ভারতে আয়কর রিটার্ন Income Tax Return) অনলাইনে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া এখন অনেক দ্রুত ও সহজ হয়ে উঠেছে। তবুও, অনেক প্রথমবারের করদাতার কাছে এটি এখনও ভীতিকর মনে হয়। সঠিক নিয়ম জানলে ও প্রয়োজনীয় নথি আগে থেকে প্রস্তুত রাখলে এই প্রক্রিয়া ঝামেলামুক্ত ও সময়সাশ্রয়ী হতে পারে। এবার আমরা ধাপে ধাপে দেখে নেব—কাদের রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক, কোন ফর্মটি আপনার জন্য প্রযোজ্য, কোন কোন নথি লাগবে এবং সময়সীমা কতটা মেনে চলতে হবে।
১. কারা ITR দাখিল করবেন?
আপনার বার্ষিক আয় যদি করযোগ্য সীমা অতিক্রম করে, তবে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট আর্থিক শর্ত থাকলেও রিটার্ন দাখিল করতে হবে—
ভারতে বা বিদেশে সম্পত্তি/সম্পদ থাকলে, সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে একসঙ্গে বার্ষিক আমানত ৫০ লক্ষ টাকার বেশি হলে, সেভিংস বা কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ₹১ কোটির বেশি ব্যালান্স থাকলে, বছরে ১ লক্ষ টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল দিলে, বছরে ২ লক্ষ টাকার বেশি বিদেশ ভ্রমণে খরচ করলে, শেয়ারবাজার, মিউচুয়াল ফান্ড, ESOP-এ বিনিয়োগ করলে, বছরে বিক্রয় (সেলস) ৬০ লক্ষ টাকার বেশি হলে।
২. করযোগ্য আয় কিভাবে হিসাব হবে:
করযোগ্য আয় (Taxable Income) হচ্ছে আপনার মোট আয়—যেমন বেতন, সুদের আয় (FD), শেয়ার বা অন্যান্য উৎস—থেকে আয়কর আইনের অধীনে অনুমোদিত ছাড় (deductions) বাদ দেওয়ার পরের পরিমাণ।
প্রধান ছাড়ের মধ্যে রয়েছে—
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF), ন্যাশনাল পেনশন স্কিম (NPS), জীবনবিমা প্রিমিয়াম, গৃহঋণের সুদ, ভাড়া বাবদ ছাড়।
৩. পুরনো বনাম নতুন কর ব্যবস্থা:
ভারতে বর্তমানে দুটি কর ব্যবস্থা চালু—পুরনো (Old Regime) ও নতুন (New Regime)।
পুরনো কর ব্যবস্থা: বেশি করের হার, তবে নানা ধরনের ছাড় ও অব্যাহতি পাওয়া যায়।
নতুন কর ব্যবস্থা: কম করের হার, তবে বেশিরভাগ ছাড়-অব্যাহতি নেই।
কোনটি বেছে নেবেন, তা নির্ভর করবে আপনার আয় ও আপনি কত ছাড় দাবি করতে পারবেন তার উপর। অনলাইনে ট্যাক্স ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের (CA) পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো।
৪. রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ (FY 2024-25, AY 2025-26)
জরিমানা ছাড়া রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিলম্বিত রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ (এই ক্ষেত্রে জরিমানা ১,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, আয়ের পরিমাণ ও বিলম্বের উপর নির্ভর করে)
৫. কোন কোন নথি লাগবে:
রিটার্ন দাখিলের আগে নিচের নথি গুলি প্রস্তুত রাখুন—
ফর্ম ১৬ (Form 16) – নিয়োগকর্তার দেওয়া TDS সার্টিফিকেট, প্যান (PAN), আধার কার্ড (প্যানের সাথে লিঙ্ক করা), বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, গৃহঋণের, সুদের সনদপত্র, বিমা প্রিমিয়ামের রসিদ।
৬. ফর্ম ১৬ কী?
ফর্ম ১৬ হল আপনার নিয়োগকর্তার দেওয়া একটি TDS সার্টিফিকেট, যেখানে বেতন, ছাড়, অব্যাহতি ও কেটে রাখা করের বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। এটি ITR দাখিলের জন্য অন্যতম জরুরি নথি।
৭. ফর্ম ২৬এএস (Form 26AS):
এটি আয়ের একটি সারাংশ, যেখানে আপনার আয়ের উপর কত কর কাটা হয়েছে তার তথ্য থাকে। এটি দেখে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে TDS-এর টাকা সঠিকভাবে জমা হয়েছে।
৮. বার্ষিক তথ্য বিবৃতি (AIS):
AIS-এ আপনার সুদের আয়, লভ্যাংশ, শেয়ার বা সিকিউরিটিজ লেনদেনের তথ্যসহ বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনের তালিকা থাকে। বর্তমানে ITR ফর্মে এর অনেক তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যায়।
৯. ই-ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক:
ITR জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ই-ভেরিফিকেশন করা বাধ্যতামূলক।
ই-ভেরিফিকেশন না করলে আপনার রিটার্ন বাতিল হতে পারে এবং ফেরত (Refund) পেতে দেরি হবে।
ভেরিফিকেশন করার পদ্ধতি—
আধার OTP, নেট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক ভেরিফিকেশন কোড (EVC)।
১০. সঠিক ITR ফর্ম বেছে নেওয়া:
ITR-1: বেতন, এক বাড়ি, অন্যান্য উৎস থেকে আয়
ITR-2: ব্যক্তিগত/HUF—যাদের ব্যবসায়িক আয় নেই
ITR-3: ব্যক্তিগত/HUF—যাদের ব্যবসা বা পেশাগত আয় আছে
ITR-4: ব্যবসা বা পেশা থেকে অনুমানভিত্তিক আয় (Presumptive Income)
প্রথমবার রিটার্ন দাখিল করতে গেলে নিয়ম জানা, সঠিক নথি প্রস্তুত রাখা এবং সঠিক ITR ফর্ম বেছে নেওয়া খুব জরুরি। সঠিক প্রস্তুতি নিলে পুরো প্রক্রিয়াটি দ্রুত, সহজ ও জরিমানামুক্ত হবে। অনলাইনে e-filing পোর্টাল ব্যবহার করে ঘরে বসেই এটি সম্পন্ন করা যায়, যা করদাতাদের জন্য সময় ও পরিশ্রম দুই-ই বাঁচায়।