ভোজ্যতেল শিল্পে স্বস্তির হাওয়া, জিএসটি রিফান্ডে ছাড়ের ইঙ্গিত

দেশের ভোজ্যতেল (Edible Oil) শিল্প আবারও কর নীতির জটিলতার কারণে সমস্যায় পড়েছে। খাদ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ভোজ্যতেল শিল্পের ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট (ITC) রিফান্ডের উপর জিএসটি কাউন্সিলের…

Govt Slashes Edible Oil Import Duty girl

দেশের ভোজ্যতেল (Edible Oil) শিল্প আবারও কর নীতির জটিলতার কারণে সমস্যায় পড়েছে। খাদ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ভোজ্যতেল শিল্পের ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট (ITC) রিফান্ডের উপর জিএসটি কাউন্সিলের আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করার দাবি ইতিমধ্যেই অর্থ মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। খাদ্য সচিব সঞ্জীব চোপড়া মঙ্গলবার জানান, বিষয়টি অর্থ মন্ত্রকের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকে এটি আলোচনায় আসতে পারে।

তিনি বলেন, “আমরা প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছি। জিএসটি কমিটি যখন হ্রাসকৃত হারের ঘোষণা নিয়ে কাজ করবে, আশা করি তারা এ দাবিকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। সম্ভব হলে আগামী বৈঠকেই বিষয়টি উঠতে পারে।”

   

২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে ভোজ্যতেল শিল্প ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট (ITC) রিফান্ডের উপর বিধিনিষেধের মুখে পড়ে। এর ফলে বিশেষত ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং দেশীয় উৎপাদকরা আর্থিক চাপে পড়ে গেছেন। বর্তমানে ভোজ্যতেলে ৫% হারে জিএসটি ধার্য থাকলেও প্যাকেজিং, রাসায়নিক ও প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ইনপুট উপাদানে ১২ থেকে ১৮% হারে কর বসানো হয়। আগে পর্যন্ত এই হারের ফারাক শিল্পকে অতিরিক্ত প্রদেয় ট্যাক্সের রিফান্ড দাবি করার সুযোগ দিত। কিন্তু ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিল্পে জমে থাকা ক্রেডিট অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

ভোজ্যতেল শিল্প সংস্থা— ইন্ডিয়ান ভেজিটেবল অয়েল প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন—সহ একাধিক সংগঠন সরকারকে অনুরোধ করেছে এই বিধিনিষেধ তুলে নিতে। তাঁদের দাবি, মাখন ও ঘি যেভাবে রিফান্ড সুবিধা পাচ্ছে, ভোজ্যতেল শিল্পকেও তেমন সুবিধা দেওয়া উচিত।

শিল্পমহলের মতে, আইটিসি রিফান্ড পুনর্বহাল করলে নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে, বিনিয়োগ বাড়বে, উৎপাদন খরচ কমবে এবং ভোক্তা দামে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। তাছাড়া নিরাপদ ও গুণমানসম্পন্ন ভোজ্যতেলের ব্যবহারও ত্বরান্বিত হবে।

শিল্প প্রতিনিধিদের দাবি, গত দুই বছরে রিফান্ড সুবিধা বন্ধ থাকায় বহু সংস্থা অকারণে আর্থিক চাপে পড়েছে। ক্রেডিট জমা থাকলেও ব্যবহার করতে না পারায় তার প্রভাব পড়ছে নগদ প্রবাহে, যা ছোট ও মাঝারি কোম্পানির জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই জিএসটি হারের যৌক্তিকীকরণ নিয়ে গঠিত মন্ত্রীসভার গ্রুপে একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পণ্য ও পরিষেবাকে দুটি প্রধান স্ল্যাবে ভাগ করা হবে—‘মেরিট’ পণ্য-পরিষেবার জন্য ৫% এবং ‘স্ট্যান্ডার্ড’ পণ্য-পরিষেবার জন্য ১৮%। এছাড়া ৫-৭টি পণ্যের জন্য ৪০% হারে কর বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে বর্তমান ১২% ও ২৮% কর স্ল্যাব তুলে দেওয়া হবে।

অন্যদিকে, খাদ্য সচিব চোপড়া আরও জানিয়েছেন যে ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হতে চলা Vegetable Oil Products, Production and Availability Regulation Order, 2025 ভোজ্যতেল উৎপাদনে স্বচ্ছতা আনতে এবং মজুতদারি রোধ করে দামের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তৈরি হয়েছে।

Advertisements

এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক ভোজ্যতেল উৎপাদককে Directorate of Sugar and Vegetable Oils-এর সঙ্গে নিবন্ধন করতে হবে এবং প্রতি মাসে উৎপাদন, বিক্রি, মজুত ও ক্রয়ের তথ্য ১৫ তারিখের মধ্যে জমা দিতে হবে।

চোপড়া বলেন, “তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে, তবে এখনো খুব বড় পরিসরে তা কার্যকর হয়নি কারণ অনেকেই সচেতন নন। আমরা শীঘ্রই সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করব, যেখানে শিল্পের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে তাৎক্ষণিকভাবে নিবন্ধন করতে পারবেন।”

খাদ্য মন্ত্রক দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সচেতনতা শিবির করার পরিকল্পনা করেছে। সেখানে উপস্থিত শিল্প প্রতিনিধিদের অন-স্পট রেজিস্ট্রেশন করা হবে এবং নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। সচিবের মতে, এর ফলে তথ্য সংগ্রহ সহজ হবে এবং সঠিক নীতি গ্রহণে সহায়ক হবে।

তিনি জানান, “বর্তমানে আমরা কোনো নির্দিষ্ট তথ্য হাতে পাচ্ছি না। শিল্প সংগঠনের দেওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। একবার বড় সংস্থাগুলি যুক্ত হলে আমরা উৎপাদন, আমদানি এবং মজুতের প্রায় সঠিক চিত্র পেয়ে যাব।”

চোপড়া বলেন, ভোজ্যতেল শিল্পে প্রায় ২০% সংস্থা দেশের মোট উৎপাদনের ৮০-৯০% উৎপাদন করে। তাই বড় সংস্থাগুলি যদি নিবন্ধন করে রিপোর্টিং শুরু করে, তবে শিল্পের সামগ্রিক অবস্থার একটি যথেষ্ট নির্ভুল ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, একদিকে করনীতির অসঙ্গতি ভোজ্যতেল শিল্পকে আর্থিক চাপে ফেলছে, অন্যদিকে সরকার নীতি পরিবর্তন ও নতুন বিধি চালুর মাধ্যমে শিল্পকে সুসংগঠিত করতে চাইছে। শিল্পমহল আশা করছে, জিএসটি কাউন্সিল আগামী বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে ভোজ্যতেল খাতে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং ভোক্তাদের জন্যও দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।