নতুন আয়কর বিল (New Income Tax Bill) ২০২৫ সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে আলোচনার জন্য তোলা হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। লোকসভায় ফিনান্স বিল ২০২৫-এর আলোচনার জবাবে সীতারমন বলেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সংসদে উত্থাপিত এই নতুন আয়কর বিল (New Income Tax Bill) বর্তমানে নির্বাচিত কমিটির (সিলেক্ট কমিটি) পর্যালোচনার অধীনে রয়েছে।
নির্বাচিত কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা পরবর্তী সংসদীয় অধিবেশনের প্রথম দিনে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। সীতারমন বলেন, “আমরা এই নতুন আয়কর বিলটি (New Income Tax Bill) বর্ষাকালীন অধিবেশনে আলোচনার জন্য তুলব।” সাধারণত সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন জুলাই মাসে শুরু হয় এবং আগস্ট পর্যন্ত চলে।
নতুন আয়কর বিলের (New Income Tax Bill) বিশেষত্ব:
আয়কর বিভাগের মতে, এই সরলীকৃত আয়কর বিল ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের তুলনায় অর্ধেক আকারের। এটির মূল লক্ষ্য হলো মামলা-মোকদ্দমার সুযোগ কমিয়ে এবং নতুন ব্যাখ্যার পরিধি সীমিত করে কর নিশ্চয়তা অর্জন করা।
নতুন বিলে শব্দ সংখ্যা ২.৬ লক্ষ, যা বর্তমান আইনে থাকা ৫.১২ লক্ষের তুলনায় অনেক কম। এছাড়া, এতে কার্যকর ধারার সংখ্যা ৫৩৬, যেখানে বিদ্যমান আইনে এটি ৮১৯। অধ্যায়ের সংখ্যাও অর্ধেক করে ২৩-এ নামিয়ে আনা হয়েছে, যা আগে ছিল ৪৭।
নতুন আয়কর বিলে (New Income Tax Bill) ৫৭টি টেবিল রয়েছে, যেখানে বর্তমান আইনে এটি ছিল মাত্র ১৮টি। এছাড়া, ১,২০০টি শর্ত (প্রোভিসো) এবং ৯০০টি ব্যাখ্যা (এক্সপ্লানেশন) বাদ দেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলির মাধ্যমে আয়কর ব্যবস্থাকে আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং বোধগম্য করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কেন এই পরিবর্তন?
১৯৬১ সালের আয়কর আইন দীর্ঘদিন ধরে ভারতের কর ব্যবস্থার মূল কাঠামো হিসেবে কাজ করে এসেছে। তবে, এর জটিলতা এবং বিশাল আকারের কারণে করদাতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি, মামলা-মোকদ্দমা এবং ব্যাখ্যাগত সমস্যা দেখা দিয়েছে। নতুন বিলের মাধ্যমে সরকার এই সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করছে। সরলীকৃত কাঠামোর মাধ্যমে করদাতাদের জন্য নিয়ম বোঝা সহজ হবে এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা বাড়বে।
আয়কর বিভাগের দাবি, এই বিল মামলা-মোকদ্দমার সংখ্যা কমাবে এবং করদাতাদের জন্য নিশ্চিতভাবে কর পরিকল্পনা করা সম্ভব করবে। এটি ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত করদাতাদের জন্য একটি স্বাগত পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী সীতারমন জানিয়েছেন, নতুন আয়কর বিলটি (New Income Tax Bill) বর্তমানে নির্বাচিত কমিটির কাছে রয়েছে। এই কমিটি বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে তার প্রতিবেদন তৈরি করবে। কমিটির প্রতিবেদন পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম দিনে জমা পড়ার পর বর্ষাকালীন অধিবেশনে এটি আলোচনার জন্য উত্থাপিত হবে। জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা বিলটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব করতে পারবেন।
নতুন আয়কর বিল (New Income Tax Bill) কার্যকর হলে এটি ভারতের কর ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন আনবে। সরলীকৃত নিয়মের ফলে করদাতারা তাদের কর পরিশোধের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং স্পষ্টতা পাবেন। মামলা-মোকদ্দমা কমার ফলে আদালতের উপর চাপ হ্রাস পাবে এবং কর প্রশাসনের সময় ও সম্পদ বাঁচবে। ব্যবসায়ীদের জন্যও এটি একটি সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করবে, কারণ জটিল নিয়মের বোঝা কমে যাবে।
তবে, এই বিলের সফলতা নির্ভর করবে এর বাস্তবায়নের উপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরলীকরণের পাশাপাশি করদাতাদের সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া জরুরি। নতুন বিলে টেবিলের সংখ্যা বাড়লেও শর্ত ও ব্যাখ্যা কমানো হয়েছে, যা নিয়মকে আরও বোধগম্য করতে সাহায্য করবে।
১৯৬১ সালের আয়কর আইন গত ছয় দশক ধরে ভারতের কর ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে। তবে, সময়ের সঙ্গে অর্থনীতির পরিবর্তন এবং আধুনিক চাহিদার কারণে এটি জটিল এবং পুরনো হয়ে পড়েছে। নতুন আয়কর বিল ২০২৫ এই পুরনো কাঠামোকে আধুনিকীকরণের প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি সরকারের ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ এবং কর সংস্কারের প্রতিশ্রুতির একটি অংশ।
নির্বাচিত কমিটির প্রতিবেদন জমা পড়ার পর বর্ষাকালীন অধিবেশনে বিলটি আলোচনার জন্য উত্থাপিত হবে। এরপর সংসদে এটি পাস হলে আইন হিসেবে কার্যকর হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। সরকারের লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে এই বিলটি চূড়ান্ত করে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা শুরু করা।
নতুন আয়কর বিল (New Income Tax Bill) ২০২৫ ভারতের কর ব্যবস্থায় একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছে। অর্থমন্ত্রী সীতারমনের ঘোষণা করদাতাদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে যে এটি তাদের জন্য আরও সহজ এবং ন্যায্য ব্যবস্থা নিয়ে আসবে। বর্ষাকালীন অধিবেশনে এই বিলের আলোচনা এবং চূড়ান্ত রূপ দেশের অর্থনীতি ও করদাতাদের জন্য কী পরিবর্তন আনে, সেদিকে সবার নজর থাকবে।