চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের (FPI) মধ্যে ফের বিক্রির প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এপ্রিল ১ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ১১ দিনে ভারতের ইকুইটি মার্কেট থেকে তারা তুলে নিয়েছেন ৩১,৫৭৫ কোটি টাকা। মার্চ মাসের শেষদিকে দেখা দেওয়া অল্প সময়ের কেনার ধারা এর ফলে সম্পূর্ণভাবে উল্টে গিয়েছে।
ডিপোজিটরি তথ্য অনুসারে, মার্চ ২১ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত এফপিআইরা প্রায় ৩০,৯২৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, যা মার্চ মাসের মোট প্রত্যাহারকে কিছুটা কমিয়ে ৩,৯৭৩ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছিল। তবে এপ্রিলের শুরু থেকেই ফের চরম বিক্রির ঢেউ বাজারে আছড়ে পড়ে, যার ফলে ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত মোট এফপিআই প্রত্যাহার ১.৪৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নীতির প্রভাব
এই হঠাৎ বিক্রির অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নতুন ট্যারিফ ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন একাধিক দেশের ওপর, যার মধ্যে ভারতও রয়েছে, নতুনভাবে আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা আরও রক্ষণাত্মক অবস্থান নিচ্ছেন।
জিওজিত ইনভেস্টমেন্টস-এর চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট ভি কে বিজয়কুমার জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফের কারণে বিশ্ববাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব ভারতীয় এফপিআই বিনিয়োগেও পড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এফপিআই কৌশলগুলি এখনো গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। পরিষ্কার কোন প্যাটার্ন এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে এই অস্থিরতা শেষ হলে বিনিয়োগের একটি স্পষ্ট চিত্র সামনে আসবে।”
মধ্যমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে আশাবাদ
যদিও বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, তবুও বিশ্লেষকরা ভারতের মধ্যমেয়াদি অর্থনৈতিক ভিশনের ওপর আস্থা রাখছেন। বিজয়কুমার মনে করেন, “যদি বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনুকূল না-ও হয়, তবুও ভারতে FY26 সালে ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি সম্ভব। সেই সঙ্গে ভালো আয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস এফপিআই বিনিয়োগকারীদের পুনরায় আকৃষ্ট করতে পারে।”
ঋণ বাজারেও প্রত্যাহার
শুধু ইকুইটি নয়, ঋণ বাজারেও এফপিআইদের মধ্যে প্রত্যাহারের প্রবণতা দেখা গিয়েছে। এপ্রিল মাসে এফপিআইরা জেনারেল ডেব্ট লিমিট থেকে ৪,০৭৭ কোটি টাকা এবং ডেব্ট ভলান্টারি রিটেনশন রুট (VRR) থেকে ৬,৬৩৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এর ফলে স্পষ্ট যে বিনিয়োগকারীরা এখন ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেট থেকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে চাইছেন।
ভারতের ভিত মজবুত, বলছেন বিশ্লেষকরা
যদিও বৈশ্বিক বাজারে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে, ভারতীয় অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভেন্টুরা সিকিউরিটিজ-এর রিসার্চ প্রধান বিনীত বোলিনজকার। তিনি বলেন, “বর্তমান বিক্রির প্রবণতা মূলত আন্তর্জাতিক মন্দা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা থেকে উৎসারিত। তবে ভারতের শক্তিশালী গৃহস্থালি চাহিদা ও বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনের পরিবর্তন ভারতকে ভবিষ্যতের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বব্যাপী অনেক বিনিয়োগকারী ভারতকে একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছেন। এই মন্দা কাটিয়ে উঠলে ভারত আবারও তাদের পছন্দের তালিকায় আসবে।”
যদিও ২০২৫ সালের শুরুটা এফপিআই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হতাশাজনক, তবুও ভারতের অর্থনৈতিক ভিত ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের নজরে রয়েছে। বর্তমানে বৈশ্বিক পরিস্থিতির জটিলতা কাটলে, ভারতের বাজারে ফের একবার এফপিআইদের প্রত্যাবর্তন প্রত্যাশিত। তার আগে পর্যন্ত, সতর্কতা ও ধৈর্যই বিনিয়োগকারীদের একমাত্র অবলম্বন।