অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বৃহস্পতিবার লোকসভায় নতুন আয়কর বিলটি জমা দিয়েছেন, যা ১৯৬১ সালের আয়কর আইনকে প্রতিস্থাপন করবে। এই নতুন আইনটি ভারতীয় কর ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ এবং সরলীকরণের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯৬১ সালের আয়কর আইনটি ৬০ বছরের পুরোনো এবং বর্তমান সময়ে এটি অনেক জটিল এবং বোঝার ক্ষেত্রে কষ্টকর হয়ে উঠেছে। নতুন আইনটি করদাতাদের জন্য সুবিধাজনক ও সহজবোধ্য করার জন্য এটি প্রবর্তিত হতে যাচ্ছে।
নতুন আয়কর বিলে কী পরিবর্তন আসছে?
নতুন আয়কর বিলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যা ভারতের কর ব্যবস্থাকে আরও সরল এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব করবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, “আমরা আয়কর আইনের ধারা সংখ্যা ৫৩৬ পর্যন্ত কমাচ্ছি।” এর মানে হলো, নতুন আইনে অনেক অপ্রয়োজনীয় ধারা বাতিল করা হবে এবং কর ব্যবস্থাকে আরও সরল করা হবে।
তিনি আরও বলেন, “এই নতুন আইনটি পুরোপুরি আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে, যাতে তা করদাতাদের জন্য সহজবোধ্য এবং আরও কম ঝামেলায় পরিশোধযোগ্য হয়।” অর্থমন্ত্রী আরও জানান যে নতুন আইনে প্রচলিত আইনের তুলনায় ৫০ শতাংশ কম ধারা থাকবে এবং এর ভাষা হবে সহজ, যাতে সাধারণ মানুষও তা বুঝতে পারে এবং প্রয়োজনে কোনো কর পরামর্শকের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন না হয়।
নতুন আয়কর আইনের প্রধান উদ্দেশ্য:
নতুন আয়কর আইনের উদ্দেশ্য হলো ভারতের কর ব্যবস্থাকে সহজ, স্বচ্ছ এবং যথার্থ করে তোলা। এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে:
১. অপ্রয়োজনীয় ধারা বাতিল: বর্তমান আয়কর আইনের অনেক ধারা এবং সংশোধনীগুলি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। নতুন আইনে সেগুলিকে বাদ দেওয়া হবে এবং এই আইনের ধারা সংখ্যা কমিয়ে ৫৩৬ করা হবে।
২. কম জটিলতা: নতুন আইনটি হবে আরও সরল এবং বুঝতে সহজ। করদাতারা যাতে কম সময়ে এবং সহজভাবে তাদের কর পরিশোধ করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার জন্য এটি ডিজাইন করা হয়েছে।
৩. আইনি ভাষার সরলীকরণ: নতুন আইনে আইনি ভাষার জটিলতা কমানো হবে। এর ফলে করদাতারা এটি সহজে বুঝতে পারবেন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ পরামর্শকের সাহায্য ছাড়াই তাঁদের কর বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
৪. কম জরিমানা ও দণ্ড: নতুন আইনে কিছু অপরাধের জন্য কম জরিমানা এবং দণ্ড নির্ধারণ করা হতে পারে। এর ফলে, করদাতারা আরও কম ঝামেলায় কর পরিশোধ করতে পারবেন।
৫. লিটিগেশন কমানো: কর বিষয়ে মামলা মোকদ্দমা কমানোও এই নতুন আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য। এতে করে সাধারণ মানুষের জন্য কর পরিশোধ আরও সহজ হবে এবং রাষ্ট্রীয় স্তরেও প্রশাসনিক চাপ কমবে।
নতুন আয়কর আইনটি করদাতাদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা নিয়ে আসবে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই আইনটি বর্তমান আইন থেকে অনেক ছোট হবে এবং এর ভাষা হবে সহজ। সাধারণ মানুষও এই আইনের প্রাসঙ্গিক ধারাগুলি সহজে বুঝতে পারবেন এবং তাঁদের কর পরিশোধ প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত ও সহজ হবে।
এই আইনের আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো, এটি করদাতাদের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করবে, কারণ এটি অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং জটিলতা মুক্ত হবে। এখনকার আইনে অনেক ধারা রয়েছে যা অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, কিন্তু নতুন আইনে তা সরিয়ে দেওয়া হবে।
নতুন আয়কর আইনটি যদি সংসদে পাস হয়, তবে এটি ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের শুরু থেকেই কার্যকর হবে এবং প্রথমবার এই আইন অনুযায়ী মূল্যায়ন শুরু হবে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে। অর্থাৎ, নতুন আইনের অধীনে করদাতারা তাঁদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন এবং নতুন নিয়ম অনুযায়ী কর পরিশোধ করতে পারবেন।
নতুন আয়কর বিলটি ভারতের কর ব্যবস্থাকে আরও সরল এবং স্বচ্ছ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই আইনটি শুধু করদাতাদের জন্য সুবিধাজনক হবে না, বরং এটি ভারতের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। আশা করা যায়, এই নতুন আইনের মাধ্যমে করদাতারা সহজে এবং স্বচ্ছভাবে তাঁদের কর পরিশোধ করতে পারবেন এবং এতে করে দেশের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষেত্রেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।