বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং বাজারের ওঠানামার মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মনে নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার প্রয়োজন আগের থেকে অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ফিক্সড ডিপোজিট বা এফডি (Fixed Deposits) আবারও এক প্রিয় বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবে সামনে এসেছে। বিশেষ করে, যেসব বিনিয়োগকারী নিশ্চিত রিটার্ন খুঁজছেন এবং ঝুঁকি নিতে নারাজ, তাঁদের কাছে এফডি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অবলম্বন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বর্তমানে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI), এইচডিএফসি ব্যাংক এবং আইসিআইসিআই ব্যাংক জনগণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই ব্যাংকগুলো শুধু মাঝারি হারের সুদই দিচ্ছে না, বরং উন্নত গ্রাহক পরিষেবা, শক্তিশালী ডিজিটাল পরিকাঠামো এবং দেশব্যাপী শাখার বিস্তৃত উপস্থিতির কারণে গ্রাহকদের মনে নিরাপত্তার আস্থা তৈরি করছে।
জুলাই ২০২৫-এ এফডি সুদের হার:
বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন ব্যাংক অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক হারে এফডির সুদ দিচ্ছে। বিশেষ করে, ক্ষুদ্র অর্থ ব্যাংকগুলো (Small Finance Bank) এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
Slice Small Finance Bank সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৮.৫০ শতাংশ সুদের হার দিচ্ছে, যেখানে মেয়াদ ১৮ মাস ১ দিন থেকে ১৮ মাস ২ দিন পর্যন্ত।
Suryoday Small Finance Bank দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যা ৩০ মাসের বেশি এবং ৩ বছরের মধ্যে মেয়াদে ৮.৪০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে।
Utkarsh Small Finance Bank দুই থেকে তিন বছরের মেয়াদে ৮.২৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে।
Jana Small Finance Bank ৫ বছরের জন্য ৮.২০ শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে।
Ujjivan Small Finance Bank দুই বছরের জন্য ৭.৭৫ শতাংশ সুদ ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে, বড় এবং প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে, যেমন SBI, HDFC Bank, এবং ICICI Bank, এরা তুলনামূলকভাবে কম হারে সুদ দিচ্ছে। SBI-এর বিশেষ অমৃত বৃষ্টি স্কিম (Amrit Vrishti Scheme)-এর আওতায় ৬.৬০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাচ্ছে, যার মেয়াদ ৪৪৪ দিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। একইভাবে, HDFC এবং ICICI ব্যাংকও বিভিন্ন মেয়াদে ৬.৬০ শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে। তবে এই হারগুলো প্রায়ই পরিবর্তিত হয়, তাই বিনিয়োগের আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছ থেকে হালনাগাদ তথ্য জেনে নেওয়া উচিত।
বেশি সুদ বনাম স্থিতিশীলতা: কোনটি বেছে নেবেন?
যদিও ক্ষুদ্র অর্থ ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সুদ দিচ্ছে, যেমন ৮.৫০ শতাংশ পর্যন্ত, কিন্তু এগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ এই ব্যাংকগুলো অপেক্ষাকৃত নতুন এবং মূলধনের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন থেকেই যায়।
অন্যদিকে, SBI, HDFC, ICICI এর মতো বড় ব্যাংকগুলো বহু বছরের অভিজ্ঞতা, বৃহত্তর মূলধন এবং সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকির কারণে গ্রাহকদের মধ্যে এক অটুট আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এদের সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও, স্থিতিশীলতা এবং মূলধনের নিরাপত্তার দিক থেকে এগুলো অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা ঝুঁকি নিতে চান না এবং দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিত আয়ের উৎস খুঁজছেন, তাঁদের জন্য বড় ব্যাংকের এফডি সঠিক বিকল্প। অন্যদিকে, যাঁরা কিছুটা ঝুঁকি নিতে রাজি এবং বেশি রিটার্নের আশা করেন, তাঁদের জন্য ক্ষুদ্র অর্থ ব্যাংকের এফডি আকর্ষণীয় হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (DICGC)-এর আওতায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্তই নিরাপদ থাকে, তা মনে রাখা জরুরি।
ডিজিটাল পরিষেবা এবং গ্রাহক সহায়তা:
বর্তমানে প্রায় সব ব্যাংকই অনলাইন এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে, যার মাধ্যমে বাড়িতে বসেই এফডি খোলা, নবায়ন, এবং ক্লোজ করার সুবিধা পাওয়া যায়। SBI, HDFC এবং ICICI ব্যাংক ডিজিটাল পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এর ফলে, গ্রাহকরা সহজে তাদের বিনিয়োগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন।
বিনিয়োগের আগে কী বিবেচনা করবেন?
সুদের হার: শুধুমাত্র উচ্চ সুদের হার দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত না নিয়ে, ব্যাংকের স্থিতিশীলতা ও রেটিং বিবেচনা করা উচিত।
মেয়াদ: আপনার আর্থিক লক্ষ্য অনুযায়ী সঠিক মেয়াদ নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
পুনর্নবীকরণ এবং প্রিম্যাচিউর ব্রেক: অনেক সময় জরুরি প্রয়োজনে এফডি ভাঙতে হতে পারে। তখন প্রিম্যাচিউর পেনাল্টি কত, তা আগে জেনে রাখা উচিত।
কর: এফডির সুদ আয় করযোগ্য, তাই করের হিসাবও মাথায় রাখতে হবে।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে এফডি একটি নিরাপদ বিনিয়োগের উপায় হিসেবে থেকে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র অর্থ ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদের প্রলোভন থাকলেও, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য বড় ব্যাংকগুলোর ওপরই অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ভরসা রাখছেন। সঠিক তথ্য নিয়ে এবং আর্থিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক এফডি বেছে নিলে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুদৃঢ় সঞ্চয় নিশ্চিত করা সম্ভব।