ভোটার আইডি তৈরির সময় যারা আধার (Aadhaar) নম্বর দিতে চান না, তাঁদের শীঘ্রই নির্বাচন কমিশনের (ECI) কাছে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে হতে পারে। একটি নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, আধার নম্বর দিতে অস্বীকার করলে ভোটারদের নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার (ERO) সামনে হাজির হয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তের যুক্তি জানাতে হবে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হল আধার (Aadhaar) জমা দেওয়া স্বেচ্ছামূলক রাখার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের কাছে কমিশনের প্রতিশ্রুতি মেনে চলা নিশ্চিত করা।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র, আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI)-এর প্রতিনিধিদের একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি ২০২৫ সালের শেষে বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে কার্যকর হতে পারে। এটি বাস্তবায়নের জন্য ‘Form 6B’-তে সংশোধনী আনা হবে। নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জমা দিলে আইন মন্ত্রণালয়কে গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে।
নির্বাচন কমিশন এর আগে সুপ্রিম কোর্টে আশ্বাস দিয়েছিল যে ভোটার রেজিস্ট্রেশন ফর্মে “স্পষ্টীকরণ” পরিবর্তন আনা হবে, যাতে আধার (Aadhaar) জমা দেওয়ার স্বেচ্ছামূলক প্রকৃতি স্পষ্ট হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে কমিশন স্বেচ্ছায় জমা দেওয়া আধারের মাধ্যমে ৬৬ কোটির বেশি ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করেছে। তবে নতুন প্রস্তাবে এই প্রক্রিয়ায় আরও কঠোরতা আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
‘Form 6B’-তে প্রস্তাবিত পরিবর্তন:
‘Form 6B’ ভোটারদের আধার (Aadhaar) নম্বর সংগ্রহের জন্য চালু করা হয়েছিল, যাতে ভোটার তালিকার সত্যতা যাচাই করা যায়। বর্তমানে এই ফর্মে দুটি বিকল্প রয়েছে—হয় ১২ সংখ্যার আধার নম্বর জমা দেওয়া, নয়তো ঘোষণা করা যে ভোটারের আধার কার্ড নেই। ১৮ মার্চের আলোচনায় প্রস্তাবিত পরিবর্তন অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিকল্পটি বাদ দেওয়া হবে। এর পরিবর্তে, যাঁরা আধার দিতে চান না, তাঁদের বিকল্প পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট তারিখে ইআরও-এর সামনে হাজির হয়ে তাঁদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে।
নির্বাচনী রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা (ERO), যিনি সাধারণত একজন সিভিল সার্ভিস বা রাজস্ব কর্মকর্তা হন, ভোটার তালিকা তৈরি, সংশোধন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন। ‘ফর্ম ৬বি’-তে নতুন সংশোধনী কার্যকর হলে, এই কর্মকর্তারা আধার না দেওয়ার কারণ যাচাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। ভোটারদের দেওয়া ব্যাখ্যা ও বিকল্প পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।
কেন এই পরিবর্তন?
নির্বাচন কমিশনের মতে, আধারের (Aadhaar) সঙ্গে ভোটার আইডি লিঙ্ক করলে ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা বাড়বে এবং নকল ভোটার শনাক্ত করা সহজ হবে। তবে অনেকে গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে কমিশন স্বেচ্ছামূলকতা বজায় রাখার পাশাপাশি প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা আনতে চায়। যাঁরা আধার দিতে অস্বীকার করবেন, তাঁদের কারণ যাচাই করে নিশ্চিত করা হবে যে এটি বৈধ এবং যৌক্তিক।
বাঙালি ভোটারদের জন্য প্রভাব:
পশ্চিমবঙ্গে ভোটারদের মধ্যে এই প্রস্তাব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। রাজ্যে প্রচুর মানুষের আধার (Aadhaar) ও ভোটার আইডি রয়েছে, এবং অনেকে ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় আধার জমা দিয়েছেন। তবে গ্রামাঞ্চলে, যেখানে ডিজিটাল সচেতনতা কম, এই নতুন নিয়ম জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ইআরও-এর সামনে হাজির হওয়া অনেকের জন্য সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর হতে পারে।
২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬৬ কোটির বেশি ভোটার স্বেচ্ছায় আধার জমা দিয়েছেন, যা ভারতের মোট ভোটারের একটি বড় অংশ। এটি দেখায় যে বেশিরভাগ মানুষ এই প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছেন। তবে যাঁরা গোপনীয়তার কারণে বা অন্য কোনো যুক্তিতে আধার দিতে চান না, তাঁদের জন্য এই নতুন প্রস্তাব একটি অতিরিক্ত ধাপ যোগ করবে।
এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ভোটার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় আরও কঠোরতা আসবে। বিহার নির্বাচনের আগে এটি চালু হলে, অন্যান্য রাজ্যেও এর প্রভাব পড়তে পারে। পশ্চিমবঙ্গে আগামী নির্বাচনের আগে ভোটারদের এই নিয়ম সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। বিকল্প পরিচয়পত্র হিসেবে প্যান কার্ড, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ইআরও-এর সামনে হাজির হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বহাল থাকবে।
নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব আধার জমা দেওয়ার স্বেচ্ছামূলকতা বজায় রাখার পাশাপাশি ভোটার তালিকার সত্যতা নিশ্চিত করতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এটি ভোটারদের ওপর অতিরিক্ত দায়িত্ব চাপাতে পারে। বাঙালি ভোটারদের উচিত এখন থেকেই এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা এবং প্রয়োজনে বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করা। নির্বাচনী স্বচ্ছতার জন্য এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে।