বারবার KYC থেকে মুক্তি, গ্রাহকদের সুবিধার্থে RBI গভর্নরের বার্তা

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা গত বুধবার মুম্বাইয়ে একটি আর্থিক সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে গ্রাহক অধিকার এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন,…

freedom-from-repeated-kyc-rbi-governor-message-for-customer-convenience

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা গত বুধবার মুম্বাইয়ে একটি আর্থিক সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে গ্রাহক অধিকার এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তা অনিচ্ছাকৃতভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পথে বাধা না হয়ে ওঠে। ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)-এর একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

গভর্নর মালহোত্রা জানিয়েছেন, ভারতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে দেশের ৯৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, নিয়ন্ত্রণ নীতিগুলো এমন হওয়া উচিত নয় যা অপ্রয়োজনীয় বাধা সৃষ্টি করে।

   

তিনি বলেন, “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে নিয়ম-কানুন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পথে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে। গ্রাহকের অধিকার ও সুবিধার প্রতি আমাদের সচেতন থাকতে হবে, পাশাপাশি যথাযথ পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তাও পূরণ করতে হবে।”

Advertisements

আর্থিক ব্যবস্থাকে মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী অর্থায়নের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে মালহোত্রা একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আইন ও নিয়মগুলো কেবল অবৈধ ও অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করবে, এমন ভোঁতা হাতিয়ার হবে না যা অনিচ্ছাকৃতভাবে সৎ মানুষের ক্ষতি করে।” তিনি অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, এটি বৈধ বিনিয়োগ ও কার্যকলাপকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে কার্যকর ও ন্যায্য করতে গভর্নর একটি ঝুঁকি-ভিত্তিক পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিয়মগুলোর প্রভাব ব্যবসা ও ব্যক্তিদের ওপর কীভাবে পড়ছে, তা মূল্যায়ন করা জরুরি। এছাড়াও, তিনি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে বারবার ‘নো ইয়োর কাস্টমার’ (KYC) প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মালহোত্রা স্বীকার করেছেন, এটি ব্যবসা করার সুবিধা বাড়িয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, অবৈধ আর্থিক কার্যকলাপের জন্যও এর অপব্যবহার হতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে বদ্ধপরিকর, যাতে অবৈধ আর্থিক কার্যকলাপ রোধ ও মোকাবিলা করা যায়।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, মুম্বাইয়ে তিন দিনব্যাপী এই সেমিনারে আলোচনা ভারতের নতুন গোপনীয়তা আইন বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। এছাড়াও, তিনি ‘ট্রাভেল রুল’—যা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ভার্চুয়াল অ্যাসেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (VASP) লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করতে বাধ্য করে—কে প্রযুক্তি-নিরপেক্ষ করার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে এটি বিশ্বব্যাপী সহজে গ্রহণযোগ্য হয়।

ভারতের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অগ্রগতি নিয়ে গর্ব প্রকাশ করে মালহোত্রা বলেন, দেশের প্রায় সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকেরই এখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে সরকার ও RBI-এর সমন্বিত প্রচেষ্টায়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই সাফল্যকে টিকিয়ে রাখতে নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে গ্রাহকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা যাবে না।

মালহোত্রা বারবার গ্রাহকের অধিকার ও সুবিধার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, বারবার কেওয়াইসি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের হয়রানি করা উচিত নয়। এটি কেবল সময় নষ্ট করে না, বরং আর্থিক পরিষেবার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, একটি কেন্দ্রীভূত KYC ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে, যাতে একবার তথ্য জমা দেওয়ার পর তা সব প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা যায়।

বাংলার গ্রাহকদের কাছেও এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার প্রসার ঘটলেও, অনেকে এখনও KYC প্রক্রিয়ার জটিলতায় ভোগেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে ডিজিটাল সাক্ষরতা কম, বারবার কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। মালহোত্রার এই মন্তব্য তাই বাংলার সাধারণ মানুষের জন্যও আশার আলো দেখাচ্ছে।

প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক জালিয়াতির ঝুঁকিও বেড়েছে। মালহোত্রা বলেন, এই ঝুঁকি মোকাবিলায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে তা এমনভাবে হবে যাতে সৎ ব্যবসায়ী ও গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। তিনি একটি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন।

RBI গভর্নরের এই বক্তব্য আর্থিক নিয়ন্ত্রণে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়। গ্রাহকের সুবিধা ও অধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি যে পথের কথা বলেছেন, তা ভারতের আর্থিক ভবিষ্যৎকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। বাংলার মানুষও আশা করছেন, এই নীতি তাঁদের জীবনে সহজতা নিয়ে আসবে।