রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সম্প্রতি একটি নতুন প্রস্তাবনা ঘোষণা করেছে, যার ফলে ফ্লোটিং রেট লোনের ঋণগ্রহীতারা আর ঋণের ফোরক্লোজার চার্জ বা প্রি-পেমেন্ট পেনালটি দিতে হবে না। এই প্রস্তাবটি “রেসপন্সিবল লেন্ডিং কন্ডাক্ট – লেভি অব ফোরক্লোজার চার্জেস/ প্রি-পেমেন্ট পেনালটিস অন লোনস” শিরোনামে একটি ড্রাফট সার্কুলারের মাধ্যমে এসেছে।
এই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, ব্যক্তি ঋণগ্রহীতারা এবং মাইক্রো ও স্মল এন্টারপ্রাইজ (MSE) যারা ব্যবসার জন্য ৭.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়েছেন, তারা এখন কোনো পেনালটি ছাড়া ঋণ ফেরত দিতে বা ফোরক্লোজ করতে পারবেন। এছাড়া, ফ্লোটিং রেট লোনের জন্য কোনো মিনিমাম লক-ইন পিরিয়ডও থাকবে না। এই পদক্ষেপটি আরবিআই এর প্রাথমিক লক্ষ্য হলো ঋণগ্রহীতাদের জন্য একটি বেশি নমনীয় ও স্বচ্ছ ঋণ পরিশোধ ব্যবস্থা তৈরি করা।
এই প্রস্তাবনা সবার জন্য খোলামেলা হবে, তবে কিছু বিশেষ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই প্রস্তাবের আওতায় আসবে না। প্রস্তাবটি সব স্কেডিউলড কমার্শিয়াল ব্যাংক, লোকাল এরিয়া ব্যাংক, কো-অপারেটিভ ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি (NBFC), হাউজিং ফাইন্যান্স কোম্পানি (HFC) এবং অল ইন্ডিয়া ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (AIFI) এর জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে, টিয়ার-১ এবং টিয়ার-২ আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক বা বেস-লেয়ার NBFC-এ এই প্রস্তাব প্রযোজ্য হবে না। আরবিআই এ বিষয়ে সকল স্টেকহোল্ডারের মতামত গ্রহণের জন্য ২১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত সময় দিয়েছে।
ফ্লোটিং রেট লোনের ইন্টারেস্ট রেট বাজারের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ, এই রেটটি RBI-এর রেপো রেট বা MCLR এর ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে, ঋণগ্রহীতা বাজারের সুদের হার কম হওয়ার আশায় এই ধরনের ঋণ নেন, কারণ এটি তাদের মাসিক EMI কমিয়ে দেয়। তবে, সুদের হার বেড়ে গেলে তাদের EMI বাড়তেও পারে।
এদিকে, স্থির সুদের হারের ঋণে ঋণগ্রহীতা পুরো মেয়াদে একই হার পাবেন, যা তাদের EMI-কে স্থিতিশীল রাখবে। তবে, এই ধরনের ঋণ সাধারণত ফ্লোটিং রেটের চেয়ে ১.৫% থেকে ২% বেশি সুদ দিতে হয়। অর্থাৎ, সুদের হার কমলেও ঋণগ্রহীতা উপকৃত হতে পারেন না, এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের ঋণের পরিমাণও বেশি হয়ে যায়।
RBI-এর এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ফ্লোটিং রেট লোনের ঋণগ্রহীতা ও মাইক্রো-স্মল এন্টারপ্রাইজগুলি সুবিধা পাবেন, কারণ তারা এখন কোনো ফোরক্লোজার চার্জ ছাড়াই ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। এর ফলে ঋণগ্রহীতারা ঋণ চূড়ান্ত করার জন্য বেশি স্বাধীনতা পাবেন এবং তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন। এতে করে প্রতিযোগিতাও বাড়বে এবং তারা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলির কাছ থেকে সেরা সুদ হার পেতে পারবেন।
অন্যদিকে, ঋণদাতাদের জন্য এই প্রস্তাব একটি বড় পরিবর্তন হতে পারে। বর্তমানে ব্যাংক এবং NBFC-গুলি এই ফোরক্লোজার চার্জ বা প্রি-পেমেন্ট পেনালটির মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট আয় অর্জন করে। কিন্তু এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে, তাদের আয়ের পরিমাণে কিছুটা হ্রাস হতে পারে। তবে, বড় ব্যাংকগুলির জন্য তেমন কোনো বড় প্রভাব পড়বে না, কারণ তারা ইতোমধ্যে MSE ঋণগ্রহীতাদের জন্য কোনো ফোরক্লোজার পেনালটি রাখে না।
এই পরিবর্তনটি ঋণদাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে তুলবে, কারণ ঋণগ্রহীতা এখন সস্তা সুদের হার এবং সুবিধাজনক শর্তে ঋণ নিতে আগ্রহী হবে। এর ফলে, ব্যাংক এবং অন্যান্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের প্রস্তাবনাগুলি আরও আকর্ষণীয় এবং নমনীয় করার চেষ্টা করবে।
RBI-এর এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ফ্লোটিং রেট লোনের জন্য ঋণগ্রহীতাদের আরও সুবিধা পাওয়া যাবে, এবং এটি ভারতের আর্থিক পরিবেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। তবে, ঋণদাতাদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে, তবে তারা এই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিয়ে আরও উন্নত ও প্রতিযোগিতামূলক শর্তে ঋণ প্রদান করতে সক্ষম হবে।