ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সাফল্যের দশ বছর, মোদীর নতুন চ্যালেঞ্জের ডাক

ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের সূচনা থেকে এক দশক (Digital India 10 years) পার হওয়ার পর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি লিঙ্কডইনে এক দীর্ঘ ব্লগ পোস্টে এই ঐতিহাসিক…

Digital India Marks 10 Years of Success

ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের সূচনা থেকে এক দশক (Digital India 10 years) পার হওয়ার পর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি লিঙ্কডইনে এক দীর্ঘ ব্লগ পোস্টে এই ঐতিহাসিক উদ্যোগের সাফল্য এবং প্রভাব নিয়ে নিজের ভাবনা শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, এই মিশন শুধু প্রশাসন ও জনসেবা প্রদানকেই সহজতর করেনি, বরং ১৪০ কোটি ভারতীয়ের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।

মোদী লেখেন, “২০১৪ সালে দেশের ইন্টারনেট ব্যবহার সীমিত ছিল, ডিজিটাল সাক্ষরতা কম ছিল এবং সরকারি সেবাগুলিতে অনলাইনে প্রবেশাধিকার প্রায় অমিল ছিল। তখন অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে এত বিশাল ও বৈচিত্রময় একটি দেশ আদৌ ডিজিটাল হতে পারবে কি না।”

   

তবে প্রযুক্তি নতুন বিভাজন তৈরি করবে কিনা, সেই শঙ্কার পরিবর্তে তার সরকার দেশের মানুষের ওপর আস্থা রেখেছে। মোদীর মতে, ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের লক্ষ্যই ছিল প্রযুক্তিকে সবার জন্য সহজলভ্য করে তোলা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল পরিকাঠামো তৈরি করা এবং সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা।

গত দশ বছরে যে রূপান্তর ঘটেছে তা উল্লেখযোগ্য। ২০১৪ সালে যেখানে ইন্টারনেট কানেকশন ছিল ২৫ কোটি, আজ তা বেড়ে ৯৭ কোটিরও বেশি। প্রায় ৪২ লাখ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেবল দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, যা পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত দূরত্বের ১১ গুণ। মাত্র দুই বছরের মধ্যে ৪.৮১ লাখ ৫জি বেস স্টেশন স্থাপন করে ভারত বিশ্বের দ্রুততম ৫জি রোলআউটের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। এমনকি গালওয়ান, সিয়াচেন এবং লাদাখের মতো দুর্গম এলাকাতেও উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে।

ইউপিআই-এর উত্থান
মোদী বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন ইন্ডিয়া স্ট্যাকের কথা, যা দেশের ডিজিটাল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। এর ওপর নির্ভর করে ইউপিআই-এর মতো প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে, যা বছরে ১০০ বিলিয়নের বেশি লেনদেন সামলাচ্ছে — যা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক তাৎক্ষণিক ডিজিটাল পেমেন্টের সমান।
ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (ডিবিটি) ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার ৪৪ লাখ কোটি টাকা সরাসরি মানুষের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে, যার ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা কমে গেছে এবং ৩.৪৮ লাখ কোটি টাকার লিকেজ বন্ধ করা গেছে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ক্ষমতায়ন
ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি শুধু বড় ব্যবসা নয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলিকেও শক্তিশালী করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ওপেন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কমার্স (ONDC) ইতিমধ্যেই ২০০ মিলিয়নের বেশি লেনদেনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে, যার শেষ ১০০ মিলিয়ন লেনদেন মাত্র ছয় মাসে হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বেনারস বা নাগাল্যান্ডের হস্তশিল্পীরা কোনো মধ্যবর্তী এজেন্ট ছাড়াই সরাসরি দেশের বাজারে পৌঁছাতে পারছেন।

একইভাবে, গভার্নমেন্ট ই- মার্কেটপ্লেস (GeM) মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার গ্রস মার্চেন্ডাইজ ভ্যালু (GMV) অতিক্রম করেছে। বর্তমানে প্ল্যাটফর্মে ২২ লাখ বিক্রেতা যুক্ত রয়েছেন, যার মধ্যে ১.৮ লাখের বেশি নারী-নেতৃত্বাধীন MSME রয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই ৪৬ হাজার কোটি টাকার অর্ডার সম্পন্ন করেছেন।

মোদী লিখেছেন, “GeM এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষও সরকারি প্রতিষ্ঠানে পণ্য ও সেবা বিক্রি করতে পারছেন। এটি একদিকে যেমন নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করছে, অন্যদিকে সরকারের ক্রয় ব্যবস্থাতেও স্বচ্ছতা ও সাশ্রয় এনেছে।”

Advertisements

আধার, ফাস্টট্যাগ, ডিজিলকার ও অন্যান্য উদ্যোগ
ভারতের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (DPI)—যার মধ্যে আধার, কোউইন, ডিজিলকার, ফাস্টট্যাগ, পিএম-ওয়ানী এবং ওয়ান নেশন ওয়ান সাবস্ক্রিপশন অন্তর্ভুক্ত—এখন বিশ্বের কাছে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্কেলযোগ্য মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কোউইনের মাধ্যমে ২২ কোটি QR-ভেরিফায়েবল সার্টিফিকেট দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ডিজিলকার বর্তমানে ৫৪ কোটি ব্যবহারকারী এবং ৭৭৫ কোটির বেশি নথি সঞ্চয় করছে।

জি-২০ প্রেসিডেন্সির সময় ভারত গ্লোবাল DPI রিপোজিটরি এবং ২৫ মিলিয়ন ডলারের সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট ফান্ড চালু করেছে, যাতে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও একই ধরনের ডিজিটাল কাঠামো গড়ে তুলতে পারে।

স্টার্টআপ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমও উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে ১.৮ লাখেরও বেশি স্টার্টআপ রয়েছে, যা বিশ্বের শীর্ষ তিনের মধ্যে রয়েছে।

মোদীর ভাষায়, এটি এক ধরনের “টেক রেনেসাঁ”। $1.2 বিলিয়নের ইন্ডিয়া এআই মিশনের অধীনে ৩৪,০০০ GPU-তে প্রবেশাধিকার সুলভ মূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে ভারত শুধু সস্তা ইন্টারনেট অর্থনীতিই নয়, কম খরচে কম্পিউট পাওয়ারের ক্ষেত্রেও গ্লোবাল গন্তব্য হয়ে উঠছে।
সরকার “হিউম্যানিটি-ফার্স্ট” দৃষ্টিভঙ্গিতে এআই-এর ব্যবহারকে এগিয়ে নিচ্ছে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সেন্টারস অফ এক্সেলেন্স স্থাপন করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য
মোদী আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী দশকে ভারত একটি ডিজিটালি ক্ষমতায়িত দেশ থেকে বিশ্বে ডিজিটাল উদ্ভাবনের নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

তিনি লেখেন, “ডিজিটাল ইন্ডিয়া আর কোনো সরকারি প্রকল্প নয়, এটি এক জনআন্দোলনে পরিণত হয়েছে।”
মোদী innovators, entrepreneurs এবং তরুণ সমাজকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা এমন প্রযুক্তি তৈরি করি যা ক্ষমতায়ন করে। আমরা এমন সমাধান খুঁজি যা সত্যিই মানুষের প্রয়োজন মেটায়। প্রযুক্তি দিয়ে আমরা একতা, অন্তর্ভুক্তি এবং উন্নয়ন ঘটাই।”