দীপাবলির উৎসব মানেই আলোর ঝলকানি, আনন্দ আর শুভ সূচনা। কিন্তু এর শুরু হয় ধন ত্রয়োদশী বা ধনতেরাস দিয়ে। এই দিনটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় রীতি নয়, বরং মানুষের বিশ্বাসে সুখ, সমৃদ্ধি ও ধনসম্পদের প্রতীক। প্রাচীন আয়ুর্বেদের প্রতিষ্ঠাতা ভগবান ধন্বন্তরীর জন্মদিন হিসেবেও এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই দেশজুড়ে ভক্তরা এদিনে দেবী লক্ষ্মী ও কুবেরের আরাধনা করেন, সোনা-রূপা বা নতুন জিনিসপত্র কেনেন এবং ঘরে সমৃদ্ধির আমন্ত্রণ জানান।
সোনা-রূপার ঐতিহ্য
ধনতেরাস মানেই যেন সোনা ও রূপা কেনা। যুগ যুগ ধরে এই দিনে ধাতব জিনিসপত্র কেনাকে অত্যন্ত শুভ মনে করা হয়। কারণ সোনা-রূপা শুধু সম্পদের প্রতীক নয়, ভক্তদের বিশ্বাস অনুযায়ী এটি দেবী লক্ষ্মীর কৃপা আনতে সাহায্য করে। বাজারে তাই এই সময়ে সোনার দোকানে থাকে ভিড় আর রূপার সামগ্রী কেনার ধুম।
তবে বাস্তবতা হলো, বর্তমান সময়ে সোনা ও রূপার দাম আকাশছোঁয়া। ফলে অনেক সাধারণ পরিবারের পক্ষে এই দিনেও তা কেনা সম্ভব হয় না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সমৃদ্ধি আকর্ষণের জন্য শুধুমাত্র সোনা-রূপাই নয়, আরও কিছু বিকল্প জিনিস কেনাও সমানভাবে শুভ।
বিকল্প জিনিসে শুভ ফল
যারা বাজেটের কারণে সোনা বা রূপা কিনতে পারছেন না, তারা অন্য কিছু জিনিস বাড়িতে আনলেও দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পেতে পারেন। যেমন—
- তামা বা পিতলের বাসনপত্র: প্রাচীনকাল থেকে এই ধাতব বাসনপত্র ধনসম্পদের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। এগুলো কেনা শুভ এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে কার্যকর।
- লবণ: অনেকে বিশ্বাস করেন, ধনতেরাসে লবণ কিনে ঘরে আনলে অশুভ শক্তি দূরে সরে যায় এবং পরিবারের কল্যাণ ঘটে।
- ঝাড়ু: নতুন ঝাড়ু কেনাকে এই দিনে বিশেষভাবে শুভ মনে করা হয়। এটি নেতিবাচক শক্তি ও অশুচি দূর করার প্রতীক।
- গোমতি চক্র: ১১টি গোমতি চক্র লাল কাপড়ে মুড়ে ঘরে রাখলে তা সম্পদ বৃদ্ধি ও পরিবারের অগ্রগতি আনে বলে বিশ্বাস।
- হলুদ শঙ্খমুখী শেলস: দেবী লক্ষ্মীর প্রিয় এই শেলস ঘরে রাখলে ধনসম্পদের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
শুভ কেনাকাটার প্রথা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধনতেরাসের দিনে ছোট হোক বা বড়, নতুন কিছু কেনাই শুভ। শুধু দামি ধাতু বা অলঙ্কার নয়, এমনকি গৃহস্থালির সাধারণ সামগ্রীও এদিন কেনা ভাগ্যবান করে তোলে। গুরুত্বপূর্ণ হলো—নতুন জিনিস কেনার আনন্দ এবং দেবীর উদ্দেশ্যে সেই সামগ্রীকে উৎসর্গ করা।
সমাজ ও মানসিকতার প্রভাব
এমনকি মনোবিজ্ঞানীরাও মনে করেন, উৎসবের শুরুতে নতুন কিছু কেনা মানুষের মনে ইতিবাচকতা জাগায়। যখন পরিবার একসঙ্গে বসে নতুন কিছু ঘরে আনে, তা একধরনের মানসিক শক্তি দেয়, যা পরোক্ষভাবে আর্থিক সাফল্যের পথ তৈরি করে।
২০২৫ সালের ধনতেরাসেও সোনা-রূপার দাম হয়তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ঘরে সুখ ও সমৃদ্ধি আসবে না। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, বিকল্প জিনিস যেমন তামা-পিতলের পাত্র, ঝাড়ু বা গোমতি চক্র কিনেও সমানভাবে দেবী লক্ষ্মীর কৃপা পাওয়া সম্ভব। তাই এবারের ধনতেরাসে মনে রাখুন—শুভতার মাপকাঠি শুধু দামের উপর নির্ভর করে না, বরং আপনার বিশ্বাস, ভক্তি এবং ইতিবাচক মনোভাবই ঘরে টেনে আনবে সত্যিকারের আলো ও সমৃদ্ধি।


