কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী বা পেনশনভোগীর মৃত্যুর পর পরিবার পেনশন কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিলতা দেখা যাচ্ছিল। বিশেষ করে, মৃত কর্মচারীর দুই স্ত্রী থাকলে পরিবার পেনশন কীভাবে ভাগ হবে, সেই প্রশ্ন ঘিরে অনেক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। এই বিষয়ে অবশেষে কেন্দ্রীয় পেনশন ও পেনশনভোগী কল্যাণ দফতর (Department of Pension & Pensioners’ Welfare) স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করেছে।
পরিবার পেনশন সংক্রান্ত মূল বিধান:
Central Civil Services (Pension) Rules, 2021 বা CCS Pension Rules অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী বা পেনশনভোগীর মৃত্যুর পর পরিবার পেনশন প্রথমে প্রদান করা হয় তাঁর আইনত বিবাহিত স্ত্রী বা স্বামীকে। এরপর, ক্রমানুসারে পেনশন পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিরা হলেন—যোগ্য সন্তান, নির্ভরশীল পিতা-মাতা এবং প্রতিবন্ধী ভাই-বোন।
দুই স্ত্রী থাকলে পেনশন ভাগ হবে সমানভাবে: Family Pension Rules Two Wives
দফতরটি Rule 50 (8)(c)-এর উল্লেখ করে জানিয়েছে, যদি কোনো মৃত কর্মচারী একাধিক আইনত বিবাহিত স্ত্রী রেখে যান, তবে পরিবার পেনশন সমানভাবে ভাগ হবে। অর্থাৎ, দুই স্ত্রী থাকলে প্রত্যেকে পেনশনের অর্ধেক করে অংশ পাবেন।
তবে দফতর স্পষ্ট করে দিয়েছে, এখানে “widow/widower” বা বিধবা/বিধুর অর্থ কেবলমাত্র আইনত বিবাহিত জীবনসঙ্গী। যদি কোনো স্ত্রী মারা যান বা পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা হারান, তবে তাঁর অংশ তাঁর সন্তানদের মধ্যে হস্তান্তরিত হবে।
নারী কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুযোগ:
মহিলা সরকারি কর্মচারীদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে করা সংশোধন অনুযায়ী, এখন কোনো মহিলা কর্মী তাঁর স্বামীর পরিবর্তে সন্তানদের পরিবার পেনশন পাওয়ার জন্য মনোনীত করতে পারেন। এটি পরিবার পেনশন বণ্টনের ক্ষেত্রে নারী কর্মীদের আরও স্বাধীনতা দেয়।
পেনশন গণনা ও প্রদান পদ্ধতি:
পরিবার পেনশন নির্ধারণ করা হয় মৃত কর্মচারীর শেষ প্রাপ্ত বেসিক বেতন বা পেনশন পরিমাণের ভিত্তিতে। এই অর্থ প্রদান করা হয় Pension Payment Order (PPO)-এর মাধ্যমে।
দ্বিতীয় বিয়ে ও আইনি জটিলতা:
দফতরটি আরও জানিয়েছে, হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ অনুযায়ী দ্বিতীয় বিয়ে তখনই বৈধ হবে, যখন প্রথম বিয়ে আইনতভাবে বিচ্ছিন্ন (divorce) হয়েছে। অন্যথায়, দ্বিতীয় স্ত্রী আইনত স্বীকৃত নন, ফলে তিনি পরিবার পেনশনের দাবিদার হবেন না। এই কারণে, বহু ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিবাহ সংক্রান্ত পেনশন দাবিতে মামলা বা ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায়।
সরকারি নির্দেশ ও সতর্কতা:
কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দিয়েছে, এমন বিতর্কিত ক্ষেত্রে প্রতিটি মন্ত্রক ও অধীন দফতরকে নির্দিষ্ট পেনশন অফিসার নিয়োগ করতে হবে। তাঁরা বিষয়টি আইন মন্ত্রকের পরামর্শে যাচাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, যাতে পরিবারের সদস্যদের পেনশন প্রাপ্তিতে বিলম্ব না ঘটে।


