উৎসবের আগে বাড়তি আয়, রাজ্যের কর্মীদের ডিএ ৫৫ শতাংশে

দীপাবলির আগে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য বড় আর্থিক স্বস্তির (DA Hike) ঘোষণা করল ছত্তিশগড় সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেব সাই মঙ্গলবার জানিয়েছেন, রাজ্যের…

Diwali Comes Earlier As Chhattisgarh Govt Announces 2 Per Cent DA Hike For State Employees

দীপাবলির আগে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জন্য বড় আর্থিক স্বস্তির (DA Hike) ঘোষণা করল ছত্তিশগড় সরকার। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেব সাই মঙ্গলবার জানিয়েছেন, রাজ্যের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও দরিদ্র পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা, আইটি শিল্পে বিনিয়োগ টানতে জমি বরাদ্দসহ একাধিক কল্যাণমূলক ও উন্নয়নমুখী সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের ডিএ বর্তমানে ৫৫ শতাংশ। ছত্তিশগড়ে আমরা এতদিন ৫৩ শতাংশ দিচ্ছিলাম। দীপাবলির আগে আমরা ঘোষণা করছি যে, এখন থেকে রাজ্যের কর্মচারীদেরও ৫৫ শতাংশ ডিএ প্রদান করা হবে।”

   

এই পদক্ষেপের ফলে রাজ্যের তিন লক্ষেরও বেশি সরকারি কর্মচারী ও অফিসার সরাসরি উপকৃত হবেন বলে জানা গেছে। কর্মচারীদের আয়ের সঙ্গে খরচের সামঞ্জস্য তৈরি হবে এবং পরিবারের হাতে অতিরিক্ত অর্থ আসায় উৎসবের বাজারে ব্যয়ও বাড়বে। অর্থনীতিবিদদের মতে, ভোক্তা ব্যয় বাড়লে রাজ্যের খুচরো বাজার ও ক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ডিএ বৃদ্ধির ফলে শুধু আর্থিক চাপ কমবে না, বরং কর্মচারীদের মনোবলও বৃদ্ধি পাবে। সরকারি স্তরে কেন্দ্রীয় পে-স্ট্রাকচারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করার মাধ্যমে রাজ্য সরকার কর্মীদের আস্থাও অর্জন করতে পারবে।

মন্ত্রিসভা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্ধারিত জনজাতি অঞ্চল ও মাড়া পকেটে বসবাসরত অ্যান্ট্যোদয় ও প্রায়োরিটি ক্যাটেগরির পরিবারগুলোকে মাসিক ২ কেজি করে ছোলা দেওয়া হবে পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (পিডিএস)-এর মাধ্যমে।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই ছোলা সংগ্রহ করবে সিভিল সাপ্লাইস কর্পোরেশন এবং লেনদেন হবে NeML ই-অকশন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। লেনদেন খরচ সর্বোচ্চ ০.২৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। চলতি ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে এই প্রক্রিয়া অনুমোদিত হয়েছে।

এ ছাড়াও মন্ত্রিসভার নির্দেশ অনুযায়ী জুলাই থেকে নভেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে যারা তাদের বরাদ্দ ছোলা পাননি, তাঁদের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বকেয়া পরিমাণ তুলে দিতে হবে। এর ফলে হাজার হাজার দরিদ্র পরিবার পুষ্টির দিক থেকে উপকৃত হবে বলে প্রশাসনের ধারণা।

অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে এবং শিল্পায়নকে উৎসাহিত করতে মন্ত্রিসভা নয়া রায়পুরে ৯০ একর জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই জমি দেওয়া হবে বিশেষ ছাড়ের হারে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে। সরকারের আশা, এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ও তথ্যপ্রযুক্তি-সক্ষম পরিষেবা (আইটিইএস) খাতের বড় বড় কোম্পানি ও স্টার্টআপরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।

Advertisements

অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আইটি কোম্পানির উপস্থিতি নয়া রায়পুরকে নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা উপকৃত হবেন। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তি খাতে কাজের সুযোগ পাবে এবং শহরের নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি পাবে।

সরকার মনে করছে, সুলভ মূল্যে জমি পাওয়া গেলে স্টার্টআপ ও বেসরকারি কোম্পানিগুলো আরও এগিয়ে আসবে। এর ফলে একদিকে যেমন শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে, অন্যদিকে নয়া রায়পুরে নগরায়ণ ও নতুন বসতি গড়ে তোলার প্রক্রিয়াও দ্রুততর হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, একই সঙ্গে মহার্ঘ ভাতার বৃদ্ধি, দরিদ্র পরিবারকে ছোলা সরবরাহ এবং নয়া রায়পুরে আইটি খাতে বিনিয়োগ টানার মতো পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। এতে বোঝা যায় সরকার কর্মচারী, সাধারণ জনগণ এবং বিনিয়োগকারী—তিন পক্ষকেই একসঙ্গে গুরুত্ব দিচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেব সাই মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে কর্মচারীদের যথাসময়ে প্রাপ্য সুবিধা দেওয়া, দরিদ্র পরিবারের পুষ্টি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং নয়া রায়পুরকে আধুনিক শিল্পকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।”

এই ঘোষণাগুলির মধ্যে ডিএ বৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে দ্রুত অনুভূত হবে। সরকারি কর্মচারীরা বাড়তি অর্থ পেয়ে উৎসবের বাজারে ব্যয় করবেন, ফলে ব্যবসায়িক লেনদেন বাড়বে। অন্যদিকে, অ্যান্ট্যোদয় পরিবারে ছোলা বিতরণ হবে দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক বিনিয়োগ, যা পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করবে। আর নয়া রায়পুরে আইটি খাতের জমি বরাদ্দ হবে ভবিষ্যতের জন্য কৌশলগত পদক্ষেপ, যা আগামী দশকে ছত্তীসগঢ়কে প্রযুক্তি-ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে দেবে।

রাজনৈতিক মহলও মনে করছে, উৎসবের আগে কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের আর্থিক দুশ্চিন্তা কিছুটা লাঘব করতে পারলে সরকারের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে।