গত ১১ বছরে ভারতীয় নারীরা দেশের অগ্রগতির এক অপরিহার্য চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছেন বলে মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman)। রবিবার তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের একাধিক নারী-কেন্দ্রিক প্রকল্প ‘নারী শক্তি’-কে শুধু আত্মনির্ভরই করেনি, বরং আর্থিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থানকে দৃঢ় করেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “১১ বছরে সশক্ত নারী” কর্মসূচির অধীনে কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রকল্পগুলো চালু করেছে, সেগুলির বাস্তব ফল আজ চোখে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা, যা বিশ্বে সর্ববৃহৎ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রকল্প হিসাবে বিবেচিত, তাতে ৫৫.৭ শতাংশ অ্যাকাউন্ট মহিলাদের নামে খোলা হয়েছে। এই তথ্যই প্রমাণ করে যে, দেশের প্রান্তিক এলাকাতেও আজ নারীরা আর্থিক ক্ষমতায়নের অংশীদার।
নারী উদ্যোক্তাদের উত্থান
মুদ্রা ঋণ যোজনার অধীনে দেশের মোট উপভোক্তাদের মধ্যে ৬৮ শতাংশই নারী, যা প্রমাণ করে যে তারা এখন নিজস্ব উদ্যোগে ব্যবসা বা স্বনিযুক্ত পেশার মাধ্যমে স্বপ্নপূরণের পথে হাঁটছেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ নারী ক্ষুদ্র ঋণ পেয়ে ছোট ব্যবসা শুরু করে স্বনির্ভর হয়েছেন।
তদ্ব্যতীত, স্টার্ট-আপ ইন্ডিয়া কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশই নারী। এই সংখ্যাগুলি নারী নেতৃত্বের একটি শক্তিশালী দৃষ্টান্ত তুলে ধরে, বিশেষ করে প্রযুক্তি, পরিষেবা এবং সামাজিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে।
পাকা ঘর ও রান্নার গ্যাসেও নারীদের অধিকার
অর্থমন্ত্রী আরও জানান, “প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ)” প্রকল্পের অধীনে গৃহ নির্মাণে মহিলাদের নামেই অধিকাংশ মালিকানা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৭৩ শতাংশ ঘরের মালিক মহিলা, যা গ্রামীণ ভারতে নারীর সম্পত্তির ওপর অধিকার বৃদ্ধির এক বড় পদক্ষেপ।
একইভাবে, ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র আওতায় প্রায় ১০ কোটি দরিদ্র মহিলা বিনামূল্যে এলপিজি সংযোগ পেয়েছেন। এই সংযোগ তাঁদের কেবল রান্নার কাজে সহায়তা করেনি, বরং কাঠ বা গোবরের ধোঁয়া থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাস্থ্যগত সুবিধাও দিয়েছে। বহু গ্রামীণ পরিবারে এখন রান্নাঘরে ধোঁয়াবিহীন পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে।
জন ধন যোজনার সফলতা
২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট মোদী সরকার ‘প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা’ চালু করে দেশের প্রতিটি নাগরিককে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েছিল। এই প্রকল্পের অধীনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কোনও প্রাথমিক ব্যালান্সের প্রয়োজন ছিল না। অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৫ সালে একটি অ্যাকাউন্টে গড় ব্যালান্স ছিল ১,০৬৫ টাকা, যা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ৪,৩৫২ টাকা। বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ অ্যাকাউন্ট সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই অ্যাকাউন্টগুলির মধ্যে ৬৬.৬ শতাংশই গ্রামীণ ও আধা-শহর অঞ্চলে খোলা হয়েছে এবং ২৯.৫৬ কোটি অ্যাকাউন্টের মালিক মহিলা। শুধু তাই নয়, মাত্র ৮.৪ শতাংশ অ্যাকাউন্টে এখনও শূন্য ব্যালান্স রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে এই প্রকল্প সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
আর্থিক শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন
জন ধন যোজনার মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতায় আসা লক্ষ লক্ষ নারী আজ অ্যাকাউন্ট পরিচালনার কৌশল, এটিএম ব্যবহারের পদ্ধতি, মোবাইল ব্যাঙ্কিং, ডিজিটাল পেমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন। এই শিক্ষাগুলি তাঁদের শুধু নিজের জন্য নয়, গোটা পরিবার ও সমাজের জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এক দশকে নারী ক্ষমতায়নের এই অভূতপূর্ব যাত্রা শুধু উন্নয়নের সূচকেই নয়, সামাজিক রূপান্তরের এক শক্তিশালী নিদর্শন হিসেবেও উঠে এসেছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বক্তব্যে স্পষ্ট, মোদী সরকারের নারীকেন্দ্রিক উদ্যোগগুলির ফলে মহিলারা এখন কেবল সুবিধাভোগী নন, বরং উন্নয়নের সক্রিয় সঙ্গী।
‘সশক্ত নারী’ এখন শুধু স্লোগান নয়, বরং ভারতের গ্রামীণ থেকে শহুরে প্রেক্ষাপটে বাস্তব রূপ পেয়েছে। নারীর এই উন্নয়ন-যাত্রা দেশের ভবিষ্যতের জন্য এক আশাব্যঞ্জক বার্তা বহন করে চলেছে।