ভারত-পাক উত্তেজনায় ব্যাংকগুলিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ অর্থমন্ত্রীর

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা (India-Pak Tensions) বৃদ্ধি পাওয়ায়, দেশের অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শুক্রবার এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দেশের ব্যাংকিং ও বিমা খাতের…

Nirmala Sitharaman Reviews Cybersecurity Readiness of Banks Amid Indo-Pak Tensions

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা (India-Pak Tensions) বৃদ্ধি পাওয়ায়, দেশের অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শুক্রবার এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দেশের ব্যাংকিং ও বিমা খাতের সাইবার নিরাপত্তা ও জরুরি প্রস্তুতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সরকারি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংক ও বিমা সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও-রা, পাশাপাশি আরবিআই, সিইআরটি-ইন, আইআরডিএআই, এনপিসিআই ও আর্থিক পরিষেবা বিভাগের (DFS) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সুরক্ষা ও নিরবিচ্ছিন্ন পরিষেবার উপর জোর

বৈঠকে মূলত ইউপিআই, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। অর্থমন্ত্রী ব্যাংকগুলিকে নির্দেশ দেন যে তারা যেন যেকোনো রকম সাইবার আক্রমণ কিংবা অপারেশনাল সংকট মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকে এবং নাগরিকদের নিরবিচ্ছিন্ন ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে।

   

সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা

ব্যাংকিং খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে জানান, সাইবার হুমকি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই একাধিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজাস্টার রিকভারি সংক্রান্ত মক ড্রিল পরিচালনা করা হয়েছে উচ্চপর্যায়ে। ফিশিং অ্যাটাক পর্যবেক্ষণের জন্য সতর্কতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং কর্মীদের সজাগ রাখতে নিয়মিত অভ্যন্তরীণ সতর্কবার্তা পাঠানো হচ্ছে।

দেশজুড়ে ফিনান্সিয়াল সিস্টেমে অ্যান্টি-ডিডিওএস (Distributed Denial of Service) প্রযুক্তি স্থাপন করা হয়েছে যাতে বৃহৎ আকারের সাইবার আক্রমণ প্রতিহত করা যায়। সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার (SOC) ও নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার (NOC) গুলি ২৪ ঘন্টা চালু রয়েছে এবং সিইআরটি-ইন ও ন্যাশনাল ক্রিটিকাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোটেকশন সেন্টারের (NCIIPC) সঙ্গে সমন্বয় রেখে রিয়েল টাইম থ্রেট ট্র্যাকিং এবং তথ্য আদান-প্রদান করছে।

জরুরি প্রোটোকল ও কর্মীদের নিরাপত্তা

অর্থমন্ত্রী ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন যে নিয়মিতভাবে কোর ব্যাংকিং ও সাইবার সিকিউরিটি অবকাঠামোর অডিট করতে হবে যাতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত থাকে। প্রতিটি ব্যাংককে সদর দফতরে দুইজন সিনিয়র অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে — একজন সাইবার ইনসিডেন্ট সামলাতে এবং অন্যজন শাখা পর্যায়ে ক্যাশ লজিস্টিকস ও কার্যক্রম দেখভাল করতে। এই কর্মকর্তারা রিয়েল টাইমে সিইআরটি-ইন ও ডিএফএস-কে রিপোর্ট দেবেন।

সীমান্ত অঞ্চলে কর্মরত ব্যাংক কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ জোর দেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ব্যাংকগুলো যেন স্থানীয় নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কর্মীদের ও তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।” পাশাপাশি এটিএমে ক্যাশের প্রাপ্যতা, ইউপিআই ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং নিরবিচ্ছিন্ন রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

বিমা সংস্থাগুলোকেও নির্দেশ

বিমা কোম্পানিগুলিকে গ্রাহক পরিষেবা বজায় রাখতে এবং ক্লেম প্রসেস দ্রুততার সঙ্গে করতে নির্দেশ দিয়েছেন নির্মলা সীতারামন। এছাড়া, পৃষ্ঠপোষক ব্যাংকগুলিকে আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংকগুলিকে (RRBs) যথাযথ সমর্থন দেওয়ার কথাও বলেন তিনি, যাতে তারা এই সংকটের সময়েও কার্যকরভাবে পরিষেবা দিতে পারে।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সরকারী আশ্বাস

অর্থমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেন, “দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক কাঠামো সুদৃঢ় ও স্থিতিশীল। ভারত সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি অটুট।”

তিনি আরও বলেন, এই কঠিন সময়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেন জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠে এবং অর্থনৈতিক গতি বজায় রাখে, এটাই সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য।

এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, ভারতীয় অর্থ ব্যবস্থা সাইবার হুমকি ও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও সচল ও প্রস্তুত। সরকারের সক্রিয় ভূমিকা, আর্থিক খাতের প্রস্তুতি এবং প্রযুক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয়ে দেশ আজও শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে।

Advertisements