কর্মীদের জন্য ডিজিটাল পরিষেবাকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে, এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (EPFO) এখন ফেস অথেনটিকেশন প্রযুক্তি (FAT) ব্যবহার করে সরাসরি ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর (UAN) তৈরি এবং সক্রিয় করার সুযোগ প্রদান করছে। এই নতুন পদক্ষেপের ফলে কোটি কোটি সদস্য এখন যোগাযোগহীন, নিরাপদ এবং সম্পূর্ণ ডিজিটাল পরিষেবা পাবেন।
ইপিএফও ফেস অথেনটিকেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে UAN তৈরি এবং সক্রিয়করণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর মাধ্যমে কর্মীরা নিজেরাই উমং অ্যাপ (UMANG App) ব্যবহার করে আধার-ভিত্তিক ফেস অথেনটিকেশনের সাহায্যে তাদের UAN তৈরি করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়া শুধু নতুন কর্মীদের জন্যই নয়, পুরোনো ইপিএফও সদস্যদের জন্যও উপযোগী, যাদের UAN রয়েছে কিন্তু এখনও সক্রিয় করা হয়নি। এখন তারাও উমং অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই তাদের UAN সক্রিয় করতে পারবেন।
নিয়োগকর্তারাও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নতুন কর্মীদের জন্য UAN তৈরি করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন করা যায়, তার ধাপগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:
UAN তৈরি এবং সক্রিয়করণের ধাপসমূহ
1. উমং অ্যাপ ডাউনলোড করুন: প্রথমে আপনার মোবাইলে গুগল প্লে স্টোর থেকে উমং অ্যাপটি ডাউনলোড এবং ইনস্টল করুন।
2. আধার ফেস আরডি অ্যাপ ডাউনলোড করুন: এর পাশাপাশি আধার ফেস আরডি (AadhaarFaceRD) অ্যাপটিও ইনস্টল করতে হবে।
3. উমং অ্যাপে প্রবেশ করুন: উমং অ্যাপ খুলে “UAN Allotment and Activation” অপশনে যান।
4. আধার এবং মোবাইল নম্বর দিন: আপনার আধার নম্বর এবং আধারের সঙ্গে সংযুক্ত মোবাইল নম্বর প্রদান করুন।
5. সম্মতি দিন: সম্মতি প্রদানের জন্য চেকবক্সে টিক দিন।
6. ওটিপি যাচাই করুন: আধার-সংযুক্ত মোবাইল নম্বরে পাঠানো ওটিপি (One-Time Password) যাচাই করুন।
7. ছবি তুলুন: আপনার মোবাইলের ক্যামেরা চালু হবে। লাইভ ছবি তুলুন। যখন ছবির সীমানা সবুজ হয়ে যাবে, তখন ছবি সফলভাবে ক্যাপচার হয়েছে বলে ধরে নিন। (এটি ডিজিয়াত্রা অ্যাপের মতো একই প্রক্রিয়া)।
8. আধার ডাটাবেসের সঙ্গে মিল: ছবিটি আধার ডাটাবেসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। সফল মিল হলে আপনার UAN এসএমএস-এর মাধ্যমে পাঠানো হবে।
9. UAN স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয়: UAN তৈরির সঙ্গে সঙ্গে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে যাবে। কর্মীরা উমং অ্যাপ বা মেম্বার পোর্টাল থেকে UAN কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।
এই প্রক্রিয়ার সুবিধাসমূহ
এই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে কর্মীদের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে:
• শতভাগ আধার যাচাই: ফেস অথেনটিকেশনের মাধ্যমে আধার এবং ব্যবহারকারীর পরিচয় শতভাগ নিশ্চিত করা হয়।
• ম্যানুয়াল এন্ট্রির প্রয়োজন নেই: সমস্ত তথ্য সরাসরি আধার থেকে নেওয়া হয়, ফলে ম্যানুয়াল তথ্য প্রবেশের ঝামেলা থাকে না।
