বর্তমানে অনেকেই নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের দিকেই ঝুঁকছেন, বিশেষ করে তারা যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল আয় চান। এই পরিস্থিতিতে ফিক্সড ডিপোজিট (FD) এবং রিকরিং ডিপোজিট (RD) দুটিই জনপ্রিয় বিকল্প। কিন্তু আপনার যদি ৭ লক্ষ টাকা একসঙ্গে বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকে, তাহলে কোনটি আপনার জন্য বেশি লাভজনক—FD না RD? আসুন বিশদে জেনে নেওয়া যাক।
কীভাবে কাজ করে FD ও RD?
ফিক্সড ডিপোজিট (FD):
FD-তে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা একবারেই জমা রাখেন এবং নির্ধারিত মেয়াদের জন্য সেই টাকা লক হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ৭ লক্ষ টাকা ৫ বছরের জন্য এককালীন বিনিয়োগ করেন, তাহলে সেই পরিমাণ টাকা নির্দিষ্ট সুদের হারে বৃদ্ধি পাবে।
রিকরিং ডিপোজিট (RD):
RD-তে আপনি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে পারেন। অর্থাৎ, যদি আপনার কাছে এখনই ৭ লক্ষ টাকা না থাকে, কিন্তু মাসে মাসে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে চান, তাহলে RD একটি ভালো বিকল্প। এখানে ৬০ মাসে (৫ বছর) আপনি প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমা রেখে মোট ৭ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করতে পারেন।
সুদের হারের তুলনা
এসবিআই FD:
এসবিআই-এর ফিক্সড ডিপোজিটে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য বার্ষিক সুদের হার ৩.০৫% থেকে ৬.৬০% পর্যন্ত। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সর্বোচ্চ ৭.১০% পর্যন্ত সুদ দেওয়া হয়।
ডাকঘরের RD:
ডাক বিভাগের রিকরিং ডিপোজিটে বর্তমানে বার্ষিক প্রায় ৬.৭% হারে সুদ দেওয়া হয়, যা প্রতি ত্রৈমাসিকে চক্রবৃদ্ধি হারে সংযোজিত হয়। তবে এই হার সরকারের আপডেট অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
৭ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে কত রিটার্ন পাবেন?
FD-তে:
যদি আপনি এসবিআই-এর একটি FD-তে ৭ লক্ষ টাকা একবারে জমা রাখেন, তবে ৫ বছরের শেষে আপনার ম্যাচুরিটি অ্যামাউন্ট দাঁড়াবে আনুমানিক ৯,৬৬,২৯৪ টাকা। অর্থাৎ, আপনি মোট প্রায় ২,৬৬,২৯৪ টাকা সুদ আয় করবেন (সূত্র: জি বিজনেস)।
RD-তে:
অন্যদিকে, যদি আপনি RD-এর মাধ্যমে ৭ লক্ষ টাকা ৬০ মাস ধরে ধাপে ধাপে জমা রাখেন, তাহলে ৫ বছরের শেষে আপনার ম্যাচুরিটি অ্যামাউন্ট হবে আনুমানিক ৮,৩৪,৯৮২ টাকা। অর্থাৎ, মোট রিটার্ন হবে প্রায় ১,৩২,৯৮২ টাকা।
তাহলে কোনটি বেছে নেবেন?
FD বেছে নিন যদি:
আপনার কাছে এখনই ৭ লক্ষ টাকা এককালীন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত থাকে।
আপনি চাইছেন দীর্ঘমেয়াদি বেশি সুদ এবং চক্রবৃদ্ধি হারে রিটার্ন।
RD বেছে নিন যদি:
আপনি মাসে মাসে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে চান এবং এখনই বড় অঙ্কের টাকা হাতে নেই।
আপনি চাইছেন নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে সঞ্চয় গড়ে তুলতে।
FD সুদের দিক থেকে RD-এর থেকে কিছুটা বেশি রিটার্ন দেয়, কারণ সেখানে পুরো টাকাটাই শুরু থেকেই সুদের আওতায় আসে। RD-তে আপনি মাসে মাসে টাকা জমা রাখেন বলে পুরো অঙ্ক সুদের আওতায় আসতে কিছুটা সময় লাগে।
অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
FD-এর ক্ষেত্রে:
SBI-এর FD-তে সাধারণ মানুষ, সিনিয়র সিটিজেন এবং NRI-রাও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খোলা ও পরিচালনা করার সুবিধা আছে।
RD-এর ক্ষেত্রে:
পোস্ট অফিসের RD যেকোনও ভারতীয় নাগরিক এবং ১০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সীদের জন্য উপলব্ধ।
তবে অনলাইনে অ্যাক্সেস করতে চাইলে আপনাকে পোস্ট অফিস সেভিংস অ্যাকাউন্টের সঙ্গে RD লিংক করতে হবে।
কর সংক্রান্ত দিক:
FD ও RD উভয় ক্ষেত্রেই প্রাপ্ত সুদ আপনার আয়কর স্ল্যাব অনুযায়ী করযোগ্য।
FD-তে বাৎসরিক সুদের পরিমাণ ৪০,০০০ টাকা (সিনিয়র সিটিজেনদের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ টাকা) ছাড়িয়ে গেলে TDS কাটা হয়।
আপনার যদি এখনই ৭ লক্ষ টাকা হাতে থাকে এবং আপনি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ চান, তাহলে SBI-এর ৫ বছরের FD একটি লাভজনক বিকল্প। অন্যদিকে, যদি আপনি ধাপে ধাপে সঞ্চয় করতে চান এবং মাসিক ভিত্তিতে টাকা রাখার ক্ষমতা রাখেন, তাহলে RD-ও আপনার জন্য ভালো কাজ করবে।
তবে মনে রাখবেন, এটি কোনও আর্থিক পরামর্শ নয়। আপনার ব্যক্তিগত আর্থিক পরিকল্পনার জন্য একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফিনান্স এক্সপার্টের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।