দীপাবলির শুরুতে ধনতেরাস কেবল উৎসবের দিন নয়, এ বছর এটি ভারতের অর্থনীতির জন্যও এক বিশেষ মুহূর্ত হয়ে উঠতে চলেছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর ২০২৫) দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব যৌথভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন। সূত্র বলছে, এই বৈঠকের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে ‘জিএসটি ২.০ সংস্কার’ এবং তার প্রভাব।
জিএসটি ২.০: অর্থনীতির নতুন দিগন্ত
সরকার ২০২৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করেছে নতুন পণ্য ও পরিষেবা কর কাঠামো, যার নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি ২.০। একে বলা হচ্ছে ভারতের ‘নেক্সট-জেনারেশন জিএসটি’। এর লক্ষ্য কর প্রক্রিয়াকে সরলীকরণ, ব্যবসায়ীদের জটিলতা কমানো এবং সাধারণ ভোক্তাদের হাতে বেশি অর্থ পৌঁছে দেওয়া।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সম্প্রতি জানিয়েছেন, এই সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনীতিতে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা প্রবাহিত হবে। এর ফলে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে এবং বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে।
উৎসবের মরশুমে বিক্রির রেকর্ড বৃদ্ধি
প্রাথমিক বাজার সূচকগুলো দেখাচ্ছে, জিএসটি ২.০ চালুর পর থেকেই খুচরো বাজারে নজিরবিহীন উত্থান ঘটেছে।
লোকালসার্কেলসের সমীক্ষা বলছে, নবরাত্রি উৎসব (২২ সেপ্টেম্বর–১ অক্টোবর) চলাকালীন যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রি গত বছরের তুলনায় ৩৫% বেশি হয়েছে।
ইলেকট্রনিক্স, এফএমসিজি এবং অটোমোবাইল সেক্টরে উৎসবকালীন কেনাকাটায় ব্যাপক উত্থান লক্ষ করা গেছে।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলিতেও রেকর্ড অর্ডার হয়েছে, বিশেষ করে স্মার্টফোন ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে।
ব্যাংকগুলিতে ঋণের চাহিদা
করের হার হ্রাস এবং বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ঋণগ্রহণেও ইতিবাচক সাড়া মিলছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যাংক জানিয়েছে, খুচরো ঋণ—বিশেষ করে গাড়ি ও কনজিউমার ডিউরেবল সেক্টরে—উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবণতা উৎসব শেষে আরও জোরালো হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরকারের নজরদারি
করছাড়ের সুবিধা যাতে সঠিকভাবে ভোক্তার কাছে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে সরকার সক্রিয় হয়েছে। জানা গেছে, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই ৫০টিরও বেশি পণ্যের দাম পর্যবেক্ষণ করছেন। লক্ষ্য হলো—কোম্পানিগুলি কর হ্রাসের সুবিধা নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করছে নাকি প্রকৃত ক্রেতাদের দিচ্ছে, তা যাচাই করা।
অমিত শাহের মন্তব্য: “স্বাধীন ভারতের অন্যতম বড় সংস্কার”
১৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জিএসটি ২.০-কে স্বাধীন ভারতের অন্যতম বড় অর্থনৈতিক সংস্কার বলে উল্লেখ করেন। তাঁর ভাষায়—
“কর কখনও এত কম ছিল না। এই পদক্ষেপ জনগণের আস্থা বাড়াবে, করের আওতা বাড়াবে এবং অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে।”
ধনতেরাসে সরকারের বার্তা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধনতেরাসে নির্ধারিত এই সাংবাদিক বৈঠক প্রতীকীভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ধনতেরাসকে হিন্দু সমাজে ধন ও সমৃদ্ধির দিন হিসেবে ধরা হয়। সরকারের এই বৈঠক মূলত জিএসটি ২.০ সংস্কারের প্রথম দফার সাফল্য, বাজারে এর প্রভাব এবং ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরার জন্য।
এই সম্মেলন থেকে পাওয়া তথ্যই নির্ধারণ করবে উৎসবের মৌসুমে ভারতের খুচরো বাজার কতটা গতিশীল হয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য অর্থনীতি কোন পথে এগোবে।