• মোবাইল নম্বর যাচাই: আধারের সঙ্গে সংযুক্ত মোবাইল নম্বরের সঙ্গে মিল করা হয়।
• এক ধাপে সমাধান: UAN তৈরি এবং সক্রিয়করণ একই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়।
• নিয়োগকর্তার উপর নির্ভরতা হ্রাস: কর্মীরা নিজেরাই UAN তৈরি করতে পারেন, ফলে নিয়োগকর্তার উপর নির্ভরতা কমে যায়।
• ই-ইউএএন কার্ড ডাউনলোড: কর্মীরা ই-ইউএএন কার্ড ডাউনলোড করে চাকরিতে যোগদানের সময় নিয়োগকর্তার কাছে জমা দিতে পারেন।
• তাৎক্ষণিক পরিষেবা: পাসবুক দেখা, KYC আপডেট করা, ক্লেম জমা দেওয়া ইত্যাদি সহ সমস্ত ইপিএফও পরিষেবা তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়।
কর্মীদের জন্য সুবিধা
UAN সক্রিয়করণ কর্মীদের জন্য ইপিএফও-র ব্যাপক অনলাইন পরিষেবাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন প্রবেশাধিকার প্রদান করে। এর মাধ্যমে তারা তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (PF) অ্যাকাউন্ট দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারেন। পাসবুক দেখতে এবং ডাউনলোড করতে, উত্তোলন, অগ্রিম বা স্থানান্তরের জন্য অনলাইন ক্লেম জমা দিতে, ব্যক্তিগত তথ্য আপডেট করতে এবং ক্লেমের অগ্রগতি রিয়েল টাইমে ট্র্যাক করতে পারেন। এই পরিষেবাগুলো কর্মীদের ঘরে বসে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে ৭ দিন উপভোগ করার সুযোগ দেয়, যার ফলে ইপিএফও অফিসে শারীরিকভাবে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না।
এই উদ্যোগের তাৎপর্য
ইপিএফও-র এই পদক্ষেপ ডিজিটাল ভারতের দিকে একটি বড় ধাপ। পূর্বে UAN তৈরি এবং সক্রিয়করণের জন্য নিয়োগকর্তার উপর নির্ভর করতে হতো, যা প্রায়ই বিলম্ব এবং ত্রুটির কারণ হতো। এখন ফেস অথেনটিকেশন প্রযুক্তির ব্যবহার এই প্রক্রিয়াকে দ্রুত, নিরাপদ এবং স্বচ্ছ করে তুলেছে। আধার-ভিত্তিক যাচাইকরণের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়, যা জালিয়াতির ঝুঁকি কমায় এবং কর্মীদের হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়।
এই প্রযুক্তি কেবল নতুন কর্মীদের জন্যই নয়, যারা আগে থেকে ইপিএফও-র সদস্য কিন্তু তাদের UAN সক্রিয় করেননি, তাদের জন্যও একটি বড় সুবিধা। এছাড়া, নিয়োগকর্তারা তাদের নতুন কর্মীদের জন্য দ্রুত UAN তৈরি করতে পারবেন, যা প্রশাসনিক কাজকে সহজ করে তুলবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ইপিএফও-র এই উদ্যোগ শুধুমাত্র কর্মীদের জন্যই নয়, পেনশনভোগীদের জন্যও ভবিষ্যতে ফেস অথেনটিকেশন প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। মাই ভারতের সঙ্গে সহযোগিতায় যুব স্বেচ্ছাসেবকরা পেনশনভোগীদের দোরগোড়ায় গিয়ে জীবন প্রমাণপত্র জমা দেওয়ার কাজে সহায়তা করবে। এটি ডিজিটাল পরিষেবার পরিধি আরও বাড়িয়ে তুলবে।
সামগ্রিকভাবে, ফেস অথেনটিকেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে UAN সক্রিয়করণ কর্মীদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি ইপিএফও-র পরিষেবাকে আরও গ্রাহককেন্দ্রিক, দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আরও উন্নত ডিজিটাল সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা করা যায়।