FTA চুক্তিতে ভারতের কেমিক্যালস UK-তে বিনা শুল্কে প্রবেশের ঘোষণা

India UK Free Trade Agreement Timeline: How A Three-Year Tussle Led To A Historic Agreement

ভারত ও যুক্তরাজ্যের (UK) মধ্যে স্বাক্ষরিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) ভারতের রসায়ন খাতের জন্য এক বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে বলে জানিয়েছে রসায়ন পণ্য রপ্তানিকারক সংস্থা CHEMEXCIL (The Basic Chemicals, Cosmetics and Dyes Export Promotion Council)। সংস্থার মতে, এই চুক্তির ফলে ব্রিটেনে ভারতীয় রসায়ন পণ্যের রপ্তানি ও দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

Advertisements

রবিবার CHEMEXCIL-এর চেয়ারম্যান সতীশ ওয়াঘ জানান, এই চুক্তির আওতায় রসায়ন খাতের ১,০০০টিরও বেশি ট্যারিফ লাইন বা পণ্যের ধরন যুক্তরাজ্যে শূন্য শুল্কে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। এর ফলে ভারতীয় রসায়ন পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বাড়বে এবং বাজারে প্রবেশ আরও সহজ হবে।

   

কোন কোন পণ্য পাচ্ছে শুল্কমুক্ত সুবিধা?
এই চুক্তির আওতায় যে রসায়ন পণ্যগুলি শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

অর্গানিক কেমিক্যালস (জৈব রাসায়নিক), অ্যাগ্রোকেমিক্যালস (কৃষিজ রাসায়নিক), কসমেটিক্স ও টয়লেটরিজ, এসেনশিয়াল অয়েল, স্পেশালিটি কেমিক্যালস এবং পেট্রোকেমিক্যালস।
CHEMEXCIL-এর বক্তব্য, এই চুক্তিতে রসায়ন খাত ১২.৪ শতাংশ ট্যারিফ লাইনের প্রতিনিধিত্ব করছে, যা পুরো চুক্তির মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম অংশীদারিত্ব নির্দেশ করে।

রপ্তানির বর্তমান চিত্র ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা:
বর্তমানে ভারতের যুক্তরাজ্যে রসায়ন পণ্যের রপ্তানি মূল্য ৫৭০.৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভারতের মোট রসায়ন রপ্তানির মাত্র ২ শতাংশ। তবে, CHEMEXCIL আশা করছে যে এই চুক্তির ফলে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে এই রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়ে ৬৫০ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার পৌঁছাতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

সতীশ ওয়াঘ বলেন, “এই প্রবৃদ্ধি মূলত শুল্ক বিলোপ, প্রতিযোগিতার উন্নতি এবং বাজারে সহজ প্রবেশের কারণে হবে। ভারতের বিশ্বব্যাপী রসায়ন রপ্তানি প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং যুক্তরাজ্যের রসায়ন আমদানির পরিমাণ প্রায় ৩৫.১১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ভারতের অংশমাত্র ৫৭০ মিলিয়ন ডলার, যা বিশাল অপূর্ণ সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।”

Advertisements

ভারতের জন্য কী সুযোগ তৈরি হল?
CHEMEXCIL-এর মতে, এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ভারতীয় রসায়ন শিল্পের জন্য একাধিক নতুন সুযোগের দরজা খুলে দিচ্ছে:
যুক্তরাজ্যের বাজারে অধিক দৃশ্যমানতা, শুল্ক ব্যয় কমে যাওয়ায় রপ্তানিতে বাড়তি লাভ, সরবরাহ শৃঙ্খল সহযোগিতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও যৌথ উদ্যোগের সম্ভাবনা, নিয়ন্ত্রক সহানুভূতি বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য সহজতর হবে।

এই সবকিছু মিলিয়ে ভারতের রসায়ন শিল্প যুক্তরাজ্যের মতো উচ্চ-সম্ভাবনাময় বাজারে আরও গভীরভাবে প্রবেশ করতে পারবে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।

রসায়ন শিল্পের গুরুত্ব:
CHEMEXCIL-এর তথ্যানুযায়ী, ভারতীয় রসায়ন শিল্প একদিকে যেমন বৈশ্বিক চাহিদা পূরণে সক্ষম, অন্যদিকে দেশীয় শিল্পোন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই খাতের অন্তর্ভুক্ত পণ্যগুলি কৃষি, স্বাস্থ্য, রূপচর্চা থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়, যা একে একটি বহু-বিধ ভূমিকা সম্পন্ন খাত হিসেবে গড়ে তুলেছে।

ভারত-যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে ভারতের রসায়ন শিল্পের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষিত এই চুক্তি শুধু রপ্তানি বৃদ্ধিতেই নয়, বরং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বেও নতুন মাত্রা যোগ করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সুবিধাগুলিকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় রসায়ন খাত আগামীতে বিশ্ববাজারে আরও শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করতে পারবে।

এই চুক্তিকে রসায়ন শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য একটি ‘গেম-চেঞ্জার’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আশা করছে, সরকার ও শিল্প একসঙ্গে কাজ করলে ভারত দ্রুত যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য উন্নত দেশের বাজারে তার রসায়ন পণ্যের অংশীদারিত্ব বহুগুণে বাড়াতে পারবে।