প্রথমবার মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ? জেনে নিন বেছে নেওয়ার ৭টি ধাপ

বর্তমানে টেলিভিশন, স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায়শই শোনা যায় একটি পরিচিত স্লোগান— “মিউচুয়াল ফান্ডস (Mutual Funds) সঠিক আছে!” এই প্রচারণা মূলত সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগে উৎসাহিত…

Best mutual fund strategy

বর্তমানে টেলিভিশন, স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায়শই শোনা যায় একটি পরিচিত স্লোগান— “মিউচুয়াল ফান্ডস (Mutual Funds) সঠিক আছে!” এই প্রচারণা মূলত সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য চালানো হচ্ছে, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা সরাসরি শেয়ার বাজারে ঝুঁকি নিতে ভয় পান অথবা যাদের বিনিয়োগে পেশাদারদের সহায়তা দরকার।

Mutual Fundsমিউচুয়াল ফান্ড এমন একটি বিনিয়োগের মাধ্যম, যেখানে একাধিক বিনিয়োগকারীর অর্থ একত্র করে একটি ফান্ড তৈরি করা হয় এবং সেই ফান্ড থেকে পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার বিভিন্ন সিকিউরিটিজে—যেমন শেয়ার, বন্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করেন। এতে বিনিয়োগের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায় এবং বিনিয়োগগুলি অধিকতর বৈচিত্রময় ও সুরক্ষিত হয়।

   

মিউচুয়াল ফান্ডের ধরন
মিউচুয়াল ফান্ড প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে—
১. ইকুইটি ফান্ড
২. ডেব্ট ফান্ড
৩. হাইব্রিড ফান্ড

ইকুইটি ফান্ড মূলত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে। দীর্ঘমেয়াদী মূলধন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে এগুলি পরিচালিত হয় এবং ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি হলেও রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

ডেব্ট ফান্ড হলো এমন একটি বিনিয়োগ মাধ্যম, যেখানে অর্থ মূলত সরকারি বন্ড, কর্পোরেট ডেবেন্টার, ট্রেজারি বিল ইত্যাদি স্থির আয় সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়। ঝুঁকি কম এবং স্থিতিশীল রিটার্নের আশা থাকে।

হাইব্রিড ফান্ড হলো মিশ্র বিনিয়োগের একটি ধরন, যেখানে একই ফান্ডে ইকুইটি ও ডেব্ট উভয়ই থাকে। এটি ঝুঁকি ও লাভের মাঝে একটি ভারসাম্য রক্ষা করে।

কীভাবে সেরা মিউচুয়াল ফান্ড নির্বাচন করবেন?
সঠিক মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নেওয়ার জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করা জরুরি—

১. আপনার আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
প্রথমেই বুঝে নিন আপনি কেন বিনিয়োগ করতে চান—বৃদ্ধবয়সের সঞ্চয়, সন্তানের পড়াশোনা, বিবাহ, বা ভবিষ্যতের সম্পত্তি ক্রয় ইত্যাদি। লক্ষ্য অনুযায়ীই নির্ধারিত হবে কোন ফান্ডটি আপনার জন্য উপযুক্ত।

২. ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা (Risk Profile)
ইকুইটি ফান্ডে ঝুঁকি বেশি, কিন্তু সম্ভাব্য লাভও বেশি। অন্যদিকে ডেব্ট ফান্ডে ঝুঁকি কম, কিন্তু লাভও সীমিত। আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, তা বুঝে বিনিয়োগ করুন।

Advertisements

৩. বিনিয়োগের সময়সীমা (Investment Horizon)
আপনি কতদিন বিনিয়োগে থাকতে চান, তা নির্ধারণ করুন। সাধারণত পাঁচ বছরের বেশি সময়ের জন্য ইকুইটি ফান্ড ভালো, আর স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যের জন্য ডেব্ট ফান্ড বেশি উপযোগী।

৪. ফান্ড পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ
অতীতে কোনো ফান্ড কেমন পারফর্ম করেছে তা বিশ্লেষণ করুন। যদিও অতীতের সাফল্য ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয় না, তবে ধারাবাহিক ভালো রিটার্ন বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস জোগায়।

৫. খরচ বিশ্লেষণ (Expense Ratio)
প্রতিটি ফান্ডে একটি খরচ থাকে—যাকে এক্সপেন্স রেশিও বলা হয়। কম খরচের ফান্ড বেছে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদে রিটার্ন বাড়াতে সাহায্য করে।

৬. ট্যাক্সেশন জেনে নিন
ভারতের কর ব্যবস্থায়, এক বছরের বেশি সময় ইকুইটি ফান্ডে রাখা হলে ১.২৫ লক্ষ টাকার বেশি লাভে ১২.৫% হারে কর দিতে হয়। আর এক বছরের কম সময় থাকলে তা ২০% করের আওতায় পড়ে। ডেব্ট ফান্ডে কর আপনার আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী ধার্য হয়।

৭. লাম্প সাম না কি SIP?
মিউচুয়াল ফান্ডে দুইভাবে বিনিয়োগ করা যায়—লাম্প সাম (এককালীন) বা SIP (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান)। SIP-এ আপনি প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেন। মাত্র ₹১০০ থেকেও SIP শুরু করা যায়। এতে রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং এবং কম্পাউন্ডিংয়ের সুবিধা পাওয়া যায়।

৮. ফান্ড ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ
যতটা সম্ভব ফান্ড ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। একজন অভিজ্ঞ ম্যানেজার আপনার বিনিয়োগ সঠিক পথে পরিচালনা করতে সাহায্য করবেন।
মিউচুয়াল ফান্ড একটি সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত বিনিয়োগ পদ্ধতি। আজকের দিনে যখন বাজারের অস্থিরতা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, তখন একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য মিউচুয়াল ফান্ড একটি নিরাপদ ও ফলদায়ক পথ হতে পারে। তবে বিনিয়োগ শুরু করার আগে লক্ষ্য স্থির করা, ঝুঁকি বিশ্লেষণ, খরচ ও ট্যাক্সেশন জানা, এবং একজন অভিজ্ঞ পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্মরণে রাখুন— “মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ বাজার ঝুঁকির আওতাভুক্ত। বিনিয়োগ করার আগে সমস্ত স্কিম সংক্রান্ত তথ্য ভালোভাবে পড়ুন।”
বিনিয়োগ শুরু করুন সচেতনতার সঙ্গে, আর গড়ে তুলুন একটি সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ।