অর্থ দ্বিগুণ থেকে জীবনবীমা—অর্থনীতির জরুরি ৯টি নিয়ম জানুন

আর্থিক স্বাধীনতা ও সঠিক বিনিয়োগ কৌশল নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন বিনিয়োগ ও মার্কেট বিশেষজ্ঞ একে মন্ধন (AK Mandhan)। এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ তার…

LIC Simplifies Insurance Claims for Air India AI-171 Crash Victims

আর্থিক স্বাধীনতা ও সঠিক বিনিয়োগ কৌশল নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন বিনিয়োগ ও মার্কেট বিশেষজ্ঞ একে মন্ধন (AK Mandhan)। এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ তার একটি থ্রেড ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি সাধারণ মানুষের জন্য ৯টি গুরুত্বপূর্ণ পার্সোনাল ফাইন্যান্স রুল তুলে ধরেছেন। এই নিয়মগুলি কেবল তাত্ত্বিক নয়, বরং প্রতিটি ব্যক্তির জীবনের বাস্তব অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে কার্যকর হতে পারে।

বর্তমান সময়ে আর্থিক নিরাপত্তা জীবনের একটি অপরিহার্য স্তম্ভ। চিকিৎসা জরুরি অবস্থা, চাকরি হারানো কিংবা অন্য যেকোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি। মন্ধনের প্রস্তাবিত ৯টি নিয়ম সেই পথেই আলোকবর্তিকা।

   

১) Rule of 72 – অর্থ দ্বিগুণের নিয়ম:
আপনার বিনিয়োগ কত বছরে দ্বিগুণ হবে তা সহজেই হিসেব করা যায়। ৭২ কে সুদের হারে ভাগ করুন। যেমন, সুদের হার যদি ৮% হয়, তবে ৭২ ÷ ৮ = ৯ বছর লাগবে অর্থ দ্বিগুণ হতে। আবার ৬% হারে ১২ বছর এবং ৯% হারে মাত্র ৮ বছরেই অর্থ দ্বিগুণ হবে।

২) Rule of 70 – মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব:
বিনিয়োগের প্রকৃত মূল্য কত দ্রুত অর্ধেক হবে তা জানতে ৭০ কে মুদ্রাস্ফীতির হারে ভাগ করুন। যেমন, যদি মুদ্রাস্ফীতি ৭% হয়, তবে আপনার অর্থের ক্রয়ক্ষমতা ১০ বছরে অর্ধেকে নেমে আসবে।

৩) 4.1% Withdrawal Rule – আর্থিক স্বাধীনতার সূত্র:
অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে চাইলে বার্ষিক খরচের ২৫ গুণ টাকার একটি করপাস গড়ে তুলতে হবে। যেমন, যদি বার্ষিক খরচ হয় ৫ লাখ টাকা, তবে আপনার করপাস প্রয়োজন প্রায় ১.২৫ কোটি টাকা। এর অর্ধেক বিনিয়োগ করতে হবে ইকুইটিতে এবং অর্ধেক স্থির আয়ে। এরপর বার্ষিক প্রায় ৪% হারে অর্থ তুললে দীর্ঘ সময় আর্থিক সুরক্ষা বজায় রাখা সম্ভব।

৪) 100 minus Age Rule – সম্পদ বণ্টনের সহজ কৌশল:
বিনিয়োগে কতটা ইকুইটি আর কতটা ঋণপত্র থাকবে তা নির্ধারণে সহজ নিয়ম হলো ১০০ থেকে আপনার বয়স বাদ দেওয়া। যেমন, যদি বয়স হয় ৩০ বছর, তবে (১০০–৩০) = ৭০% ইকুইটি আর ৩০% ঋণ। বয়স ৬০ হলে ইকুইটি ৪০% আর ঋণ ৬০% হওয়া উচিত।

৫) 10-5-3 Rule – রিটার্নের বাস্তবসম্মত ধারণা:
বিনিয়োগে যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশা থাকা জরুরি। মন্ধন বলছেন—
ইকুইটি বা মিউচুয়াল ফান্ডে প্রত্যাশিত রিটার্ন: ১০%
ঋণ বা ফিক্সড ডিপোজিটে: ৫%
সেভিংস অ্যাকাউন্টে: ৩%

৬) 50-30-20 Rule – আয়ের সঠিক বণ্টন:
আপনার মাসিক আয়কে তিন ভাগে ভাগ করতে হবে—
৫০% প্রয়োজনীয়তা (বাড়িভাড়া, বাজার, ঋণ ইত্যাদি)
৩০% ইচ্ছা (বিনোদন, ভ্রমণ ইত্যাদি)
২০% সঞ্চয় (ইকুইটি, মিউচুয়াল ফান্ড, ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদি)
এই নিয়ম মানলে দীর্ঘমেয়াদে সঞ্চয় এবং জীবনযাত্রার মধ্যে ভারসাম্য থাকবে।

Advertisements

৭) 3X Emergency Rule – জরুরি তহবিল
প্রত্যেকেরই জরুরি অবস্থার জন্য অন্তত মাসিক আয়ের ৩ গুণ অর্থ আলাদা করে রাখা উচিত। যেমন, আপনার মাসিক আয় যদি ৫০,০০০ টাকা হয়, তবে কমপক্ষে ১.৫ লাখ টাকা জরুরি তহবিলে রাখা প্রয়োজন। আরও নিরাপদ হতে চাইলে ৬ গুণ আয় পর্যন্ত লিকুইড ফান্ডে রাখা ভালো।

৮) 40% EMI Rule – ঋণের চাপ নিয়ন্ত্রণ
কখনোই আপনার আয়ের ৪০% এর বেশি ইএমআই হওয়া উচিত নয়। যেমন, মাসিক আয় ৫০,০০০ হলে ইএমআই সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা হওয়া উচিত। অনেক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি ঋণ প্রদানের সময় এই সূত্র অনুসরণ করে।

৯) Life Insurance Rule – বীমার পরিমাণ নির্ধারণ
লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কভার অবশ্যই বার্ষিক আয়ের অন্তত ২০ গুণ হওয়া উচিত। যেমন, আপনার বার্ষিক আয় যদি ৫ লাখ হয়, তবে কমপক্ষে ১ কোটি টাকার কভার থাকা জরুরি। এটি পরিবারের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য।

একে মন্ধনের এই ৯টি নিয়ম শুধু সংখ্যার খেলা নয়, বরং প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে অর্থ ব্যবস্থাপনায় সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়। ভারতের মতো দেশে যেখানে স্বাস্থ্য খরচ, শিক্ষা খরচ ও জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে সঞ্চয় ও বিনিয়োগের কৌশল না থাকলে আর্থিক সঙ্কট অনিবার্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিয়মগুলি মেনে চললে সাধারণ মানুষ সহজেই তাদের আর্থিক পরিকল্পনা সাজাতে পারবেন। প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও সুরক্ষার দিকেও নজর দেওয়া সম্ভব হবে।

অর্থাৎ, আর্থিক স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে সঠিক নিয়ম মানা ছাড়া উপায় নেই। আর সেই পথনির্দেশ দিয়েই এবার নতুনভাবে আলোচনায় উঠে এসেছেন একে মন্ধন।