Drafting A Will Online: বর্তমানে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রসারে জীবনযাত্রার নানা দিক সহজ হয়েছে, এমনকি উইল তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও। আগে যেখানে একজন আইনজীবীর সাহায্য ছাড়া উইল তৈরি প্রায় অসম্ভব ছিল, এখন অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এসে পড়েছে যেখানে ব্যক্তি নিজের মতো করে উইল তৈরি করতে পারেন—সহজ, দ্রুত এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচে।
কিন্তু এই সুবিধার মাঝেও অনেক মানুষ ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভুল করে বসেন, যার ফলে পরে সেই উইল নিয়ে আইনি বিতর্ক, আদালতের দ্বারস্থ হওয়া এমনকি উইল বাতিল হওয়ার মতো জটিল পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।
কেন উইল তৈরি করা জরুরি?
উইল হলো এক ধরনের আইনগত নথি যেখানে একজন ব্যক্তি মৃত্যুর পরে তার সম্পত্তি কীভাবে বিতরণ হবে, তা স্পষ্ট করে লেখেন। পরিবারে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ এড়াতে এবং প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতেই উইল তৈরি করা প্রয়োজন। বিশেষত যারা চাইছেন নির্দিষ্টভাবে কোনও ব্যক্তিকে কিছু সম্পদ দিতে, তাদের ক্ষেত্রে উইল অপরিহার্য।
অনলাইনে উইল তৈরি কার জন্য উপযুক্ত?
অনেকের ক্ষেত্রে সম্পত্তি বণ্টনের পরিকল্পনা সহজ ও সরল থাকে। যেমন—একটি ফ্ল্যাট, একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কিছু গয়না বা গাড়ি ইত্যাদি নিজের সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার ইচ্ছা। এমন অবস্থায় আইনজীবীর খরচ না করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে উইল তৈরি অনেক সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী হতে পারে।
সাধারণ ভুল যেগুলি এড়াতে হবে অনলাইন উইল তৈরির সময়:
১. উইল আপডেট না করা
প্রথমে উইল তৈরির পর অনেকেই সেটিকে ভুলে যান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে—আর্থিক অবস্থা বদলাতে পারে, বিবাহ, তালাক, সন্তান জন্ম বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে। এসব পরিবর্তন উইলে প্রতিফলিত না হলে তা ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
২. সব সম্পত্তি স্পষ্ট করে উল্লেখ না করা
অনেকেই উইলে সব সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেন না। যেমন—একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বা পৈতৃক জমি বাদ পড়ে যায়, যা পরে সমস্যার সৃষ্টি করে। উইলে আপনার সমস্ত সম্পদ—ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, জমি-জমা, শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ, গয়না এমনকি ডিজিটাল সম্পত্তির (যেমন—ক্রিপ্টোকারেন্সি, অনলাইন অ্যাকাউন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল) কথাও আলাদা করে উল্লেখ করতে হবে।
৩. ভুল ব্যক্তি এক্সিকিউটর হিসেবে মনোনয়ন
উইল কার্যকর করার দায়িত্ব যার ওপর পড়বে, তাকেই বলা হয় এক্সিকিউটর। সঠিক ব্যক্তিকে বেছে না নেওয়া একটা বড় ভুল। ভুল এক্সিকিউটর বেছে নিলে উইল কার্যকর করতে সমস্যা হতে পারে, সময় নষ্ট হতে পারে, এমনকি ভুলভাবে সম্পদ বণ্টিত হতে পারে। পরিবারকে অবশ্যই জানাতে হবে কে এক্সিকিউটর এবং কোথায় উইল সংরক্ষিত আছে।
৪. আইন অনুযায়ী উইল না বানানো
প্রত্যেক রাজ্যে উইল সংক্রান্ত আলাদা আইন ও প্রক্রিয়া রয়েছে। অনলাইন উইল তৈরি করার সময় অবশ্যই সেই রাজ্যের প্রাসঙ্গিক আইন অনুসরণ করতে হবে। যেমন—সাক্ষী নেওয়ার নিয়ম, স্বাক্ষরের পদ্ধতি, এক্সিকিউটরের যোগ্যতা ইত্যাদি। রাজ্যের আইন অনুযায়ী না হলে আপনার উইল আদালতে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
৫. উইলে স্বাক্ষর না করা
অনেকেই উইল তৈরির পর স্বাক্ষর করতে ভুলে যান, যা একটি মারাত্মক ভুল। কারণ, উইল স্বাক্ষর না থাকলে তা কোনোভাবেই আইনি বৈধতা পাবে না। শুধু স্বাক্ষর করলেই হবে না, প্রয়োজনীয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে সঠিকভাবে স্বাক্ষর করতে হবে। অনেকে আবার ইলেকট্রনিক সিগনেচার দেন, তবে সেটিও রাজ্যের আইনের মধ্যে বৈধ কিনা তা যাচাই করা জরুরি।
পরামর্শ:
১. উইল তৈরির পর প্রতি ২-৩ বছরে একবার তা পর্যালোচনা করুন।
২. এক্সিকিউটর এমন একজন হোন যিনি দায়িত্ববান, নিরপেক্ষ এবং পরিবারের ব্যাপারে সুপরিচিত।
৩. যেকোনো বড় আর্থিক পরিবর্তনের পর উইল আপডেট করুন।
৪. অনলাইন উইল তৈরির সময় প্ল্যাটফর্মটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও আইনি সহায়তার পরিসর দেখে নিন।
৫. ইচ্ছা থাকলে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে উইল রেজিস্টার করে নিতে পারেন, যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে আরও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।
অনলাইন উইল তৈরি এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয় ও সহজলভ্য একটি উপায়। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল না রাখলে এই সহজ প্রক্রিয়াও হতে পারে আইনি জটিলতার উৎস। তাই উইল তৈরি করার সময় যতটা সম্ভব সচেতনতা, সঠিক তথ্য এবং আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, একটি সঠিকভাবে তৈরি উইল আপনার মৃত্যুর পরেও প্রিয়জনদের মুখে হাসি এনে দিতে পারে।