ভারতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (RBI)। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত সর্বশেষ ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন ইনডেক্স (FI-Index) অনুযায়ী, দেশের সার্বিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মান ৬৭.০-তে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের মার্চে ছিল ৬৪.২। অর্থাৎ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ২.৮ পয়েন্টের উন্নতি ঘটেছে।
এই সূচকটি দেশের নাগরিকদের আর্থিক পরিষেবার নাগাল, সেগুলোর ব্যবহার এবং পরিষেবার মান – এই তিনটি দিক বিবেচনায় নিয়ে তৈরি হয়। RBI জানিয়েছে, এই অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি ছিল “ব্যবহার” (Usage) এবং “গুণমান” (Quality)– এই দুটি উপ-সূচকে উন্নতি।
কী এই FI-Index?
FI-Index প্রথম চালু হয় ২০২১ সালের আগস্ট মাসে, যার ভিত্তি বছর ছিল ২০২০-২১। RBI এই সূচকটি তৈরি করেছে সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহায়তায়, যাতে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সামগ্রিক চিত্র একটি সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
FI-Index-এর মান ০ থেকে ১০০-এর মধ্যে হয়। যেখানে ০ মানে হল সম্পূর্ণ আর্থিক বঞ্চনা, আর ১০০ মানে সম্পূর্ণ অন্তর্ভুক্তি। সূচকের তিনটি
মূল উপাদান হল:
Access (৩৫%) – আর্থিক পরিষেবার নাগাল
Usage (৪৫%) – পরিষেবার ব্যবহার
Quality (২০%) – পরিষেবার মান ও গ্রহণযোগ্যতা
এই সূচক ৯৭টি পৃথক নির্দেশকের ভিত্তিতে তৈরি, যার মধ্যে রয়েছে ব্যাঙ্কিং, বিমা, পেনশন, বিনিয়োগ ও ডাক পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য।
২০২৫-এর উন্নতির পেছনের কারণ:
২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত যেটুকু অগ্রগতি হয়েছে, তার মূল কারণ হিসাবে RBI Usage ও Quality উপ-সূচকের উন্নতির কথা বলেছে। অর্থাৎ, শুধু আরও বেশি মানুষ আর্থিক পরিষেবার নাগালেই আসেননি, বরং তাঁরা তা আরও সচেতনভাবে এবং কার্যকরভাবে ব্যবহারও করছেন। পাশাপাশি পরিষেবার গুণগত মানও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে।
Usage সূচকটি নির্দেশ করে যে মানুষ কতবার এবং কীভাবে ব্যাঙ্কিং বা অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা ব্যবহার করছেন। যেমন – ডিজিটাল পেমেন্ট, লোন গ্রহণ, বিমা বা পেনশন অ্যাকাউন্ট খোলা ইত্যাদি।
Quality সূচকটি মাপে আর্থিক শিক্ষা, গ্রাহক সুরক্ষা, পরিষেবার সমতা এবং ত্রুটির হার ইত্যাদি বিষয়। এর মানে, এখন মানুষ শুধু পরিষেবা পাচ্ছেন না, তারা তা ভালোভাবে বুঝে ও সচেতনভাবে গ্রহণ করছেন।
পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও নীতিগত সহায়তা:
গত কয়েক বছরে ভারত সরকারের জন ধন যোজনা, ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ই-রুপি, ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT), এবং বিভিন্ন স্কিমে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগগুলো আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া, ডিজিটাল লেনদেনের পরিকাঠামো যেমন UPI, AePS ইত্যাদি ব্যবহারে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
RBI নিজেও ব্যাঙ্কিং অ্যাক্সেস পয়েন্ট বাড়ানো, গ্রামীণ ও দূরবর্তী এলাকায় ব্যাঙ্কিং সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ, এবং আর্থিক শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে নানা কার্যক্রম নিয়েছে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ভবিষ্যৎ:
FI-Index-এর ধারাবাহিক উন্নতি প্রমাণ করে যে ভারত ধীরে ধীরে কিন্তু স্থিতিশীলভাবে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির দিকে এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে Usage এবং Quality দিকদুটির উন্নতি এটাই দেখায় যে শুধু সংখ্যায় নয়, মানের দিক থেকেও দেশের আর্থিক কাঠামো আরও সমৃদ্ধ ও গণমুখী হচ্ছে।
আরবিআই-এর মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরে FI-Index আরও উপরের দিকে যাবে এবং ৭০-এর গণ্ডি অতিক্রম করবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন আরও বেশি করে আর্থিক শিক্ষা, ডিজিটাল দক্ষতা এবং গ্রাহক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা।
ভারতের ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন ইনডেক্সে এই সাম্প্রতিক অগ্রগতি শুধুই একটি পরিসংখ্যান নয়; এটি দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির একটি শক্তিশালী চিত্র তুলে ধরে। আরও মানুষ যখন আর্থিক ব্যবস্থার আওতায় আসছেন, তখন তা শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে।
যতদিন আর্থিক পরিষেবার মান, নাগাল এবং ব্যবহারযোগ্যতা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ চলবে – সরকার, RBI ও অন্যান্য অংশীদারদের মিলিত প্রয়াসে – ততই ভারত আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি মডেল হয়ে উঠবে বিশ্বের কাছে।