সহজ ইএমআই, কম সুদের ঋণে ইলেকট্রিক স্কুটার কিনুন

ভারতের পরিবহন ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে শহুরে এলাকায় ইলেকট্রিক স্কুটার পরিবেশবান্ধব (Electric Scooters), সাশ্রয়ী এবং কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচের কারণে প্রথম…

Vespa Launches New Luxury Scooter Range with Updated Design, Tech, and Performance for 2025

ভারতের পরিবহন ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে শহুরে এলাকায় ইলেকট্রিক স্কুটার পরিবেশবান্ধব (Electric Scooters), সাশ্রয়ী এবং কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচের কারণে প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে। তবে, ইলেকট্রিক স্কুটারের প্রাথমিক মূল্য অনেকের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে সহজ অর্থায়নের বিকল্পগুলো এসেছে, যা ইলেকট্রিক স্কুটার কেনাকে আরও সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক করছে। এই প্রতিবেদনে আমরা ভারতে ইলেকট্রিক স্কুটার কেনার জন্য সহজ অর্থায়নের বিকল্প, সরকারি ভর্তুকি এবং ইএমআই সুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

ইলেকট্রিক স্কুটারের জনপ্রিয়তা এবং অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা
ইলেকট্রিক স্কুটারগুলো শূন্য নির্গমন, কম রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের কারণে ভারতের শহরাঞ্চলে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। ওলা এস১ প্রো, আথার ৪৫০এক্স, বাজাজ চেতক, এবং হিরো ইলেকট্রিক অপটিমা সিএক্সের মতো মডেলগুলো তাদের আধুনিক বৈশিষ্ট্য এবং দীর্ঘ রেঞ্জের জন্য বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে, এই স্কুটারগুলোর দাম ৪০,০০০ টাকা থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, যা এককালীন অর্থ প্রদানের মাধ্যমে কেনা অনেকের জন্য কঠিন। এই পরিস্থিতিতে সহজ ইএমআই এবং কম সুদের ঋণ সুবিধা ক্রেতাদের জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠেছে। বাজাজ ফিনসার্ভ, ফিনেবল, ওটিও ক্যাপিটাল এবং মঙ্গলম ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিনান্সের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

   

সরকারি ভর্তুকি এবং প্রণোদনা
ভারত সরকার ইলেকট্রিক যানবাহনের প্রচলন বাড়াতে ফাস্টার অ্যাডপশন অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অফ (হাইব্রিড অ্যান্ড) ইলেকট্রিক ভেহিকলস (FAME) স্কিমের মাধ্যমে ভর্তুকি প্রদান করছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইলেকট্রিক স্কুটার ক্রেতারা ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ভ _
র্তুকি পেতে পারেন। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, এবং দিল্লির মতো রাজ্যগুলো রোড ট্যাক্স ছাড় এবং নিবন্ধন ফি মওকুফের মতো অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে, যা স্কুটারের মোট খরচ কমিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, মহারাষ্ট্রে ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যায়, যা একটি ১.১৫ লক্ষ টাকার স্কুটারের দাম ৯০,০০০ টাকায় নামিয়ে আনতে পারে। এই ভর্তুকিগুলো সরাসরি ক্রেতার খরচ কমায় এবং ইএমআই-এর মাধ্যমে কেনা আরও সাশ্রয়ী করে।

সহজ অর্থায়নের বিকল্পসমূহ
ইলেকট্রিক স্কুটার কেনার জন্য বেশ কিছু অর্থায়ন বিকল্প উপলব্ধ রয়েছে, যা ক্রেতাদের জন্য সুবিধাজনক এবং নমনীয়।

