মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সুদ কমানোর ঘোষণা করেছে। এর ফলে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) সামনে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সুদ হার কমানোর আরও সুযোগ তৈরি হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বুধবার ফেড তাদের বেঞ্চমার্ক সুদের হার ৪ শতাংশ থেকে ৪.২৫ শতাংশ সীমায় নামিয়ে আনে। পাশাপাশি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, চলতি বছরে আরও দুই দফা সুদ কমতে পারে।
বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া:
ইন্ডিয়াবন্ডস ডটকমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিশাল গোয়েঙ্কা বলেছেন, “সুদের হার কমানোর মাধ্যমে ইয়েল্ড কার্ভের চাপ কমানো যাবে। একইসঙ্গে স্বল্পমেয়াদি সরকারি বন্ড ইস্যু সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে সামগ্রিকভাবে ঋণের খরচ কমে আসবে। এতে কর্পোরেট খাত ও সমগ্র অর্থনীতিই উপকৃত হবে।” তিনি আরও জানান, “এই আর্থিক বছরে আরও সুদ কমার সম্ভাবনা থাকায় বন্ডে বিনিয়োগের জন্য এটি একটি ভালো সময়।”
মার্সেলাস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার্সের গ্লোবাল ইকুইটিজ প্রধান অরিন্দম মণ্ডল বলেছেন, “ফেডের ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানো আমাদের প্রত্যাশামাফিক হয়েছে। প্রয়োজনে বছরশেষে আরও দুই দফা কমতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চাকরির সংখ্যা। ফেড ধারণা করছে, চলতি বছরের শেষে বেকারত্বের হার ৪.৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “ফেডের মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত বক্তব্যটিও লক্ষ্যণীয়। শুল্কবৃদ্ধির কারণে নিকট ভবিষ্যতে দাম চড়া থাকতে পারে। একইসঙ্গে ফেড মনে করছে ২০২৭ সাল পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশের উপরে থাকবে। অর্থাৎ টানা সাত বছর ধরে মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থাকবে।”
শ্রমবাজারে উদ্বেগ: Fed Rate Cut India Impact
ফেডের এই সিদ্ধান্ত শ্রমবাজারের নানান উদ্বেগকেও প্রতিফলিত করছে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বৃদ্ধি, সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া এবং সামগ্রিক চাহিদা-সরবরাহে দুর্বলতা বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, “কর্মসংস্থানের বাজার এক অদ্ভুত ভারসাম্যে রয়েছে। সরবরাহ ও চাহিদা দুই-ই ধীরগতি হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে ছাঁটাই বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।”
এই পরিস্থিতিকে ‘সম্ভাব্য নিম্নমুখী ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এইচডিএফসি সিকিউরিটিজের প্রাইম রিসার্চ প্রধান দেবর্ষ ভাকিল।
ভারতের শেয়ারবাজারে প্রভাব কম:
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন ফেডের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় শেয়ারবাজারে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। বর্তমানে বাজারের ঊর্ধ্বগতি মূলত নির্ভর করছে কর্পোরেট আয় বৃদ্ধির প্রত্যাশা এবং ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনার ইতিবাচক ফলাফলের ওপর।
ফলে, ফেডের সিদ্ধান্ত যদিও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে, ভারতীয় বাজারে তাৎক্ষণিক অস্থিরতা সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বরং, সুদ কমানোর বৈশ্বিক প্রবণতা ভারতের আরবিআই-কে আরও সাহসী পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শেষ কথা:
মার্কিন ফেডের সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার আশঙ্কাকে প্রকাশ করছে, অন্যদিকে ভারতীয় অর্থনীতির জন্য নতুন সুযোগও তৈরি করছে। এখন নজর থাকবে, আরবিআই কত দ্রুত এবং কতটা পরিমাণে সুদ হার কমিয়ে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে পারে।