বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, টেসলার CEO এলন মাস্ক সম্প্রতি একটি চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মাস্ক বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে পরামর্শ করবেন এবং জিজ্ঞাসা করবেন, “DOGE থেকে সেভ করা অর্থ দিয়ে কি তিনি মার্কিনের প্রতিটি পরিবারকে ৪.৩ লাখ টাকা দিতে পারবেন?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি পুরো দুনিয়ায় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এটি শুরু হয় একটি এক্স (টুইটার) ব্যবহারকারীর প্রস্তাবনা থেকে, যেখানে তিনি মাস্ককে বলেছিলেন যে, “যদি DOGE (ডিপার্টমেন্ট অফ গভার্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি) সেভ করা অর্থ আমেরিকার ট্যাক্স পরিশোধকারী পরিবারের মধ্যে ভাগ করা হয়, তাহলে প্রতি পরিবারকে ৫,০০০ ডলার (প্রায় ৪.৩ লাখ টাকা) দেয়া সম্ভব হবে।” মাস্ক সেই মন্তব্যের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, “আমি প্রেসিডেন্টের সাথে পরামর্শ করব।”
অনুসারে, উদ্যোক্তা জেমস ফিশব্যাকের, DOGE প্রতিদিন ১ বিলিয়ন ডলার সেভ করার রেকর্ড অর্জন করছে। এই ডিপার্টমেন্টটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের পর জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। মাস্কের নেতৃত্বে DOGE সরকারের বিভিন্ন খাতে ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি দাবি করেন যে, সরকারী সংস্থায় কাজ করলেও তিনি কোনো পারিশ্রমিক পান না।
বর্তমানে DOGE-এর লক্ষ্য হচ্ছে USAID (মার্কিন সরকারের বিদেশী সাহায্য সংস্থা) এবং শিক্ষা বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরের বাজেট কমানো। এর ফলে দেশের সরকারি খাতে বিরাট সঞ্চয় হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে অন্য খাতে বিনিয়োগ করতে সহায়ক হতে পারে।
জেমস ফিশব্যাকের প্রস্তাব ছিল যে, “DOGE ডিভিডেন্ড” হিসেবে সঞ্চিত অর্থ মার্কিন ট্যাক্স পেমেন্টকারী প্রতিটি পরিবারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া উচিত। তিনি প্রস্তাব করেন যে, DOGE-এর কাজ শেষ হওয়ার পর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুলাইয়ের পর, এই সঞ্চিত অর্থ থেকে ৪০০ বিলিয়ন ডলার ট্যাক্স পরিশোধকারী ৭৯ মিলিয়ন পরিবারের মধ্যে ভাগ করা উচিত। এই হিসাব অনুযায়ী, প্রতি পরিবারকে ৫,০০০ ডলার (৪.৩ লাখ টাকা) প্রদান করা সম্ভব হবে।
ফিশব্যাক উল্লেখ করেন যে, এই ডিভিডেন্ড হবে ট্যাক্স পেমেন্টকারীদের জন্য একটি “ট্যাক্স রিফান্ড চেক”, যা তাদের কঠোর পরিশ্রমের টাকাকে অপচয় থেকে রক্ষা করবে। এছাড়া, তিনি জানান, এটি নাগরিকদের উৎসাহিত করবে যাতে তারা কেবল সঠিকভাবে ট্যাক্স প্রদান করে না, বরং কোন ধরনের অপচয়, প্রতারণা এবং দুর্নীতি চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে।
ফিশব্যাকের মতে, এই ডিভিডেন্ড প্রক্রিয়া সরকারের প্রতি জনগণের বিশ্বাস বৃদ্ধি করবে এবং সেইসাথে জনগণকে প্রতিবেদন প্রদান করতে উৎসাহিত করবে, যাতে তারা সরকারী খাতে আরও সঞ্চয় করতে পারে। এছাড়া, তিনি যুক্তি দেন যে, এই ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে আমেরিকানদের মধ্যে শ্রম বাজারে ফিরে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকার ৭ মিলিয়ন কর্মক্ষম বয়সী পুরুষ কাজ করছে না বা কোনো কাজে খোঁজ করছে না। এই ডিভিডেন্ড তাদের কাজে ফিরে আসতে উদ্দীপ্ত করতে পারে এবং আমেরিকার কর্মক্ষমতা বাড়ানোর দিকে সহায়ক হতে পারে।
এলন মাস্কের মন্তব্য এবং ফিশব্যাকের প্রস্তাব বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মাস্কের সোজা এবং হালকা মন্তব্য, “আমি প্রেসিডেন্টের সাথে পরামর্শ করব,” অনেকেই কৌতূহল এবং চমকপ্রদভাবে গ্রহণ করেছেন। তাঁর এই মন্তব্যের পর, টুইটারে হাজার হাজার ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন এবং আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
এছাড়া, এটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন আমেরিকার সরকারী খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে এবং জনসাধারণ সরকারের প্রতি আরও বেশি বিশ্বাস ও আস্থা চাচ্ছে। এলন মাস্কের মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির এই ধরনের মন্তব্য যে দেশের ভবিষ্যৎ ও নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এলন মাস্কের এই মন্তব্য এবং ফিশব্যাকের প্রস্তাব দেশের ট্যাক্স পেমেন্টকারীদের জন্য একটি সম্ভাব্য সুযোগ হতে পারে। তবে, এটি কার্যকর হবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে। মাস্কের নেতৃত্বে DOGE আরও কী ধরনের সাফল্য লাভ করতে পারে এবং সাধারণ জনগণের উপকারে কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে, তা দেশের সরকার এবং জনগণের কাছে এখনো অজানা।