গান্ধীনগরের গিফট সিটিতে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস সেন্টার (GIFT IFSC)–কে আগামী দুই দশকে ভারতের উচ্চ প্রবৃদ্ধিসম্পন্ন বিভিন্ন খাতে বৈদেশিক মূলধনের প্রবাহের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে গড়ে তোলার ওপর জোর দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
সম্প্রতি গিফট সিটিতে IFSC সফরকালে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে বলেন, “গিফট IFSC-কে শুধু একটি আর্থিক হাব নয়, বরং একটি গতিশীল স্মার্ট সিটি হিসেবেও গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেখানে আধুনিক এবং টেকসই জীবনযাত্রার অবকাঠামো থাকবে।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, এই বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা না থাকলে দেশি ও বিদেশি শীর্ষস্থানীয় প্রতিভা আকর্ষণ করা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এখনই প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের ওপরও গুরুত্ব দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের এমন কাঠামো তৈরি করতে হবে যা ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’–এর লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
বৈশ্বিক পুঁজির জন্য কাঠামোগত ও নিয়ন্ত্রিত পথ দরকার:
GIFT IFSC–এর মূল ম্যান্ডেটের কথা পুনরুল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী জানান, বৈদেশিক মূলধনকে ভারতীয় অর্থনীতিতে নিয়ে আসার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট, গঠনমূলক এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ তৈরি করাই এই কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, “বিদেশি পুঁজির জন্য GIFT IFSC-কে এমন একটি প্ল্যাটফর্মে পরিণত করতে হবে যেখানে বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করতে পারেন।”
রেগুলেটরদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ:
অর্থমন্ত্রী ভারতীয় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রকদের প্রতি আহ্বান জানান যে, তারা যেন GIFT IFSC–এর ভবিষ্যৎমুখী প্রয়োজনগুলি চিহ্নিত করেন এবং সেই অনুযায়ী কার্যকর উদ্যোগ নেন। তিনি বলেন, “GIFT IFSC–এর বৃদ্ধির জন্য কেবল নীতিগত সহায়তাই যথেষ্ট নয়, বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকেও একই সঙ্গে গতিশীল হতে হবে।”
প্রযুক্তি এবং অভ্যন্তরীণ বাজার: ভারতের দুই বড় সম্পদ:
অর্থমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ভারতের দুটি বড় সম্পদ হল—উন্নত প্রযুক্তি খাত এবং বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার। এই দুটি ক্ষেত্রকে কাজে লাগিয়ে GIFT IFSC কে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতার যোগ্য করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, “আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা যত বড় হবে, বিদেশি মূলধনের আকর্ষণও তত বাড়বে। সেই জন্য আমাদের উচিত, দেশের অর্থনৈতিক প্রয়োজনে এই হাবকে আরও কার্যকরভাবে যুক্ত করা।”
স্বর্ণ আমদানিতে ভারতের অগ্রগণ্য অবস্থান এবং IIBX:
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সোনার আমদানিকারক দেশ হওয়ায় ভারতের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণ বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান নির্মলা সীতারামন। তিনি বলেন, “India International Bullion Exchange (IIBX)–এর কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করতে হবে, যাতে আরও বেশি সংখ্যক স্টেকহোল্ডার এতে অংশগ্রহণ করেন।”
তিনি আরও বলেন, “স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে GIFT IFSC–কে একটি বিশ্বমানের কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। IIBX–কে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ প্রাইস ডিসকভারি মেকানিজম তৈরি হলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্যও এটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।”
শিল্প নেতাদের সঙ্গে আলোচনা:
গিফট সিটিতে সফরকালে অর্থমন্ত্রী ব্যাঙ্ক, বিমা, পুঁজি বাজার, ফান্ড ম্যানেজমেন্ট, আর্থিক পরিষেবা, পেমেন্ট গেটওয়ে, এয়ারক্রাফট ও শিপ লিজিং, ফিনটেক, আন্তর্জাতিক ট্রেড ফিনান্স প্ল্যাটফর্ম (ITFS), এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
তিনি বিভিন্ন খাতের এমডি, সিইও, চেয়ারপার্সন, প্রতিষ্ঠাতা এবং সিএফওদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “GIFT IFSC–এর মতো একটি প্রকল্প কেবল সরকারের মাধ্যমে নয়, বরং বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই সফল হতে পারে।”
GIFT City এবং এর IFSC প্ল্যাটফর্মকে ঘিরে যে নতুন ভারতের অর্থনৈতিক স্বপ্ন গঠিত হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে দেশকে আগামী কয়েক দশকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মানচিত্রে আরও সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করবে। নির্মলা সীতারামনের সফর এবং তাঁর মন্তব্যগুলি এই দিকেই ইঙ্গিত দেয় যে, GIFT IFSC–এর ভবিষ্যৎ কেবল একটি আর্থিক কেন্দ্র হিসেবে নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ গ্লোবাল ক্যাপিটাল গেটওয়ে হিসেবেই গড়ে তোলা হবে।
এটি কেবল গুজরাট বা ভারতের নয়—সারা বিশ্বের বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি মেলবন্ধনের এক নতুন ঠিকানা হয়ে উঠতে চলেছে।