কর নিয়ে FPI-দের দাবি নাকচ, SEBI চেয়ারম্যানের কড়া বার্তা

ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI)-এর নতুন চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পাণ্ডে শনিবার জানিয়েছেন যে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের (FPI) বর্তমান কর ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।…

fpi-tax-demand-rejected-sebi-chairman-message

ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI)-এর নতুন চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পাণ্ডে শনিবার জানিয়েছেন যে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের (FPI) বর্তমান কর ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে এই বিষয়ে কোনো পরিবর্তনের প্রত্যাশা করা উচিত নয়। তিন সপ্তাহ আগে সেবি-র (SEBI) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া পাণ্ডে বলেন, ভারতের আর্থিক ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই স্থিতিশীল নীতি, নিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি এবং শক্তিশালী রিটার্নের মতো সুবিধা প্রদান করছে।

‘বিজনেস টুডে মাইন্ডরাশ ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “কর ব্যবস্থায় যদি কিছু নিশ্চয়তা এসে থাকে, তবে তা অস্থির করার কোনো প্রয়োজন নেই।” তিনি ভারতের শক্তিশালী অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, গত পাঁচ বছরে MSCI-তে বার্ষিক ১১ শতাংশের বেশি রিটার্ন এসেছে। এছাড়া, ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি এবং সরকারি ও বেসরকারি খাত থেকে ক্রমবর্ধমান মূলধন গঠনও দেশের অর্থনীতির শক্তি বাড়াচ্ছে।

   

কর ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা FPI-দের প্রতি পাণ্ডে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। সম্প্রতি সরকার জানিয়েছে যে ১ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে FPI-দের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মূলধন লাভের কর ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২.৫ শতাংশ হবে। এই পরিবর্তন, বিশ্বব্যাপী ঘটনার সঙ্গে মিলে, ২০২৪ সালে FPI-দের বিনিয়োগ প্রত্যাহারের একটি কারণ হয়ে উঠেছে। তবে পাণ্ডে মনে করেন, বর্তমান কর ব্যবস্থা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগের জবাব দিয়েছে এবং সাম্প্রতিক বাজেটে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই কার্যকরভাবে কাজ করছে।”

Advertisements

মিথ্যা কর্পোরেট প্রকাশের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ:
পাণ্ডে কর্পোরেট জালিয়াতির বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কিছু কোম্পানি তাদের আর্থিক প্রকাশে ভুল তথ্য দিচ্ছে, যা সরাসরি মিথ্যার পর্যায়ে পড়ে। “আমরা এ ধরনের প্রকাশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করব না,” তিনি জানান। সেবি-র (SEBI) নজরদারি ব্যবস্থা এই ধরনের কার্যকলাপ চিহ্নিত করছে এবং প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।

কোম্পানিগুলির এই ধরনের আচরণ শুধু বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করে না, বরং বাজারের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে। পাণ্ডে জোর দিয়ে বলেন, সেবি (SEBI) এই বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর নজরদারি করা হবে।

ডেরিভেটিভস ট্রেডিং নিয়ে আলোচনায় পাণ্ডে বলেন, বাজারের পরিমাণ বিশ্লেষণে আরও সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন যে কখনও কখনও ধারণাগত সুদের পরিসংখ্যান বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তিনি পরিমাপের মানদণ্ড আরও উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

তিনি আরও বলেন, আর্থিক ব্যবস্থায় ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লাভ করলেও খুচরা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে পড়া উচিত নয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সেবি (SEBI) নতুন নিয়ম-কানুন প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে। পাণ্ডে জানান, বাজারের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করাই তাদের লক্ষ্য।

ভারতের পুঁজিবাজারে এফপিআই-দের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সাম্প্রতিক কর বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী অস্থিরতার কারণে তাদের বিনিয়োগ কমেছে। পাণ্ডে মনে করেন, ভারতের স্থিতিশীল নীতি এবং লাভজনক রিটার্ন FPI-দের জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয়। তিনি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, বর্তমান ব্যবস্থা তাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম।

সেবি-র (SEBI) নতুন প্রধানের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তিনি বাজারে স্থিতিশীলতা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তবে, কর বৃদ্ধি এবং FPI-দের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে বাজারের গতিপথে প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে, কর্পোরেট জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং ডেরিভেটিভস ট্রেডিংয়ে নতুন নিয়ম বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে পারে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এই সিদ্ধান্তগুলির প্রভাব কী হবে, তা সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হবে। আপাতত, সেবি-র নতুন নেতৃত্বের দিকে নজর রাখছে বাজার বিশ্লেষকরা।