বাংলার তাঁতশিল্পে নবজাগরণ ঘটাতে শান্তিপুর–ফুলিয়ায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা

Union Finance Minister to visit Santipur and Phulia in December to meet Bengal’s handloom weavers and discuss financial aid, design innovation, and market expansion.

কলকাতা, ৩ নভেম্বরঃ পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প, যা একসময় রাজ্যের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির মেরুদণ্ড ছিল, আজ নানা সংকটে জর্জরিত। বাজারে প্রতিযোগিতা, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, আধুনিক যন্ত্রের আগ্রাসন এবং পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তার অভাব—সব মিলিয়ে হাজারো তাঁতির জীবন আজ অনিশ্চয়তায় ভরা। তবে এই অবস্থার পরিবর্তন আনতেই কেন্দ্র সরকার এবার সরাসরি পদক্ষেপ নিতে চলেছে।

Advertisements

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী আগামী ডিসেম্বর মাসে নদীয়া জেলার শান্তিপুর ও ফুলিয়া সফরে আসছেন, যেখানে তিনি স্থানীয় তাঁতিদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করবেন। এই সফরে তিনি শুধু প্রতীকী উপস্থিতি রাখবেন না, বরং তাঁতশিল্পের পুনর্জাগরণে কীভাবে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে বিশদ আলোচনাও করবেন।

   

🪡 তাঁতশিল্প: এক ঐতিহ্য, এখন সংকটে

বাংলার তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য কয়েক শতাব্দী পুরনো। শান্তিপুর, ফুলিয়া, বেলুড়, মুর্শিদাবাদ—এসব অঞ্চলে আজও হাজারো পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। একসময় ভারতের পাশাপাশি বিদেশেও “শান্তিপুরী তাঁতের শাড়ি” ও “ফুলিয়া জামদানি” ছিল সমাদৃত।

কিন্তু গত এক দশকে পরিস্থিতি বদলে গেছে। তাঁতিরা বলছেন, কাঁচামালের দাম বাড়লেও তাঁদের বিক্রয়মূল্য একই থেকে গেছে। ডিজাইনে নতুনত্ব আনতে না পারা, অনলাইন বিপণনে পিছিয়ে থাকা এবং সরকারি সহায়তার অভাব এই শিল্পকে ধীরে ধীরে পঙ্গু করে তুলছে।

💬 অর্থমন্ত্রীর সফরে কী কী হতে পারে

সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী এই সফরে বেশ কয়েকটি মূল লক্ষ্য নিয়ে আসছেন—

  1. তাঁতিদের সরাসরি কথা শোনা:

    স্থানীয় তাঁতিদের অভিজ্ঞতা, সমস্যা ও প্রস্তাব শোনার জন্য তিনি সরাসরি সংলাপে অংশ নেবেন।

  2. আর্থিক সহায়তা ও নতুন প্যাকেজ:

    কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের সহযোগিতায় তাঁতশিল্পে ঋণ ও ভর্তুকি সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।

  3. ডিজাইন ও মার্কেটিং সংযোগ:

    তাঁত পণ্যের ডিজাইন, ব্র্যান্ডিং ও আন্তর্জাতিক বিপণনের জন্য কেন্দ্রীয় শিল্প সংস্থা ও ফ্যাশন ইনস্টিটিউটগুলোর সঙ্গে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।

  4. ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু:

    তাঁতিদের তৈরি পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে ‘India Handloom Connect’ নামে একটি ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস চালু করার বিষয়টিও আলোচনায় আছে।

🧶 স্থানীয় তাঁতিদের প্রতিক্রিয়া

শান্তিপুরের প্রবীণ তাঁতি হরিপদ দাস বলেন,

Advertisements

“আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁত বুনছি, কিন্তু এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা এই কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। সরকার যদি আবার বাজার তৈরি করে দেয়, তাহলে তাঁতশিল্পে নতুন প্রজন্ম ফিরবে।”

ফুলিয়ার তাঁতি সংগঠনের সভাপতি জানান,

“কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সফর আমাদের কাছে আশা জাগাচ্ছে। আমরা চাই এই শিল্পে শুধু আর্থিক নয়, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ডিজাইন উন্নয়নও হোক।”

🏛️ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গে আগামী বছর পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রের এই উদ্যোগ রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

তাঁতশিল্পের মতো প্রথাগত ও সাংস্কৃতিকভাবে গভীরভাবে যুক্ত একটি খাতের পুনরুজ্জীবন কেন্দ্র সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’‘লোকাল ফর ভোকাল’ নীতির সঙ্গেও সরাসরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বাংলার তাঁতশিল্প আজ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। যদি কেন্দ্রীয় উদ্যোগ সত্যিই বাস্তব রূপ পায়, তবে শান্তিপুর–ফুলিয়া শুধু তাঁতির গ্রাম হিসেবেই নয়, বরং ভারতের ঐতিহ্যবাহী হ্যান্ডলুম শিল্পের নতুন পুনর্জন্মের কেন্দ্র হতে পারে।

অর্থমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন হাজারো তাঁতি পরিবার—যাদের হাতে এখনও বোনা হয় বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সূক্ষ্মতম সুতোগুলি।