ্যে অন্তত একজন মহিলা আছেন। এর পাশাপাশি, ১৪ শতাংশ করদাতা এমন, যাঁদের ব্যবসার গঠন সম্পূর্ণভাবে নারীকেন্দ্রিক, অর্থাৎ সকল অংশীদার নারী।

এসবিআই-এর গ্রুপ চিফ ইকোনমিক অ্যাডভাইজার ড. সৌম্য কান্তি ঘোষ এই তথ্য জানিয়ে বলেন, “এই পরিসংখ্যান নারীর আর্থিক ক্ষমতায়নের প্রতিচ্ছবি। একদিকে মোট আয়করদাতার ১৫ শতাংশ মহিলা, অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে নারীদের আমানতের হার ৪০ শতাংশ — এই পরিসংখ্যানগুলি মিলিয়ে নারী ক্ষমতায়নের একটি সুদৃঢ় চিত্র উঠে আসছে।”

   

কর সংগ্রহে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি:
২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে চালু হওয়া জিএসটি ব্যবস্থার আট বছর পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে কর সংগ্রহে লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ বছরে মোট জিএসটি সংগ্রহ দ্বিগুণ হয়েছে। এখন গড় মাসিক মোট জিএসটি সংগ্রহ ২ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে।

এসবিআই রিপোর্ট অনুযায়ী, পাঁচটি রাজ্য — মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গুজরাট, তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশ — মোট রাজস্বের ৪১ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। একইসঙ্গে, ছয়টি রাজ্য ইতিমধ্যে বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি জিএসটি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। এই রাজ্যগুলিতে IGST (ইন্টিগ্রেটেড গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স)-এর অংশীদারিত্ব ৩০ শতাংশের বেশি, যা ইঙ্গিত দেয় বৃহত্তর রাজ্যগুলি জিএসটি সংগ্রহে কীভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং অন্য রাজ্যগুলিকে সহায়তা করছে।

কর কাঠামোয় নারীদের নেতৃত্ব:
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সীমিত দায়বদ্ধতা অংশীদারিত্ব (LLP) ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মতো ব্যবসায়িক গঠনে মহিলাদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বেশি। এই বৃদ্ধি কর ব্যবস্থায় নারীদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও এক ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়।

জিএসটি চালুর ফলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় এক ধরণের গঠনমূলক রূপান্তর এসেছে। একাধিক পরোক্ষ করের বদলে একক কর ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে এবং ব্যবসার খরচ কমেছে। এছাড়াও, পণ্যের আন্তঃরাজ্য চলাচলে বাধা কমেছে, ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার অধিক সংহত হয়েছে।

Advertisements

অর্থনৈতিক সমতা এবং বৈষম্য:
এসবিআই-এর গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৫ অর্থবছরের মধ্যে জিএসটি কার্যকরভাবে সব শ্রেণির ব্যবসা ও রাজ্যগুলিতে একটি সাম্যতা আনবে। ড. ঘোষ বলেন, “আমাদের গবেষণা দেখাচ্ছে যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য ও করদাতাদের মধ্যে সামঞ্জস্যতা (convergence) বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫-এর মধ্যে এই সামঞ্জস্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে।”

তবে কিছু বিত্তশালী এবং বৃহৎ রাজ্য যেমন তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, তাদের সক্রিয় জিএসটি করদাতার সংখ্যা রাজ্যের মোট GSDP (Gross State Domestic Product)-র অনুপাতে কম। অর্থাৎ, এই রাজ্যগুলোতে এখনও জিএসটি কাঠামোর আওতায় আনার মতো যথেষ্ট সংখ্যক ব্যবসা রয়ে গেছে।

অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং গুজরাটের মতো রাজ্যগুলিতে জিএসটি করদাতার সংখ্যা ওই রাজ্যের GSDP-র তুলনায় বেশি। এ থেকে বোঝা যায়, এই রাজ্যগুলিতে এখনও বিপুল পরিমাণে জিএসটি সম্ভাবনা রয়ে গেছে এবং সেখানে কর কাঠামোর আরও সম্প্রসারণ সম্ভব।

ভবিষ্যতের দিশা:
জিএসটি-র সাফল্যের পেছনে রয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রচেষ্টা, প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো, এবং করদাতাদের সচেতনতা। তবে আগামী দিনে জিএসটি ব্যবস্থায় আরও ডিজিটাল রূপান্তর, নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান এবং ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়িক সংস্থার অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোই হবে কর কাঠামোর ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি।

এসবিআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের জিএসটি কাঠামো শুধুমাত্র রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রেই নয়, বরং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ, রাজ্যভিত্তিক বৈচিত্র এবং সাম্যতার ধারা একটি শক্তিশালী ভারতের স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলছে।