কর্মচারী ভবিষ্যনিধি সংস্থা (EPFO)-র পক্ষ থেকে পিএফ (প্রভিডেন্ট ফান্ড) তহবিল থেকে টাকা তোলার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং স্বচ্ছ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনে ভারত সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে যে, ইপিএফ সদস্যদের আর কোনও প্রকার নথিপত্র জমা দিতে হবে না পিএফ তহবিল থেকে আংশিক বা সম্পূর্ণ টাকা তোলার সময়। এই ঘোষণা ইপিএফ সদস্যদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের অবসান ঘটাল।
নিজে ঘোষণা করলেই মিলবে টাকা:
সংসদে কন্যাকুমারীর সাংসদ বিজয়কুমার ওরফে বিজয় বাসন্ত, তুতিকোরিনের সাংসদ মানিক্কম ঠাকুর বি এবং মেদক থেকে সাংসদ সুরেশ কুমার শেটকার একটি প্রশ্ন তোলেন যেখানে জানতে চাওয়া হয় কেন ইপিএফ সদস্যদের নিজে থেকেই আংশিক তোলার জন্য কারণ ঘোষণা করতে দেওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে সেই দাবির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এর জবাবে সরকার জানায়, এখন ইপিএফ তহবিল থেকে টাকা তোলার জন্য কোনও প্রকার নথিপত্র যেমন শিক্ষার প্রমাণপত্র, চিকিৎসার রশিদ, বিবাহের নিমন্ত্রণপত্র ইত্যাদি জমা দিতে হবে না।
সরকার জানায়, ২০১৭ সালে চালু হওয়া কম্পোজিট ক্লেইম ফর্ম-এর মাধ্যমে সদস্য নিজের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী নিজেই কারণ উল্লেখ করে টাকা তোলার দাবি করতে পারবেন, কোনও প্রমাণপত্র ছাড়াই। এটি ‘স্ব-ঘোষণা ভিত্তিক’ (self-certification based) ব্যবস্থা, যেখানে সদস্যের উপর বিশ্বাস রাখা হচ্ছে এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সরলীকরণ করা হয়েছে।
নতুন ব্যবস্থায় আস্থা রাখছে সরকার:
সরকার জানিয়েছে, সদস্যদের প্রতি আস্থা রেখে এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে যাতে প্রক্রিয়াটি আরও সহজ, দ্রুত এবং ব্যবহারকারী বান্ধব হয়। আগের নিয়মে সদস্যদের নানা ধরনের নথিপত্র যেমন চিকিৎসার রশিদ, বিবাহ প্রমাণ, জমির দলিল ইত্যাদি জমা দিতে হতো। অনেক সময়েই নিম্নমানের ডকুমেন্ট স্ক্যান বা ভুল আপলোডের কারণে দাবিগুলি খারিজ হত। এর ফলে সদস্যরা ক্ষুব্ধ হতেন এবং অভিযোগ জানাতেন।
এই সমস্যার সমাধানে সরকার একাধিক পরিবর্তন এনেছে। ৩ এপ্রিল ২০২৫ থেকে আবেদনকারীদের আর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের জন্য চেক লিফ বা পাসবুকের ছবি আপলোড করার প্রয়োজন নেই। ফলে, যেসব দাবি নথির নিম্ন মানের কারণে বাতিল হত, তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গিয়েছে।
প্রায় ২ কোটি মানুষ উপকৃত:
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এই সরলীকৃত প্রক্রিয়া চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১.৯ কোটির বেশি ইপিএফ সদস্য উপকৃত হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে এই সিদ্ধান্তে বিপুল সংখ্যক কর্মচারী উপকৃত হয়েছেন এবং ইপিএফ প্রক্রিয়ায় মানুষের আস্থা বেড়েছে।
কী কী ক্ষেত্রে তোলা যায় পিএফ থেকে টাকা?
ইপিএফ বিধি অনুযায়ী, একজন সদস্য নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে আংশিক টাকা তুলতে পারেন:
শিক্ষার খরচ (নিজের বা সন্তানদের)
বিবাহ (নিজের, ভাই/বোন বা সন্তানের)
বাড়ি কেনা বা নির্মাণ
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি খরচ
অস্থায়ী বেকারত্ব বা আর্থিক অসুবিধা
আগে এসব খাতে টাকা তোলার জন্য প্রমাণপত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু বর্তমানে, কেবলমাত্র ‘স্বঘোষণা’-র ভিত্তিতে সদস্য অর্থ তোলার আবেদন করতে পারবেন।
সহজতর পরিষেবা, কম সময়:
এই নয়া ব্যবস্থার ফলে শুধু নথিপত্র জমার ঝামেলা কমেছে তাই নয়, দাবি নিষ্পত্তির সময়-ও অনেক কমে এসেছে। ইপিএফওর ডিজিটাল পরিকাঠামো উন্নত হওয়ায় এখন সদস্যরা ঘরে বসেই অনলাইনে দাবি জানাতে পারেন এবং টাকা কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যায়।
কীভাবে আবেদন করবেন?
EPF থেকে টাকা তুলতে চাইলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
1. EPFO-এর Unified Member Portal-এ লগইন করুন (https://unifiedportal-mem.epfindia.gov.in/)
2. UAN ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করুন
3. “Online Services” মেনু থেকে Claim (Form-31, 19, 10C & 10D) নির্বাচন করুন
4. ফর্ম পূরণ করে Self-declaration দিন
5. সাবমিট করলেই আবেদন সম্পূর্ণ হবে
EPFO-এর এই নতুন পদক্ষেপ কর্মচারীদের জন্য এক বিশাল স্বস্তির খবর। পূর্বের জটিল নথি প্রক্রিয়া এবং অনিশ্চয়তা এখন অতীত। সরকার যেখানে ‘Ease of Doing Business’ এবং ‘Digital India’ রূপায়ণে জোর দিচ্ছে, সেখানে এই ধরনের সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করছে না, বরং মানুষের উপর সরকারের আস্থাও প্রতিফলিত করছে।