পুরনো শেয়ার সার্টিফিকেট পেয়েছেন? কীভাবে ডিমেট করবেন, জেনে নিন বিস্তারিত

আজকাল অনেক পরিবারেই এমন ঘটনা শোনা যায়—বাবা বা দাদুর রেখে যাওয়া পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে হঠাৎ একগুচ্ছ শেয়ার সার্টিফিকেটের (Share Certificates) খোঁজ মিলল। পুরনো দিনের…

পুরনো শেয়ার সার্টিফিকেট পেয়েছেন? কীভাবে ডিমেট করবেন, জেনে নিন বিস্তারিত

আজকাল অনেক পরিবারেই এমন ঘটনা শোনা যায়—বাবা বা দাদুর রেখে যাওয়া পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে হঠাৎ একগুচ্ছ শেয়ার সার্টিফিকেটের (Share Certificates) খোঁজ মিলল। পুরনো দিনের নামী কোম্পানির শেয়ার, যেগুলোর দাম আজকের দিনে দাঁড়িয়ে লক্ষ বা কোটি টাকার সমান হতে পারে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, সেই শেয়ার সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে কী করবেন? কারণ ভারতের সিকিউরিটিজ বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আজকের দিনে শুধুমাত্র ইলেকট্রনিক বা ডিমেট ফর্মে থাকা শেয়ারেই লেনদেন করা যাবে।

এই কারণে, এখনই প্রয়োজন ‘ডিমেট’ করার—অর্থাৎ আপনার পুরনো শেয়ার সার্টিফিকেটগুলোকে ডিজিটাল রূপে রূপান্তরিত করা।

   

কী এই ডিমেট বা Dematerialisation?

ডিমেটের পুরো নাম ‘ডিমেটেরিয়ালাইজেশন’। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কাগজে ছাপা পুরনো শেয়ার সার্টিফিকেটকে আপনার ডিমেট অ্যাকাউন্টে ইলেকট্রনিক শেয়ার হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে-বেচতে হলে, তা অবশ্যই ডিমেট ফর্মে থাকা চাই।

অনেকেই ভাবেন এই প্রক্রিয়া খুব জটিল, কিংবা কোথা থেকে শুরু করবেন সেটা বুঝতে পারেন না। ঠিক এই সমস্যার সমাধান করতেই অনলাইন ব্রোকারেজ সংস্থা Zerodha একটি বিশেষ দল তৈরি করেছে, যারা এই ডিমেট প্রক্রিয়ায় আপনাকে সাহায্য করবে।

কেন ডিমেট করানো জরুরি?

১. নিরাপত্তা বৃদ্ধি: কাগজের সার্টিফিকেট সহজেই হারিয়ে যেতে পারে, নষ্ট হতে পারে বা জালিয়াতির শিকার হতে পারে। ডিমেট করলে এইসব ঝুঁকি থাকে না।

২. সুবিধাজনক পরিচালনা: সব শেয়ার এক জায়গায় দেখতে পারবেন, সহজেই ট্র্যাক করতে পারবেন আপনার পোর্টফোলিও।

৩. ডিভিডেন্ড সরাসরি ব্যাংকে: আপনি কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড বা লভ্যাংশ সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাবেন, কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি নেই।

৪. আইনি বাধ্যবাধকতা: এখন আর কোনো কোম্পানি ফিজিক্যাল শেয়ার ট্রান্সফার করে না। তাই ট্রান্সফার বা বিক্রির জন্য ডিমেট বাধ্যতামূলক।

কীভাবে করবেন ডিমেট?

ডিমেট করার প্রক্রিয়া খুব জটিল নয়। Zerodha-র মাধ্যমে এটি একটি তিন ধাপের সহজ পদ্ধতি।

প্রথম ধাপ: দরকারি নথিপত্র প্রস্তুত করুন

ডিমেটের জন্য নির্দিষ্ট ডিমেটারিয়ালাইজেশন রিকোয়েস্ট ফর্ম (DRF)

নিজের PAN কার্ডের স্ব-প্রত্যয়িত কপি

মূল শেয়ার সার্টিফিকেট

ঠিকানা পরিবর্তিত হলে নতুন ঠিকানার প্রমাণ (যেমন ভোটার কার্ড/আধার)

দ্বিতীয় ধাপ: অনলাইনে নথিপত্র যাচাইয়ের জন্য জমা দিন

Zerodha প্ল্যাটফর্মে লগইন করে ডকুমেন্ট আপলোড করুন

ডেডিকেটেড টিম যাচাই করে জানাবে যে সব কিছু ঠিক আছে কি না

তৃতীয় ধাপ: মূল নথিপত্র কুরিয়ারে পাঠান

যাচাই হয়ে গেলে Zerodha-র ঠিকানায় আপনার মূল শেয়ার সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজ কুরিয়ারে পাঠান

Advertisements

এরপর Zerodha বাকি কাজ করবে এবং আপনার শেয়ার ডিমেট হয়ে আপনার অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

১. কোন শেয়ার সার্টিফিকেট ডিমেট করা যাবে?

শেয়ারের বর্তমান কোম্পানির নাম ও ফেস ভ্যালু স্পষ্ট থাকতে হবে

শেয়ারহোল্ডারের নাম ডিমেট অ্যাকাউন্টের নামের সঙ্গে মিলে যেতে হবে

যদি যৌথভাবে শেয়ার থাকেন, তবে ডিমেট অ্যাকাউন্টেও সেই অনুক্রম মেনেই অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে

২. খরচ কত পড়বে?

প্রতি শেয়ার সার্টিফিকেটের জন্য ₹১৫০ + ১৮% GST

প্রতি কুরিয়ার অনুরোধের জন্য ₹১০০ + ১৮% GST

এই টাকা Zerodha অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে

৩. কতদিন সময় লাগে?

পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ২৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে

৪. যদি শেয়ার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায়?

প্রথমে কোম্পানির RTA (Registrar & Transfer Agent)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে

নাম পরিবর্তন করে আপনার নামে করে তারপর ডিমেটের জন্য আবেদন করতে হবে

৫. যদি নাম না মেলে?

আপনার নাম ও শেয়ার সার্টিফিকেটে থাকা নাম একই ব্যক্তির তা প্রমাণ করতে নোটারাইজড হলফনামা বা গেজেট বিজ্ঞপ্তি জমা দিতে হবে

বিয়ের পর নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিবাহ সনদের নোটারাইজড কপি লাগবে

ডিমেট করা শুধু আধুনিকতার প্রয়োজনে নয়, এটি এখন বাধ্যতামূলক আইনি প্রক্রিয়া। আপনি যদি পুরনো শেয়ার সার্টিফিকেট পেয়ে থাকেন, তাহলে আজই এটি ডিমেট করে ফেলুন। এটি শুধুমাত্র আপনার সম্পদ সুরক্ষিত রাখবে না, বরং ভবিষ্যতে সহজেই শেয়ার লেনদেন, উত্তরাধিকার হস্তান্তর ও পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করবে।

সতর্ক থাকুন, সুযোগ নিন—পুরোনো কাগজে লেখা শেয়ার হতে পারে আপনার আগামী দিনের সম্পদের চাবিকাঠি!