ভারতে শুরু হয়ে গেল e-passport পরিষেবা, জানুন কীভাবে আবেদন করবেন

ভারত সরকার দেশের নাগরিকদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করল বহুল প্রতীক্ষিত ই-পাসপোর্ট (e-passport) পরিষেবা। আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হবে আরও নিরাপদ, আধুনিক ও দ্রুততর। বিদেশ…

e-Passport launches in India

ভারত সরকার দেশের নাগরিকদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করল বহুল প্রতীক্ষিত ই-পাসপোর্ট (e-passport) পরিষেবা। আগামী দিনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হবে আরও নিরাপদ, আধুনিক ও দ্রুততর। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১লা এপ্রিল একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে ই-পাসপোর্ট ইস্যু শুরু হয়েছিল সীমিত কিছু পাসপোর্ট অফিস থেকে। এখন ধাপে ধাপে এই পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়া হবে দেশের আরও অনেক কেন্দ্রে।

ই-পাসপোর্টকে সহজেই চেনা যাবে প্রচলিত পাসপোর্ট থেকে। এর মলাটে পাসপোর্ট টাইটেলের নিচে ছোট সোনালি রঙের একটি প্রতীক (চিপ চিহ্ন) মুদ্রিত থাকবে। এই বিশেষ প্রতীকই জানিয়ে দেবে যে এটি একটি আধুনিক ই-পাসপোর্ট।

   

ই-পাসপোর্ট আসলে প্রচলিত পাসপোর্টের একটি উন্নত সংস্করণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রযুক্তি। নতুন এই পাসপোর্টে থাকবে একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) চিপ ও একটি অ্যান্টেনা, যা পাসপোর্টধারীর ব্যক্তিগত ও বায়োমেট্রিক তথ্য সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করবে।

এতে শুধু নাম, জন্মতারিখ, পাসপোর্ট নম্বরের মতো তথ্য নয়, বরং আঙুলের ছাপ, ডিজিটাল ফটোগ্রাফ ও চোখের মণির স্ক্যানও থাকবে। ফলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ হবে অনেক দ্রুত এবং নিরাপদ।

বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “ই-পাসপোর্ট চালুর ফলে জাল পাসপোর্ট তৈরির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। পাশাপাশি ভ্রমণ প্রক্রিয়া হবে অনেক বেশি স্বচ্ছ ও আধুনিক।”

বিশ্বজুড়ে ইতিমধ্যেই বহু দেশ ই-পাসপোর্ট ব্যবহার শুরু করেছে। ভারতের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি প্রবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি হবে। ই-পাসপোর্ট সম্পূর্ণভাবে মেনে চলে আইসিএও (International Civil Aviation Organization)-র নিয়মাবলি, যা আন্তর্জাতিকভাবে বাধ্যতামূলক।

ভারতের নতুন প্রজন্মের পাসপোর্টে থাকছে একাধিক উন্নত সুবিধা—
পাসপোর্টের সামনের কভারের ভেতরে এমবেডেড ইলেকট্রনিক চিপ, বায়োমেট্রিক তথ্য: আঙুলের ছাপ, মুখমণ্ডলের ছবি ও চোখের স্ক্যান, ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, জন্মতারিখ, পাসপোর্ট নম্বর ইত্যাদি, কন্ট্যাক্টলেস চিপ যা এনক্রিপ্টেড পদ্ধতিতে তথ্য সুরক্ষিত রাখবে, আন্তর্জাতিক আইসিএও মানদণ্ড অনুযায়ী তৈরি, জালিয়াতি, নকল বা তথ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনেকাংশে রুদ্ধ করবে, দ্রুততর ইমিগ্রেশন চেক-ইন ও যাত্রা প্রক্রিয়া।

Advertisements

কীভাবে আবেদন করবেন ই-পাসপোর্টের জন্য?
সরকার জানিয়েছে, ই-পাসপোর্ট পেতে নাগরিকদের প্রচলিত প্রক্রিয়ার মতোই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। তবে ই-পাসপোর্ট ইস্যু হবে শুধুমাত্র সেই কেন্দ্রগুলো থেকে যেখানে প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো ইতিমধ্যেই বসানো হয়েছে। ধাপে ধাপে সারা দেশে এই সুবিধা চালু করা হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া ধাপগুলো হলো—
1. পাসপোর্ট সেবা পোর্টাল (Passport Seva Portal)-এ যান।
2. নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন বা আগের অ্যাকাউন্টে সাইন-ইন করুন।
3. ই-পাসপোর্টের জন্য নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করুন।
4. নিজের নিকটবর্তী পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (PSK) বা পোস্ট অফিস পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (POPSK) নির্বাচন করুন।
5. অনলাইনে ফি প্রদান করুন।
6. নির্ধারিত তারিখে নির্বাচিত কেন্দ্রে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য জমা ও ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন করুন।
এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আবেদনকারীর হাতে পৌঁছে যাবে নতুন ই-পাসপোর্ট।

সাধারণ পাসপোর্ট থেকে আলাদা কোথায়?
প্রচলিত পাসপোর্ট মূলত কাগজ-ভিত্তিক নথি, যেখানে শুধু মুদ্রিত তথ্য থাকে। কিন্তু ই-পাসপোর্টে যোগ হয়েছে ডিজিটাল স্তর। মলাটের ভেতরে সংযুক্ত চিপ বহন করে সব তথ্য।

এতে ভ্রমণ প্রক্রিয়া যেমন দ্রুত হবে, তেমনই নিরাপত্তার স্তরও আরও অনেক বাড়বে। পাসপোর্টের তথ্য জাল করার বা নকল করার সুযোগ থাকবে

না।
বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, আপাতত সীমিত কিছু পাসপোর্ট অফিস থেকে এই পরিষেবা দেওয়া হলেও, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ধাপে ধাপে ভারতের সব পাসপোর্ট অফিস ও সেবা কেন্দ্র-এ ই-পাসপোর্ট চালু হবে। দীর্ঘমেয়াদে প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকই পেয়ে যাবেন এই আধুনিক প্রযুক্তির পাসপোর্ট।

ভারতের ই-পাসপোর্ট চালুর মধ্য দিয়ে শুরু হলো আন্তর্জাতিক ভ্রমণে এক নতুন অধ্যায়। উন্নত নিরাপত্তা, প্রযুক্তি ও গতি—সব মিলিয়ে এটি নিঃসন্দেহে দেশের কোটি কোটি ভ্রমণকারীর জন্য এক বড় স্বস্তি। আগামী দিনে যাত্রাপথ আরও মসৃণ করতে ভারত সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ যাত্রী—সকলেই।