আজকের দিনে ক্রেডিট কার্ডের (Credit card) আবেদন করা যত সহজ, তার সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ ততটাই জরুরি। অধিকাংশ ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে বার্ষিক ফি, যা একদিকে যেমন বাড়তি খরচ, তেমনই অনেক সময় কার্ডের দেওয়া সুবিধাগুলোকেও ছাপিয়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্রেডিট কার্ড রয়েছে, যেগুলি কোনও বার্ষিক ফি ছাড়াই অসাধারণ সুবিধা দেয়। যাঁরা মাঝেমধ্যে কার্ড ব্যবহার করেন অথবা কোনও ঝঞ্ঝাট ছাড়া অর্থব্যবস্থা সামলাতে চান, তাঁদের জন্য এই ধরণের কার্ডই হতে পারে উপযুক্ত বিকল্প।
নিচে ভারতবর্ষের এমন কিছু সেরা ক্রেডিট কার্ডের তালিকা দেওয়া হল যেগুলিতে বার্ষিক চার্জ নেই, অথচ সুবিধা একেবারে প্রিমিয়াম স্তরের।
১. IDFC FIRST ক্লাসিক ক্রেডিট কার্ড
এই কার্ডের কোনও বার্ষিক ফি বা জয়েনিং চার্জ নেই। নতুন গ্রাহকরা পাচ্ছেন এককালীন ৫০০ টাকা মূল্যের গিফট ভাউচার ও প্রথম EMI ট্রানজাকশনে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত ক্যাশব্যাকের সুবিধা।
অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে:
সিনেমার টিকিটে ২৫ শতাংশ ছাড় (সীমা ১০০ টাকা পর্যন্ত)
জ্বালানি খরচে ১ শতাংশ সারচার্জ ছাড়
৩০০-র বেশি পার্টনার মার্চেন্টের উপর এক্সক্লুসিভ ডিসকাউন্ট
এই কার্ডটি সিনেমাপ্রেমী ও সীমিত ব্যয়ের গ্রাহকদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
২. অ্যামাজন পে ICICI ক্রেডিট কার্ড
এই কার্ডটি সম্পূর্ণভাবে বার্ষিক ও জয়েনিং ফি মুক্ত। বিশেষ করে অ্যামাজন ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি আদর্শ চয়েস।
প্রধান সুবিধাগুলি হল:
অ্যামাজন প্রাইম সদস্যদের জন্য প্রতিটি কেনাকাটায় ৫ শতাংশ রিওয়ার্ড
নন-প্রাইম ব্যবহারকারীদের জন্য ৩ শতাংশ ক্যাশব্যাক
অন্যান্য সমস্ত খরচে ১ শতাংশ রিওয়ার্ড
জ্বালানি খরচে সারচার্জ ছাড়
রিওয়ার্ড পয়েন্টের মেয়াদ নেই এবং সরাসরি অ্যামাজন পে ব্যাল্যান্সে ব্যবহারযোগ্য
এই কার্ডটি অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্তদের জন্য দুর্দান্ত।
৩. ব্যাংক অফ বরোদা (BoB) প্রাইম ক্রেডিট কার্ড
যাঁদের ক্রেডিট স্কোর কম বা যাঁদের ইনকাম প্রুফ নেই, তাঁদের জন্য এটি একটি আদর্শ কার্ড। এই কার্ডটি ফিক্সড ডিপোজিটের (FD) ভিত্তিতে ইস্যু করা হয়, যার ন্যূনতম পরিমাণ ১৫,০০০ টাকা।
উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলি হল:
বার্ষিক ফি একেবারেই নেই
প্রথম ৬০ দিনের মধ্যে ৫,০০০ টাকা খরচ করলে ৫০০ বোনাস রিওয়ার্ড পয়েন্ট
প্রতি ১০০ টাকা খরচে ২টি রিওয়ার্ড পয়েন্ট
২,৫০০ টাকার উপরে যেকোনও খরচ সহজ EMI-তে রূপান্তর করার সুবিধা (৬ থেকে ৪৮ মাস পর্যন্ত)
নতুন কার্ড ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি সুরক্ষিত এবং লাভজনক বিকল্প।
৪. অ্যাক্সিস ব্যাংক নিও ক্রেডিট কার্ড
এই কার্ডটি প্রথম বছরে বার্ষিক ফি ছাড়াই পাওয়া যায়। দ্বিতীয় বছর থেকে ২৫০ টাকা বার্ষিক ফি ধার্য হয়, তবে সেই তুলনায় এর প্রাপ্ত সুবিধাগুলি বেশ আকর্ষণীয়।
কার্ডধারীরা পান:
ফুড ডেলিভারিতে ১২০ টাকা ছাড়
Paytm-এর মাধ্যমে রিচার্জ ও DTH পেমেন্টে ৫ শতাংশ ছাড়
নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট (মিনিমাম ২,৫০০ টাকা বিল, সর্বোচ্চ ছাড় ৫০০ টাকা)
এই কার্ডটি ফুডি ও ফ্রিকোয়েন্ট অনলাইন ইউজারদের জন্য দারুণ পছন্দ হতে পারে।
কার্ড পছন্দ করার সময় কী দেখবেন?
বার্ষিক ফি বাদ দেওয়া মানেই যে সব কিছুই সুবিধাজনক হবে, তা নয়। ক্রেডিট কার্ড বেছে নেওয়ার সময় নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত:
1. রিওয়ার্ড সিস্টেম: আপনি যেভাবে খরচ করেন, তার সঙ্গে মিল রেখে রিওয়ার্ড সিস্টেম থাকা জরুরি।
2. ক্যাশব্যাক ও ডিসকাউন্ট অফার: সিনেমা, রেস্তোরাঁ, ফুয়েল, অনলাইন শপিং – এই ধরনের খরচে নিয়মিত ক্যাশব্যাক থাকলে ভালো।
3. EMI অপশন: বড় খরচগুলিকে ছোট কিস্তিতে ভাগ করার সুবিধা আছে কিনা দেখুন।
4. অতিরিক্ত চার্জ ও লেট ফি: লেট পেমেন্ট চার্জ, কনভার্সন ফি ইত্যাদি যাচাই করে নিন।
বার্ষিক ফি ছাড়াই সেরা সুবিধা পাওয়ার জন্য এই কার্ডগুলিই হতে পারে সেরা পছন্দ। আপনি যদি অনলাইন কেনাকাটায় বেশি অভ্যস্ত হন, তাহলে অ্যামাজন পে ICICI কার্ড একটি দুর্দান্ত পছন্দ। অন্যদিকে সিনেমা দেখা, রেস্তোরাঁয় খাওয়া বা EMI সুবিধা চাইলে IDFC FIRST বা Axis Neo কার্ড আপনার জন্য উপযোগী।
সঠিক কার্ড বেছে নিয়ে খরচে কৌশলী হলে অর্থ সাশ্রয় যেমন হবে, তেমনই ভবিষ্যতের জন্য ভালো ক্রেডিট স্কোর গড়ে তোলাও সম্ভব। তাই ঝুঁকি না নিয়ে, পরিকল্পনামাফিক কার্ড ব্যবহার করুন – লাভবান হবেন নিশ্চিতভাবে।