  • টু-হুইলার লোন: বাজাজ ফিনসার্ভ, মুথুত ক্যাপিটাল, এবং ফিনেবলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইলেকট্রিক স্কুটারের জন্য বিশেষ টু-হুইলার লোন অফার করে। এই ঋণের সুদের হার সাধারণত ৮% থেকে ১৫% প্রতি বছর এবং পুনরাদায়ের মেয়াদ ৬ থেকে ৮৪ মাস পর্যন্ত হয়। বাজাজ ফিনসার্ভ ২১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করে এবং অন-রোড মূল্যের ১০০% পর্যন্ত অর্থায়নের সুবিধা দেয়।
  • শূন্য ডাউন পেমেন্ট: ফিনেবল এবং আথার ফ্লেক্সিপে-এর মতো কিছু প্রতিষ্ঠান শূন্য ডাউন পেমেন্ট সুবিধা প্রদান করে, যা ক্রেতাদের জন্য প্রাথমিক খরচের বোঝা কমায়। এই ক্ষেত্রে পুরো পরিমাণ ইএমআই-এর মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
  • লিজিং বিকল্প: কিছু নির্মাতা এবং ডিলার লিজিং বিকল্প অফার করে, যেখানে ক্রেতারা মাসিক ভাড়ার মাধ্যমে স্কুটার ব্যবহার করতে পারেন। এটি তাদের জন্য উপযুক্ত যারা মালিকানা ছাড়াই স্কুটার ব্যবহার করতে চান।
  • ক্রেডিট কার্ড ডিসকাউন্ট: এসবিআই এবং আইসিআইসিআই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ইলেকট্রিক স্কুটার কিনলে ২৩,৫০০ থেকে ২৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়, যেমন ভিডা ভি২ লাইট এবং ভি২ প্লাস মডেলের ক্ষেত্রে।

ইএমআই গণনা এবং সুবিধা
ইলেকট্রিক স্কুটারের ইএমআই নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্কুটারের মূল্য, ঋণের মেয়াদ, সুদের হার এবং ডাউন পেমেন্ট বিবেচনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, হিরো ইলেকট্রিক অপটিমা সিএক্স (মূল্য ৭৮,৪০৫ টাকা) এর জন্য ৩৬ মাসের ঋণে প্রতি মাসে ২,৫১০ টাকা ইএমআই দিতে হতে পারে (৯.৭% সুদে)। অনলাইন ইএমআই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে ক্রেতারা তাদের বাজেট অনুযায়ী সঠিক ঋণ পরিকল্পনা বেছে নিতে পারেন। এই ধরনের ইএমআই সুবিধা বড় এককালীন খরচের বোঝা কমায় এবং মাসিক বাজেটের মধ্যে স্কুটার কেনা সম্ভব করে।

Advertisements

পশ্চিমবঙ্গে অর্থায়নের সম্ভাবনা
পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলো, যেমন কলকাতা, হাওড়া, এবং শিলিগুড়িতে ইলেকট্রিক স্কুটারের চাহিদা বাড়ছে। ওটিও ক্যাপিটালের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই অঞ্চলে ৮.৯৯% থেকে শুরু হওয়া সুদের হারে ঋণ প্রদান করে, যা অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে দ্রুত অনুমোদিত হয়। এছাড়া, স্থানীয় ডিলাররা প্রায়ই নির্মাতাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিশেষ অফার এবং কম ডাউন পেমেন্টের সুবিধা দেয়। পশ্চিমবঙ্গে FAME স্কিমের ভর্তুকি এখনও পুরোপুরি কার্যকর না হলেও, রাজ্য সরকার ক্রমশ ইলেকট্রিক যানবাহনের জন্য নীতি তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে অর্থায়নকে আরও সহজ করবে।

চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
ইলেকট্রিক স্কুটারের অর্থায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন, কম ক্রেডিট স্কোর থাকলে সুদের হার বেশি হতে পারে, এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রসেসিং ফি বা অন্যান্য চার্জ যুক্ত হতে পারে। তবে, ফিনেবলের মতো প্রতিষ্ঠান শূন্য ডাউন পেমেন্ট এবং নো-কস্ট ইএমআই অফার করে এই সমস্যা কমিয়েছে। এছাড়া, ক্রেতাদের উচিত বিভিন্ন ঋণদাতার সুদের হার এবং শর্তাবলী তুলনা করা এবং ইএমআই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে তাদের আর্থিক পরিকল্পনা সুনিশ্চিত করা।

ইলেকট্রিক স্কুটার কেনার জন্য ভারতে সহজ অর্থায়নের বিকল্পগুলো পরিবেশবান্ধব পরিবহনকে আরও অ্যাক্সেসযোগ্য করেছে। সরকারি ভর্তুকি, কম সুদের ঋণ, এবং নমনীয় ইএমআই সুবিধার মাধ্যমে ক্রেতারা তাদের বাজেটের মধ্যে থেকে স্কুটার কিনতে পারছেন। পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলে এই অর্থায়ন বিকল্পগুলো ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে, এবং সঠিক পরিকল্পনা ও তথ্যের মাধ্যমে ক্রেতারা তাদের স্বপ্নের ইলেকট্রিক স্কুটার সহজেই অর্জন করতে পারেন। এই সবুজ বিপ্লবের অংশ হয়ে পরিবেশ রক্ষা এবং আর্থিক সাশ্রয় দুটোই নিশ্চিত করুন।