ক্রেডিট স্কোরে কি প্রভাব ফেলে আয়ের পরিমাণ? জানুন অভিজ্ঞদের মত

একটি বেতনবৃদ্ধি আমাদের আর্থিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি কেবল ব্যয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তিগত ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও একটি বড় সুযোগ…

Does Salary Increase Impact Credit Score

একটি বেতনবৃদ্ধি আমাদের আর্থিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি কেবল ব্যয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তিগত ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও একটি বড় সুযোগ এনে দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বেতন বাড়লে কি সরাসরি একজন ব্যক্তির ক্রেডিট স্কোরও (Credit Score) বাড়ে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আমরা কথা বলেছি একাধিক আর্থিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে।

ক্রেডিট স্কোর: আয়ের নয়, অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে:
বিশেষজ্ঞরা একমত—উচ্চ বেতন মানেই উচ্চ ক্রেডিট স্কোর নয়। ভারতীয় ক্রেডিট ব্যুরোগুলি কারও আয় নয়, বরং তার ঋণ ব্যবস্থাপনার প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে স্কোর তৈরি করে।

   

CRIF হাই মার্ক-এর চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক এমডি সাচিন শেঠ জানান, “ক্রেডিট স্কোর নির্ধারণে কোনো ব্যুরো কারও বর্তমান আয় বিবেচনায় রাখে না। বরং তারা দেখে আপনি কীভাবে অতীতে ঋণ শোধ করেছেন, কতোটা সময়মতো EMI দিয়েছেন এবং কতটা ঋণ ব্যবহার করেছেন।”

এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বোঝা যায়, আপনি যদি একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎসে থাকেন এবং আপনার ব্যয় নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে আপনি খুব সহজেই একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর অর্জন করতে পারেন—even if your salary isn’t very high.

বেতনবৃদ্ধির পরোক্ষ প্রভাব:
যদিও বেতনবৃদ্ধি সরাসরি ক্রেডিট স্কোর বাড়ায় না, তবে এটি একজন ব্যক্তির আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য বাড়িয়ে তুলতে পারে। ZET-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মানিশ শারা বলেন, “বেতনবৃদ্ধি হলো একপ্রকার আর্থিক জ্বালানি। এটি আপনাকে দ্রুত ঋণ শোধ করতে, সময়মতো EMI দিতে এবং নতুন ঋণের ওপর নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করে।”

Zavo-র প্রতিষ্ঠাতা কুন্দন শাহী এক্ষেত্রে একটি দারুণ উদাহরণ টানেন: “অনেক সময় দেখা যায়, একজন সাধারণ আয়ের ব্যক্তি তার ক্রেডিট ব্যবস্থাপনায় এতটাই সচেতন থাকে যে তার স্কোর দুর্দান্ত হয়। আবার উচ্চ বেতনের একজন ব্যক্তি যদি সময়মতো ক্রেডিট কার্ড বিল বা ঋণ শোধ না করেন, তাহলে তার স্কোর নেমে যেতে পারে।”

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে নিয়মই শেষ কথা:
একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের ধরন। অনেকে মনে করেন, বেশি বেশি কার্ড ব্যবহার করলে স্কোর বাড়বে। বাস্তব হলো, আপনি কতোটা দায়িত্বশীলভাবে এই কার্ড ব্যবহারের নিয়ম মেনে চলছেন, সেটাই মুখ্য।

Advertisements

সময়মতো বিল পরিশোধ:
ক্রেডিট লিমিটের ৩০% এর নিচে ব্যবহার রাখা
একাধিক ঋণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা
এই অভ্যাসগুলো দীর্ঘমেয়াদে ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ডেটা কী বলছে? ৭০ পয়েন্ট পর্যন্ত স্কোর বৃদ্ধি সম্ভব
ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু পরিসংখ্যানও উঠে এসেছে। MinEMI-এর সিএফও সিদ্ধার্থ জৈন জানিয়েছেন, “বেতনবৃদ্ধির পর কেউ যদি সঠিকভাবে ঋণ পুনঃগঠন করে এবং ক্রেডিট ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দেয়, তাহলে ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে তার স্কোর ৩০ থেকে ৭০ পয়েন্ট পর্যন্ত বাড়তে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “উচ্চ আয়ের ফলে কেউ যদি নিজের ক্রেডিট ব্যবহারে ভারসাম্য আনেন—যেমন: অপ্রয়োজনীয় ঋণ কমানো, সিকিওরড ও আনসিকিওরড ঋণের অনুপাত ঠিক রাখা—তাহলে তা স্কোর বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।”

এই প্রতিবেদনের সারাংশে বলা যায়, আপনি কতো টাকা আয় করেন, সেটা নয়—আপনি কিভাবে নিজের ঋণ বা ক্রেডিট পরিচালনা করেন, সেটাই আপনার ক্রেডিট স্কোরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তাই বেতন বাড়ার পর যদি কেউ নিজের খরচ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সচেতন হন, তাহলে স্কোরও স্বাভাবিকভাবে উন্নতি করবে। তবে সেই উন্নতি ধাপে ধাপে হবে, অভ্যাসের ধারাবাহিকতায়।

উপযুক্ত কিছু টিপস যা বেতনবৃদ্ধির পর অবলম্বন করতে পারেন:
1. EMI অগ্রিম পরিশোধ করুন – সুদ কমে যাবে, স্কোর বাড়বে।
2. ক্রেডিট কার্ড ব্যালেন্স কমান – ৩০% এর নিচে ব্যবহার করুন।
3. নতুন ঋণের আবেদন থেকে বিরত থাকুন – অপ্রয়োজনীয় ঋণ এড়িয়ে চলুন।
4. ক্রেডিট রিপোর্ট রেগুলার চেক করুন – ভুল থাকলে সংশোধনের সুযোগ থাকে।
5. সচেতন খরচের অভ্যাস গড়ে তুলুন – ‘বেতন বাড়ল, খরচও বাড়বে’—এই প্রবণতা এড়ান।

সর্বোপরি, বেতনবৃদ্ধিকে যেন শুধুমাত্র বিলাসিতা বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে না দেখে একজন সচেতন ঋণগ্রহীতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার প্রেরণা হিসেবে নেওয়াই উত্তম।