ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি (Gautam Adani) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেতন হিসেবে পেয়েছেন মোট ১০.৪১ কোটি টাকা। এই পরিমাণটা যেমন তাঁর নিজের আগের বছরের আয়ের থেকে ১২ শতাংশ বেশি, তেমনই তা দেশের অন্যান্য বৃহৎ কর্পোরেট প্রধানদের তুলনায় অনেকটাই কম। আদানি গ্রুপের বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
৬২ বছর বয়সী আদানি আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড (AEL) এবং আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকনমিক জোন (APSEZ) – এই দুটি কোম্পানি থেকেই বেতন নিয়েছেন। গ্রুপের বাকি সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে তিনি কোনো আর্থিক পারিতোষিক নেননি।
কোথা থেকে কত পেলেন আদানি?
২০২৪-২৫ অর্থবছরে AEL থেকে তিনি পেয়েছেন ২.২৬ কোটি টাকা বেতন ও ২৮ লক্ষ টাকা পার্কুইজিট, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা—সব মিলিয়ে ২.৫৪ কোটি টাকা। আগের বছরে এ থেকে তিনি পেয়েছিলেন ২.৪৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে APSEZ থেকে তাঁর বেতন ছিল ১.৮ কোটি টাকা এবং কমিশন ৬.০৭ কোটি টাকা—সব মিলিয়ে ৭.৮৭ কোটি টাকা। যা আগের বছরের ৬.৮ কোটি টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
এই সমস্ত মিলিয়ে আদানির FY25-এ মোট বেতন দাঁড়ায় ১০.৪১ কোটি টাকা।
সহকর্মীদের তুলনায় কম আয়
এই আয় ভারতের অন্যান্য বিশিষ্ট কর্পোরেট প্রধানদের তুলনায় অনেকটাই কম। যেমন—
- সুনীল ভারতী মিত্তল (ভারতী এয়ারটেল): ৩২.২৭ কোটি টাকা (FY24)
- রাজীব বাজাজ (বাজাজ অটো): ৫৩.৭৫ কোটি টাকা (FY24)
- পবন মুঞ্জাল (হিরো মোটোকর্প): ১০৯ কোটি টাকা (FY24)
- এস এন সুব্রহ্মণ্যম (L&T): ৭৬.২৫ কোটি টাকা (FY25)
- সালিল এস পারেখ (ইনফোসিস): ৮০.৬২ কোটি টাকা (FY25)
তবে, মুকেশ আম্বানি কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে নিজের পুরো বেতনই ত্যাগ করেছেন। তার আগে তাঁর বেতন ছিল ১৫ কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ।
নিজের কোম্পানিতেই নিচু সারির বেতন?
গৌতম আদানি তাঁর নিজস্ব গ্রুপের কিছু নির্বাহীদের থেকেও কম আয় করেছেন। যেমন—
- AEL-এর CEO বিনয় প্রকাশ পেয়েছেন ৬৯.৩৪ কোটি টাকা। তাঁর মধ্যে ৪ কোটি টাকা বেতন ও ৬৫.৩৪ কোটি টাকা পারফরম্যান্স ইনসেনটিভ।
- AGEL (Adani Green Energy Ltd)-এর MD ভিনীত এস জাইন পেয়েছেন ১১.২৩ কোটি টাকা।
- গ্রুপ CFO জুগেশিন্দর সিং পেয়েছেন ১০.৪ কোটি টাকা।
- APSEZ-এর CEO অশ্বিনী গুপ্তা পেয়েছেন ১০.৩৪ কোটি টাকা।
- আদানির পুত্র করন আদানি APSEZ থেকে পেয়েছেন ৭.০৯ কোটি টাকা।
- আদানির ভাই রাজেশ আদানি AEL থেকে পেয়েছেন ৯.৮৭ কোটি টাকা।
- আদানির ভাইপো প্রণব আদানি পেয়েছেন ৭.৪৫ কোটি টাকা।
- আরেক ভাইপো সাগর আদানি AGEL থেকে পেয়েছেন ৭.৫০ কোটি টাকা।
- আদানি টোটাল গ্যাসের CEO সুরেশ পি মাঙ্গলানি পেয়েছেন ৮.২১ কোটি টাকা।
- আদানি এনার্জি সলিউশনসের CEO পেয়েছেন ১৪ কোটি টাকা।
- আদানি পাওয়ারের CEO এস বি খায়ালিয়া পেয়েছেন ৯.১৬ কোটি টাকা।
লভ্যাংশ ও সম্পদের ভিত্তিতে আয়
অন্য অনেক প্রোমোটারের মতো, আদানি তাঁর কোম্পানিগুলির বার্ষিক লাভ থেকে লভ্যাংশ হিসেবেও আয় করেন। এটি তাঁর স্থায়ী আয়ের একটি বড় উৎস।
বর্তমানে ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ ৮২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও ২০২২ সালে তিনি এশিয়ার সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন, ২০২৩ সালের শুরুতে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনের কারণে তাঁর গ্রুপের শেয়ারের বাজার মূল্য প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পায়। তবে বছর শেষে তিনি দু’বার আবারও শীর্ষ স্থানে পৌঁছলেও মুকেশ আম্বানির কাছে সেই অবস্থান পুনরায় হারান।
গৌতম আদানি, যিনি দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী পরিচালনা করেন এবং বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের মালিক, তিনি তাঁর নিজের বেতন অত্যন্ত সীমিত রেখেছেন। অথচ, তাঁর নিজের নিয়োগ করা নির্বাহীরা বা পরিবারের সদস্যরাও অনেক বেশি বেতন পাচ্ছেন। এটি তাঁর ব্যবসায়িক নীতি ও নেতৃত্বের একটি বিশেষ দিক তুলে ধরে, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পদের চাইতে সংস্থা ও কর্মক্ষমতার ওপর জোর বেশি।
এবং এটি আরও প্রমাণ করে যে, আজকের কর্পোরেট ভারতে নেতৃত্ব শুধুই বেতন দিয়ে বিচার করা যায় না—চূড়ান্ত সফলতা আসে দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষতা ও দৃঢ়তা দিয়ে।