ভারতীয় ইক্যুইটি থেকে ১৭,৭৪১ কোটি টাকা তুলে নিল FPI

2025 সালের জুলাই মাসে ভারতের ইক্যুইটি বাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা (FPI) নেট বিক্রেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি লিমিটেড (NSDL) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, জুলাই মাসে…

fpi-outflow-continues-concern-for-indian-stock-market

2025 সালের জুলাই মাসে ভারতের ইক্যুইটি বাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা (FPI) নেট বিক্রেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি লিমিটেড (NSDL) প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, জুলাই মাসে FPI-রা মোট ১৭,৭৪১ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। এই পরিসংখ্যান এ বছর এপ্রিল, মে ও জুন মাসে তিন মাস পরপর পজিটিভ ইনফ্লোর ধারাকে সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছে।

আকস্মিক বিক্রয়চাপ জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে:
জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আকস্মিক আতঙ্ক ছড়ায়। ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্টের মধ্যে মাত্র পাঁচ দিনে FPI-রা ভারতীয় ইক্যুইটি মার্কেট থেকে ১৭,৩৯০.৬ কোটি টাকা তুলে নেয়। এই আকস্মিক বিক্রয়ের কারণেই জুলাই মাসের সামগ্রিক বিনিয়োগের চিত্র নেতিবাচক হয়ে পড়ে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হঠাৎ বিক্রয়চাপের পেছনে মূল কারণ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ ব্যবস্থা। এই শুল্কনীতির প্রভাবে শুধুমাত্র ভারত নয়, বিশ্বের অনেক দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মনোবলে প্রভাব ফেলেছে।

   

বছরের পরিসংখ্যানে FPIদের অবস্থান:
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে FPI-রা সবচেয়ে বেশি পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করেছিল — প্রায় ৭৮,০২৭ কোটি টাকা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ৩৪,৫৭৪ কোটি টাকা এবং মার্চে ৩,৯৭৩ কোটি টাকা মূল্যের শেয়ার বিক্রি হয়। যদিও এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত টানা তিন মাস FPI-রা পজিটিভ ইনফ্লো বজায় রেখেছিল।
এপ্রিল: আনুমানিক পজিটিভ ইনফ্লো
মে: ১৯,৮৬০ কোটি টাকা (সর্বোচ্চ)
জুন: ১৪,৫৯০ কোটি টাকা
এই তিন মাসে বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগমন ভারতীয় শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি করেছিল। কিন্তু জুলাইয়ে হঠাৎ করেই FPI-দের মনোভাব পাল্টে যায়।

মোট ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত FPI-দের নিট বিক্রয়:
জুলাই মাসের শেষে ২০২৫ সালের মোট নিট বিক্রয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১,০১,৭৯৫ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণে পুঁজি প্রত্যাহারের ফলে ভারতীয় শেয়ারবাজারে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভূমিকা নিয়ে।

Advertisements

কেন কমছে বিদেশি বিনিয়োগ?
1. মার্কিন শুল্কনীতি:
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ আরোপ করেছে, যার ফলে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানো হচ্ছে। এই নীতির প্রত্যুত্তরে ভারতও কিছু পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
2. ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা:
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনাও বিশ্ববাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগকারীরা এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিপূর্ণ বাজার থেকে পুঁজি সরিয়ে তুলছেন।
3. ডলার শক্তিশালী হওয়া ও মুদ্রাস্ফীতি:
ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং উন্নত দেশগুলিতে সুদের হার বাড়ার সম্ভাবনাও ভারতসহ উদীয়মান বাজারগুলো থেকে পুঁজি প্রত্যাহারে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।

ভবিষ্যৎ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভারতীয় বাজারে আবারও FPI বিক্রয়চাপ দেখা যেতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি, মুদ্রানীতি এবং অভ্যন্তরীণ আর্থিক স্থিতিশীলতা ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনোভাব প্রভাবিত করতে পারে।

২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহে উঠানামা ভারতীয় অর্থনীতির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি শক্তিশালী থাকলেও, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এবং আমেরিকার নীতিগত পরিবর্তন শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এখন দেখার বিষয় হলো, আগস্ট এবং পরবর্তী মাসগুলোতে এই প্রবণতা কতটা পাল্টায় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আবার ভারতীয় বাজারে আস্থা ফিরে পায় কি না।