কেন্দ্রীয় সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB)-এর ফ্যাক্ট চেক ইউনিট সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি জারি করেছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে, এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (EPFO) নাকি একটি নতুন পেনশন ফর্ম জারি করেছে এবং সেটি আগামী ২৮ জুলাই, ২০২৫-এর মধ্যে জমা দিতে হবে। বার্তায় আরও বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ফর্ম না জমা দিলে আগস্ট থেকে পেনশন বন্ধ করে দেওয়া হবে।
কিন্তু PIB ফ্যাক্ট চেক টিম স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর। EPFO এর তরফ থেকে কোনও নতুন ফর্ম জারি করা হয়নি বা ২৮ জুলাইয়ের কোনও ডেডলাইনও ধার্য করা হয়নি। PIB তাদের এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এর পোস্টে জানিয়েছে, “EPFO কোনো নতুন পেনশন ফর্ম প্রকাশ করেনি বা ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে কোনো ফর্ম জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়নি।”
এই ধরনের ভুয়ো বার্তা মানুষকে বিভ্রান্ত করে এবং অহেতুক আতঙ্ক তৈরি করে। PIB জনগণকে অনুরোধ করেছে যে, এ ধরনের ভুল বার্তার ফাঁদে পা না দিয়ে শুধুমাত্র EPFO-র সরকারি ওয়েবসাইট (epfindia.gov.in) বা অন্যান্য সরকারি সূত্র থেকে তথ্য যাচাই করুন।
EPFO-র বার্তা: সাইবার ক্যাফে ও বেসরকারি এজেন্টদের থেকে দূরে থাকুন:
এদিকে, EPFO একটি বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করে জানিয়েছে যে, তাদের সদস্যদের যেন কোনো অবস্থাতেই সাইবার ক্যাফে, ফিনটেক কোম্পানি বা বেসরকারি এজেন্টের মাধ্যমে সেবা না নেওয়া হয়। ইপিএফও-র পরিষেবাগুলি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অনলাইনে পাওয়া যায়। তবুও অনেক সাইবার ক্যাফে এবং বেসরকারি এজেন্ট এই পরিষেবাগুলি দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে।
EPFO-র পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “আমাদের সকল সদস্য, নিয়োগকর্তা ও পেনশনপ্রাপকরা যেন অফিসিয়াল পোর্টাল এবং উমঙ্গ (UMANG) অ্যাপ ব্যবহার করেন। সকল পরিষেবা যেমন দাবি জমা, স্থানান্তর, KYC আপডেট বা অভিযোগের নিষ্পত্তি—সবই বিনামূল্যে করা যায়।”
তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পরিষেবা গ্রহণ করলে বিপদের আশঙ্কা:
অনেক সময় দেখা যায়, তৃতীয় পক্ষের এই সাইবার ক্যাফে বা এজেন্টরা গ্রাহকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন আধার, প্যান, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য নিয়ে ফেলে, যা পরে অন্য কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। অর্থাৎ, শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, গোপনীয় তথ্য চুরির ঝুঁকিও তৈরি হয়।
এই ধরনের সংস্থাগুলি EPFO-র অনলাইন গ্রিভ্যান্স পোর্টাল ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। অথচ এই পোর্টাল সাধারণ সদস্যরা নিজেই বাড়ি বসে বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন।
EPFO এর এক আধিকারিক বলেন, “EPFO-র সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত কাজের জন্য কোনো ফি নেওয়া হয় না। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সদস্যদের অজানা রেখে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। আমরা সবাইকে এই ফাঁদে না পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।”
পেনশনপ্রাপক ও অন্যান্য সদস্যদের জন্য করণীয়:
1. সরকারি ওয়েবসাইটে যাচাই: epfindia.gov.in বা UMANG অ্যাপের মাধ্যমে নিজের PF অ্যাকাউন্টের অবস্থা ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করুন।
2. কোনো তৃতীয় পক্ষকে তথ্য শেয়ার না করা: কোনো সাইবার ক্যাফে বা এজেন্টকে নিজের ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড, আধার বা ব্যাংকের বিবরণ দিবেন না।
3. ভুয়ো বার্তা যাচাই করা: সোশ্যাল মিডিয়া বা হোয়াটসঅ্যাপে প্রাপ্ত বার্তাগুলি PIB ফ্যাক্ট চেক বা EPFO-র অফিসিয়াল হেল্পলাইন নম্বরের মাধ্যমে যাচাই করুন।
4. প্রয়োজন হলে সরাসরি অফিসে যোগাযোগ: কোনো সমস্যা হলে সরাসরি EPFO-র নিকটস্থ অফিসে যোগাযোগ করুন।
সতর্ক বার্তা ছড়ানোর প্রয়োজন:
এই ধরনের ভুয়ো বার্তা রুখতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়ানো অত্যন্ত জরুরি। PIB ফ্যাক্ট চেকের মতো সরকারি উদ্যোগগুলো বারবার ভুয়ো খবরের বিরোধিতা করছে।
PIB-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ভুয়ো খবর বা গুজব রুখতে সকলেই এগিয়ে আসুন। সন্দেহজনক বার্তা পেলে @PIBFactCheck ট্যাগ করে রিপোর্ট করুন বা WhatsApp নম্বর 918799711259-এ পাঠান।”
EPFO সংক্রান্ত এই মিথ্যা বার্তা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বর্তমানে কোনো নতুন পেনশন ফর্ম বা জমা দেওয়ার ডেডলাইন নেই। EPFO-র সমস্ত পরিষেবা সরকারি পোর্টাল ও UMANG অ্যাপে সহজলভ্য এবং বিনামূল্যে। সাইবার ক্যাফে বা তৃতীয় পক্ষের হাত থেকে সাবধান থাকুন এবং আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষিত রাখুন।