চন্দা কোচ্ছরের বিরুদ্ধে ED-র মানি লন্ডারিং অভিযোগ বহাল রাখল SAFEMA ট্রাইব্যুনাল

আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিইও চন্দা কোচ্ছরের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ভিডিয়োকন গ্রুপকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুরের বিনিময়ে ৬৪ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে…

Chanda Kochhar

আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিইও চন্দা কোচ্ছরের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ভিডিয়োকন গ্রুপকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুরের বিনিময়ে ৬৪ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে বলে মন্তব্য করেছে SAFEMA-র (Smugglers and Foreign Exchange Manipulators Act) আওতাধীন আপিল ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)-এর সম্পত্তি সংযুক্তির সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানো হয়েছে এবং আগের PMLA অ্যাডজুডিকেটিং অথরিটির ‘ক্লিন চিট’ বাতিল করা হয়েছে।

স্বার্থের সংঘর্ষের সুস্পষ্ট প্রমাণ:
ট্রাইব্যুনাল জানায়, চন্দা কোচ্ছর ICICI ব্যাঙ্কের ঋণ কমিটির মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেছিলেন, যেখানে ভিডিয়োকন গ্রুপকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় তিনি যে স্বার্থের সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন, তা উপেক্ষা করা যায় না। কারণ, ঋণ মঞ্জুরের কিছুদিনের মধ্যেই সেই অর্থের একটি অংশ—৬৪ কোটি টাকা—ঘুরপথে পৌঁছে যায় NuPower Renewables Pvt. Ltd. (NRPL)-এ, যা ছিল তাঁর স্বামী দীপক কোছরের কোম্পানি।

   

এই অর্থ SEPL (Supreme Energy Pvt. Ltd.) হয়ে NRPL-এ আসে। SEPL-এর উপর তখন দীপক কোছরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল। ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণ করেছে যে, ভিডিয়োকনের প্রোমোটার ভিএন ধুত ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে SEPL থেকে পদত্যাগ করে কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ দীপক কোছরের হাতে তুলে দেন।

অ্যাডজুডিকেটিং অথরিটির ত্রুটি:
এই মামলায় PMLA-র অ্যাডজুডিকেটিং অথরিটি ২০২০ সালে Kochhar দম্পতির সম্পত্তি সংযুক্তির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। তারা মূলত NRPL-এর শেয়ারহোল্ডিং কাঠামোর উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেছিল, কিন্তু ট্রাইব্যুনাল মতে, তারা মৌলিক তথ্য — দীপক কোছরের কোম্পানি পরিচালনার বাস্তব নিয়ন্ত্রণ — উপেক্ষা করেছে।

ভিএন ধুতের PMLA-এর ধারা ৫০-এর অধীনে দেওয়া বয়ান, যেখানে তিনি স্বীকার করেছেন যে দীপক কোছরই কোম্পানির সব কার্যকলাপ পরিচালনা করছিলেন, সেই তথ্যকে প্রমাণ হিসেবে ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করেছে।

মানি লন্ডারিংয়ের প্রাথমিক প্রমাণ:
ট্রাইব্যুনাল-এর মতে, এ ঘটনায় স্পষ্টভাবে প্রাথমিক মানি লন্ডারিং-এর উপাদান রয়েছে। সরকারি ঋণ মঞ্জুরের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ, তারপরে সেই টাকা ঘুরপথে নিজের পরিবারের মালিকানাধীন কোম্পানিতে স্থানান্তর—এসব কার্যকলাপ PMLA অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। যদিও চূড়ান্ত রায় বিচারালয়ে হবে, তবে এই মুহূর্তে সম্পত্তি সংযুক্তির জন্য যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে।

Advertisements

ED ও CBI-র পদক্ষেপ:
২০২০ সালে ED চন্দা ও দীপক কোছরের মোট ৭৮ কোটি টাকার সম্পত্তি অস্থায়ীভাবে সংযুক্ত করেছিল। সেই সিদ্ধান্ত পরে বাতিল হলেও, SAFEMA ট্রাইব্যুনালের রায়ে তা ফের কার্যকর করা হয়েছে। দীপক কোছরকে ED সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার করেছিল এবং পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে CBI চন্দা ও দীপক কোছর উভয়কেই গ্রেফতার করে। তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বোম্বে হাইকোর্ট তাঁদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে এবং ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি যুগান্তকারী রায়ে জানায়, এই গ্রেফতার অবৈধ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ছিল।

চূড়ান্ত বিচারের অপেক্ষা:
যদিও হাইকোর্ট তাঁদের গ্রেফতারকে আইনবিরুদ্ধ বলেছে, কিন্তু SAFEMA ট্রাইব্যুনালের এই রায় তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং-এর অভিযোগে সম্পত্তি সংযুক্তিকে আইনি বৈধতা দিয়েছে। ফলে এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখন বিচারালয়ের হাতেই।

এই ঘটনায় কর্পোরেট জগতে স্বচ্ছতা ও গঠনতন্ত্র মানা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। চন্দা কোছরের মতো একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকারের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ কর্পোরেট গভর্ন্যান্স এবং ব্যাঙ্কিং নীতিমালার ভবিষ্যৎ কার্যকারিতার উপরও প্রভাব ফেলবে।