Tax Revolution: প্রতি বছর জুলাই মাস এলেই প্রায় ৭ কোটিরও বেশি ভারতীয় কর্মজীবী মানুষ ল্যাপটপ খুলে বসেন, ফর্ম ১৬ খুঁজে বার করেন এবং সরকারের নানা ওয়েব পোর্টালে লগইন পাসওয়ার্ড মনে করতে থাকেন। ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার এই বার্ষিক অনুশীলন একটা ১,৫০০ কোটি টাকার বাজার তৈরি করেছে — যেখানে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ডি-আই-ওয়াই ই-ফাইলিং অ্যাপস এবং “ট্যাক্স মেইড ইজি” নামক কাস্টমার কেয়ার সেন্টার গড়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রক্রিয়াকে কি আমরা সত্যিই সহজ করে তুলছি? না কি শুধু ঝামেলাটাকে একটু লুকিয়ে রাখছি?
সংখ্যায় যা উঠে আসছে:
ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, FY24-এ ৭ কোটির বেশি মানুষ ইলেকট্রনিকভাবে রিটার্ন জমা দিয়েছেন। FY19-এ এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ কোটি। দেখতে ভালো লাগলেও, বাস্তব চিত্রটা এতটা আশাব্যঞ্জক নয়। ভারতে প্রায় ১২ কোটি কর্মজীবী মানুষ রয়েছেন যাঁদের আয় করযোগ্য — অর্থাৎ প্রায় ৪০% যোগ্য করদাতাই রিটার্ন জমা দেন না। এই গ্যাপ শুধু তথ্যগত নয়, এতে বছরে প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয় এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার জন্যও এটা একটা বড় মিসড সুযোগ।
বর্তমান বাস্তবতা: ডিজিটাইজড ঝামেলা:
যাঁরা রিটার্ন জমা দেন, তাঁদেরও বেশিরভাগের অভিজ্ঞতা মোটেই ইতিবাচক নয়। “আমার কর কীভাবে গণনা হয়, আমি জানি না”—এমন কথা বহু পেশাদার কর্মজীবীই বলেন। গড়ে একটি ITR ফাইল করতে ৩–৪ ঘণ্টা সময় লাগে, যদিও প্রয়োজনীয় তথ্য, যেমন স্যালারি স্লিপ, ব্যাংকের সুদ বা মিউচুয়াল ফান্ডের লাভ — সবই আগে থেকেই ডিজিটাল ফর্মে কোথাও না কোথাও রয়েছে।
এটা প্রকৃত সরলীকরণ নয়। এটা ডিজিটাইজড ফ্রিকশন।
সত্যিকারের রূপান্তর: প্রোঅ্যাকটিভ, ইনভিজিবল ট্যাক্স ফাইলিং:
ভাবুন যদি এই প্রক্রিয়াটা এমন হতো: “আপনার ড্রাফট রিটার্ন প্রস্তুত। সঠিকতা যাচাই করা হয়েছে, ছাড়ের সুযোগগুলো ব্যবহার করা হয়েছে” — এমন একটি নোটিফিকেশন আপনি পান।
আপনি একবার দেখে ক্লিক করে অ্যাপ্রুভ করেন, ব্যাস কাজ শেষ।
আপনার স্যালারি, ব্যাংক ডেটা, ইনভেস্টমেন্টের তথ্য — সব কিছু API-এর মাধ্যমে নিজের জায়গা খুঁজে নেয়।
উন্নত দেশগুলিতে ৯৫% ট্যাক্স রিটার্ন আগে থেকেই প্রি-ফিল্ড হয়ে আসে এবং ৫ মিনিটেই জমা হয়ে যায়। কিন্তু ভারতে এখনো পর্যন্ত করদাতাকে নিজের হাতে TDS সার্টিফিকেট মিলিয়ে দেখতে হয়, ফর্ম ২৬AS-এ শত শত লাইন খুঁটিয়ে পড়তে হয়, আর একটুও ভুল হলে ₹৫,০০০ জরিমানার ভয় মাথায় থাকে।
ডিজিটাল নয়, ইনটেলিজেন্ট সিস্টেম দরকার:
