ডাবর কোম্পানি (Dabur), যেটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্য ও পানীয় (Dabur) প্রস্তুতকারক, সম্প্রতি তাদের বিজ্ঞাপন নিয়ে বিপাকে পড়েছে। ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা, FSSAI (ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া), তাদের বিরুদ্ধে দিল্লি হাই কোর্টে অভিযোগ তুলেছে।
FSSAI-এর মতে, ডাবরের (Dabur) বিজ্ঞাপনে যে দাবি করা হচ্ছে “একশো শতাংশ ফ্রুট জুস”,(Dabur) তা একেবারেই মিথ্যে। সংস্থাটি দাবি করেছে যে, ডাবরের ফ্রুট জুসে শুধু ফলের রস নয়, বরং জল ও অন্যান্য উপাদানও মেশানো হয়। এই ধরনের দাবি উপভোক্তাদের বিভ্রান্ত করতে পারে এবং তা অবৈধ বলে মনে করছে FSSAI।
‘একশো শতাংশ ফ্রুট জুস’-এর মিথ্যে দাবি: কি বলছে FSSAI?
FSSAI-এর অভিযোগ অনুসারে, ডাবরের(Dabur) ‘একশো শতাংশ ফ্রুট জুস’-এর লেবেলটি গ্রাহকদের ভুল ধারণা তৈরি করছে, কারণ পানীয়তে (Dabur) ফলের রস ছাড়াও জল ও অন্যান্য উপাদান মেশানো হয়। এই কারণে, ওই দাবি একেবারেই বিভ্রান্তিকর হতে পারে এবং এটি উপভোক্তাদের সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার লঙ্ঘন করছে। FSSAI দাবি করেছে, “এমন ধরনের দাবি উপভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর, কারণ এতে তারা ভাবতে পারেন যে এটি একটি বিশুদ্ধ ফলের রস, অথচ এতে জল এবং অন্যান্য উপাদানও মেশানো হচ্ছে।”
২০২৪ সালের জুন মাসে FSSAI একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে, যাতে বলা হয় ‘ফুড বিজনেস (Dabur) অপারেটরস’ (FBO) যাতে এমন বিভ্রান্তিকর লেবেল সরিয়ে দেয়। এর পরই ডাবর কর্তৃপক্ষ এই বিজ্ঞপ্তির বিরোধিতা করে এবং দাবি করে যে, তারা বৈধভাবে তাদের পণ্যের জন্য এই লেবেল(Dabur) ব্যবহার করছে, কারণ FSSAI-ই তাদের পণ্যটির অনুমোদন দিয়েছে। ডাবরের মতে, তাদের পণ্যে জল মেশানো হলেও তা ফলের রসের প্রাকৃতিক গঠন ঠিক রাখার জন্য। তবে FSSAI এই যুক্তিকে মেনে নেয়নি এবং তাদের দাবি করেছে যে, যদি কোনো পণ্যে জল মেশানো হয়, তবে “একশো শতাংশ” বলাটা একেবারে ভুল হবে এবং এটি উপভোক্তাদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
ডাবরের (Dabur) অবস্থান এবং তর্ক-বিতর্ক
ডাবর (Dabur) কোম্পানি, তাদের পণ্য “একশো শতাংশ ফ্রুট জুস”-এর দাবি করে আসছিল, তবে তারা স্বীকার করেছে যে, তাদের জুসে কিছু পরিমাণ জল মেশানো হয়, তবে এর উদ্দেশ্য হল প্রাকৃতিক উপাদানগুলির গঠন ঠিক রাখা। তাদের মতে, এতে কোনও বিভ্রান্তি নেই কারণ জুসটি একটি প্রাকৃতিক দ্রব্য এবং তার গুণমান বজায় রাখার জন্য জল মেশানো হয়।
তবে FSSAI (Dabur) এই যুক্তিকে গ্রহণ করেনি। তাদের মতে, যদি কোনও পণ্যে জল বা অন্য উপাদান মেশানো হয়, তবে “একশো শতাংশ” বলাটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। FSSAI মনে করছে, এই ধরনের বিজ্ঞাপন কেবল বিভ্রান্তিকর নয়, এটি উপভোক্তাদের সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকেও ক্ষুণ্ন করে। এজন্য তারা আদালতে এই দাবি তুলেছে, এবং আদালত আগামী ৭ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারণ করেছে।
আইনি লড়াই এবং আদালতের ভূমিকা
এখনো পর্যন্ত ডাবর এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান অটুট রেখেছে। তারা বলছে, তাদের পণ্যে জল (Dabur) মেশানো হলেও তা পণ্যের গুণগত মান রক্ষা করতে সহায়তা করে। তাদের দাবি, এই ধরনের দাবি “একশো শতাংশ ফ্রুট জুস”-(Dabur) এর বৈধতা অক্ষুণ্ণ রাখে। তবে, FSSAI এই যুক্তি খণ্ডন করেছে এবং আদালতে তাদের পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরছে। আদালতের কাছে তারা দাবি করেছে যে, এরকম বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনগুলো উপভোক্তাদের ভুল ধারণা তৈরি করতে পারে, যা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
উপভোক্তাদের সচেতনতা ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার
এটি শুধু একটি আইনি লড়াই নয়, বরং এটি এক বৃহত্তর সামাজিক ও নৈতিক প্রশ্নও তুলে ধরেছে। যে বিজ্ঞাপনগুলো আমরা দেখি, সেগুলোর মাধ্যমে আমাদের খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলোর প্রভাব পড়ে। যদি কোনো পণ্য “একশো শতাংশ ফ্রুট জুস” (Dabur) হিসেবে প্রচারিত হয়, তবে উপভোক্তা এটা বিশ্বাস করে কিনতে পারে, যখন বাস্তবে তা একেবারে ভিন্ন হতে পারে। এই ধরনের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনগুলো উপভোক্তাদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এটি তাদের সঠিক ও সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে।
নিরপেক্ষ মূল্যায়ন ও ভবিষ্যতের প্রভাব
এই মামলার ফলাফল যে কোনও খাদ্য পণ্যের বিজ্ঞাপন ও লেবেলিংয়ের(Dabur) ক্ষেত্রে একটি বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। যদি আদালত FSSAI-এর পক্ষে রায় দেয়, তবে এটি ভবিষ্যতে কোম্পানিগুলির জন্য বিজ্ঞাপন ও লেবেলিং সম্পর্কিত নতুন নিয়মাবলী তৈরি করতে উৎসাহিত করতে পারে। এতে উপভোক্তা সুরক্ষার প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, ডাবর এবং FSSAI-এর মধ্যে এই আইনি লড়াই আগামী দিনে খাবারের পণ্যের বিজ্ঞাপন এবং বিপণনে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে।