ট্যাক্স সাশ্রয়ের স্মার্ট উপায় ETD না মিউচুয়াল ফান্ড? জেনে নিন বিস্তারিত

আধুনিক বিনিয়োগ জগতে, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF) এবং মিউচুয়াল ফান্ড দুইটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম। দুটিই বিভিন্ন সম্পদ, যেমন শেয়ার, বন্ড বা অন্যান্য আর্থিক যন্ত্রের পোর্টফোলিও…

ETF vs Mutual Fund Which Offers Better Tax Efficiency?

আধুনিক বিনিয়োগ জগতে, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF) এবং মিউচুয়াল ফান্ড দুইটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম। দুটিই বিভিন্ন সম্পদ, যেমন শেয়ার, বন্ড বা অন্যান্য আর্থিক যন্ত্রের পোর্টফোলিও তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি হ্রাস এবং আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু, এই দুটি বিনিয়োগের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো “ট্যাক্স এফিশিয়েন্সি” বা কর-দায়িত্বের দিক থেকে দক্ষতা। এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে ETF ও মিউচুয়াল ফান্ডের কর কাঠামোর মূল পার্থক্য, এবং কোনটি আপনার উপার্জিত অর্থের জন্য বেশি উপযোগী।

ETF কী?
এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF) হলো একটি প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, যা এনএসই (NSE) ও বিএসই (BSE)-র মত স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেড করা হয় ঠিক সাধারণ শেয়ারের মতো। একটি ETF সাধারণত নির্দিষ্ট কোনও ইনডেক্স যেমন নিফটি ৫০, সেনসেক্স বা অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করে এবং সেই ইনডেক্সের পারফরম্যান্স অনুসরণ করে। এটি দিনের যেকোনো সময় বাজার মূল্যে কেনা-বেচা করা যায়, যেটি অনেক সময় তার প্রকৃত নেট অ্যাসেট ভ্যালু (NAV)-র চেয়ে বেশি বা কম হতে পারে।

   

ETF সাধারণত খুব কম ট্রেডিং করে, এবং তাদের স্ট্রাকচার এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে একটি বিনিয়োগকারী অন্য বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে শেয়ার কিনে নিতে পারে, ফলে মূল ফান্ডকে শেয়ার রিডিম করতে হয় না। এই কারণে, ETF-তে খুব কম করযোগ্য ঘটনা (taxable events) ঘটে।

মিউচুয়াল ফান্ড কী?
মিউচুয়াল ফান্ড এমন একটি বিনিয়োগ পরিকল্পনা যেখানে বহু বিনিয়োগকারীর অর্থ একত্রিত করে একটি বড় পোর্টফোলিও গঠন করা হয়। এটি শেয়ার, বন্ড বা অন্যান্য আর্থিক যন্ত্রে বিনিয়োগ করে। একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির (AMC) অধীনে থাকা ফান্ড ম্যানেজার এই অর্থ পরিচালনা করেন এবং বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয় করে ফান্ডের পারফরম্যান্স বাড়ানোর চেষ্টা করেন।

মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটগুলি দিনে একবার বিক্রয়যোগ্য হয় এবং তা বিক্রয় হয় ফান্ডের NAV অনুযায়ী, যা দিনের শেষে নির্ধারিত হয়। মিউচুয়াল ফান্ডের বেশিরভাগই অ্যাকটিভলি ম্যানেজড, যার ফলে নিয়মিত শেয়ার কেনা-বেচা করা হয়। ফলে অনেক সময় করযোগ্য গেইন বা লাভের ঘটনা বেশি ঘটে।

ট্যাক্সের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলনা
ভারতের কর আইন অনুযায়ী, দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভ (LTCG) ও স্বল্পমেয়াদী মূলধন লাভ (STCG) নিয়ম ETF এবং মিউচুয়াল ফান্ড উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু বাস্তবে ETF-এর কাঠামো এবং পরিচালনার ধরণ এদেরকে মিউচুয়াল ফান্ডের চেয়ে অনেক বেশি কর-সাশ্রয়ী করে তোলে।

Advertisements

ETF-এর কর দক্ষতা
ETF-এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর ‘ইন-কাইন্ড ট্রান্সফার’ মেকানিজম। অর্থাৎ যখন একজন বিনিয়োগকারী ETF বিক্রি করেন, তখন ফান্ড ম্যানেজারকে সেই শেয়ার বিক্রি করতে হয় না, বরং এটি অন্য বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ফলে কোনও রকম মূলধন লাভ সৃষ্টি হয় না, যা করযোগ্য হতে পারে। এছাড়া, ETF সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী ধারণ করা হয় এবং কম ট্রেড করে, যার ফলে মূলধন লাভের ঘটনা কম হয়।

মিউচুয়াল ফান্ডে করের ঝুঁকি
অন্যদিকে, মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষ করে অ্যাকটিভ ফান্ডগুলিতে ফান্ড ম্যানেজার প্রায়ই স্টক কেনা-বেচা করে ফান্ডের গঠন পরিবর্তন করেন। এই ক্রয়-বিক্রয় থেকে লাভ হলে তা করযোগ্য হয়ে পড়ে এবং সেই কর বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রয়োগ হয়, এমনকি যদি কেউ নিজের ইউনিট বিক্রি না করেও থাকেন।

উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ফান্ড ম্যানেজার লাভজনক শেয়ার বিক্রি করেন এবং আপনি সেই সময় ইউনিট হোল্ড করেন, তাহলে আপনাকেও সেই লাভের ওপর কর দিতে হতে পারে। এর ফলে অনেক সময় বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন, কারণ তাদের নিজের বিক্রয় ছাড়াই কর দিতে হয়।

কোনটি আপনার জন্য ভালো?
ETF আপনার জন্য ভালো হতে পারে যদি:

  • আপনি প্যাসিভ বিনিয়োগ পছন্দ করেন।
  • আপনি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী।
  • আপনি ট্রেডিংয়ের সময় ও দাম নিয়ন্ত্রণ করতে চান।
  • আপনি কম করযোগ্য ঘটনার সুবিধা নিতে চান।
  • মিউচুয়াল ফান্ড আপনার জন্য ভালো হতে পারে যদি:
  • আপনি অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজারের পরিচালনায় বিশ্বাস করেন।
  • আপনি SIP-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে চান।
  • আপনি নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে পরিকল্পিত বিনিয়োগ করতে চান।

ETF এবং মিউচুয়াল ফান্ড—উভয়েরই নিজস্ব সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে কর সাশ্রয়ের দিক থেকে ETF সাধারণত বেশি দক্ষ। কম ট্রেডিং, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সরাসরি লেনদেন এবং ফান্ড ম্যানেজারের সীমিত ভূমিকা ETF-কে একটি ট্যাক্স-ফ্রেন্ডলি বিনিয়োগে পরিণত করেছে। তবে বিনিয়োগ করার আগে আপনার আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা ও বিনিয়োগের সময়সীমা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।