টেকনোলজির কাজ শুধু কাগজহীন করা নয়, তা এমন হওয়া উচিত যাতে কমপ্লায়েন্স “ডিফল্ট”-এর মতো হয়ে যায়। আপনার স্যালারি যখন ব্যাংকে জমা পড়ে, তখন সেই তথ্য ব্যাংক, ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট এবং ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যাটফর্মে এমনভাবে বয়ে যাওয়া উচিত যেন রিটার্ন অটোমেটিকভাবে প্রি-ফিল্ড হয়ে যায়।
এটা “ফাইল না করলে জরিমানা” থেকে সরিয়ে “আমরা আপনার হয়ে কাজটা করে দিয়েছি” মডেলে নিয়ে যেতে পারে।
AI: ভারতীয় ই-ফাইলিংয়ের ভবিষ্যৎ:
অনেকে বলবেন, অটোমেশন ভারতের মতো দেশে বিলাসিতা। কিন্তু বাস্তব বলছে ভিন্ন কথা:
বছরে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা প্রোডাক্টিভিটি নষ্ট হয় হাতে করে রিটার্ন ফাইলিংয়ে।
২ কোটিরও বেশি কর্ম-দিন নষ্ট হয় প্রুফ খুঁজে বের করা ও রেকর্ড মিলিয়ে দেখায়।
ভুল রিটার্ন, জরিমানা, বিলম্বে রিফান্ড ইত্যাদি বাবদ বছরে ১,৫০০ কোটি টাকা “ফ্রিকশনাল লস” হয়।
এখানেই AI কাজ করতে পারে। একটি ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম সহজেই পে-স্লিপ ও ব্যাংক ট্রানজ্যাকশন বিশ্লেষণ করে ভুল ধরতে পারে, ছাড়ের হিসাব আগে থেকেই মিলিয়ে দিতে পারে। মানুষ নয়, প্রযুক্তিই হতে পারে করদাতার “দৃশ্যের পেছনের অ্যাকাউন্টেন্ট”।
নিয়োগকর্তাদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা:
একটি নতুন ভাবনার কথা বলা যাক: যদি নিয়োগকর্তারা শুধু TDS কাটার দায়িত্ব না নিয়ে, রিটার্নের ড্রাফট ফাইল করাও নিশ্চিত করতেন?
তাঁদের কাছেই তো সব তথ্য থাকে — বেতন, রিইমবার্সমেন্ট, বেনিফিট। তাঁদের যদি রিটার্ন প্রি-ফিলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া যায়, তাহলে লাখ লাখ কর্মী প্রতি বছর কাগজপত্র নিয়ে দৌড়ঝাঁপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। একই সঙ্গে কমপ্লায়েন্স রেট ৯০% ছাড়িয়ে যেতে পারে — ফলে বছরে ৭৫,০০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত কর সংগ্রহ সম্ভব।
কোথায় সত্যিকারের সুযোগ?
ডিজিটাল করার মানে শুধু কাগজহীন করা নয়। যদি একটা ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়াকে শুধু অনলাইনে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সেটা “পরিবর্তন” নয়, সেটা হয় “ডিজিটাল হতাশা”।
সত্যিকারের সুযোগ হচ্ছে:
করদাতাকে গ্রাহক হিসাবে দেখা, সন্দেহভাজন নয়।
ইচ্ছাকৃত ই-ফাইলিং নয়, বুদ্ধিমান প্রি-ফাইলিংয়ের পথে যাত্রা।
AI-কে “অদৃশ্য হিসাবরক্ষক” বানানো, যেটা বছরে ৬,৫০০ কোটি টাকা অপচয় বাঁচাতে পারে।
ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সকে অপশন না বানিয়ে “ডিফল্ট” বানানো।
ভারতের ই-ফাইলিং ব্যবস্থা এখন অনেকটাই সহজ হয়েছে — কিন্তু সেটি যতটা সহজ হওয়া উচিত, তা এখনো হয়নি। এটা তো সবে শুরু। অটোমেশন, AI ও ইন্টেলিজেন্স যখন পূর্ণ রূপ পাবে, তখনই করদাতারা সত্যিই বলবেন — “ট্যাক্স দেওয়া সহজ হল!”